কিহাক সাংয়ের সম্মাননায় কেইপিজেডে আনন্দের ঢেউ
Published: 10th, April 2025 GMT
চট্টগ্রামে কোরিয়ান ইপিজেডের (কেইপিজেড) স্বপ্নদ্রষ্টা কিহাক সাংয়ের সম্মান সূচক নাগরিকত্ব লাভে দারুণ উদ্বেলিত এই ইপিজেডের ৩০ হাজার শ্রমিক।
বাংলাদেশে এককভাবে সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগকারী কিহাক সাংকে অনারারি সিটিজেনশিপ ঘোষণার পর চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত কেইপিজেডের ৩০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। নদীর ওপারে বইছে আনন্দ ঢেউ।
একইদিনে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষের কাছে ২ হাজার ৪৮৩ একর জমির দলিল হস্তান্তর করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। প্রধান উপদেষ্টা ড.
এই দলিল হস্তান্তরের মাধ্যমে প্রায় দুই যুগ ধরে চলতে থাকা কেইপিজেড অধিগ্রহণকৃত জমি সংক্রান্ত জটিলতা মাত্র ২ মাসের মধ্যে নিরসন হয়েছে। এর ফলে কোরিয়ান ইপিজেডে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং চট্টগ্রাম জেলায় দুই লক্ষাধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এদিকে কেইপিজেডের প্রতিষ্ঠাতা কিহাক সাং-এর সম্মান সূচক নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টি বিদেশি বিনিয়োগে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কেইপিজেডের উপ-ব্যবস্থাপক মুশফিকুর রহমান বলেন, দেশের নাগরিক না হয়েও একজন বিদেশি বিনিয়োগকারীকে সম্মানিত নাগরিক মর্যাদা দেওয়ায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নেওয়া সকল বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মাঝে উৎসাহ যোগাবে। সিও স্যারের এই অর্জনে কেইপিজেডের সকল শ্রমিক-কর্মচারী খুবই আনন্দিত।
কেইপিজেডের মোহাম্মদ শাহেদ নামের এক কর্মচারী বলেন, যিনি একজন বিদেশি হয়েও সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করে বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ ও বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে, তিনি অবশ্যই সম্মানিত নাগরিক মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য। এতে আমরা খুবই আনন্দিত।
কেইপিজেডে কর্মরত জয়নাল আবেদীন নামের এক কর্মচারী বলেন, কিহাক সাং বিনিয়োগের কারণে কেইপিজেডে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। পাশাপাশি সকল শ্রমিক ও তাদের পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য হাসপাতালসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করছে। কিহাক সাংকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একজন যোগ্য ব্যক্তিকে তার প্রাপ্ত সমান দিতে সক্ষম হয়েছে।
প্রসঙ্গত বাংলাদেশের শিল্প খাতের বিকাশ ও বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক আয়ে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেডে) পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। চলমান বিনিয়োগ সম্মেলনে তাকে এই সম্মাননা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫