কাট্টলি টেক্সটাইলের আইপিওর ২৫ কোটি টাকা তছরুপ, তদন্তের জন্য দুদকে হস্তান্তর
Published: 10th, April 2025 GMT
প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ২৫ কোটি টাকা তছরুপ করেছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কাট্টলি টেক্সটাইল। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তদন্তে এই তছরুপের ঘটনা বেরিয়ে এসেছে। এ কারণে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে আইপিওর অর্থ তছরুপের বিষয়টি তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিএসইসির গতকাল বুধবারের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা শেষে বিএসইসির এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিএসইসি জানিয়েছে, কাট্টলি টেক্সটাইল আইপিওর ২৫ কোটি ৪ লাখ টাকা তছরুপের বিষয়টি দুদকে প্রেরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে কমিশন সভায়।
বস্ত্র খাতের কোম্পানি কাট্টলি টেক্সটাইল ২০১৮ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ওই বছর আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৩৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা এই অর্থ কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণ, ব্যাংকঋণ পরিশোধ, কর্মীদের আবাসনসুবিধাসহ নানা খাতে ব্যয় করার কথা ছিল। কিন্তু আইপিওর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের কয়েক বছর পরও সেই অর্থ যথাযথ খাতে ব্যবহার করেনি বলে বিএসইসির এক তদন্তে উঠে আসে। এমনকি আইপিওর অর্থের বড় অংশই তছরুপ হয় বলে তদন্তে জানা যায়। তারই ভিত্তিতে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএসইসি বিষয়টি দুদকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শুধু অর্থ তছরুপের ঘটনাই নয়, কাট্টলি টেক্সটাইল তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) তালিকাভুক্তি মাশুল বা ফিও পরিশোধ করেনি। এ কারণে এক মাসের মধ্যে এই বকেয়া মাশুল ডিএসইকে পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। যদি এক মাসের মধ্যে কোম্পানিটি ডিএসইকে তালিকাভুক্তি মাশুল পরিশোধ না করে, তাহলে কোম্পানিটির প্রত্যেক পরিচালককে (স্বতন্ত্র পরিচালক বাদে) ২ লাখ টাকা করে জরিমানা গুনতে হবে।
কাট্টলি টেক্সটাইল আইপিওতে ৩ কোটি ৪০ লাখ শেয়ার বিক্রি করেছিল সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে বিক্রি করা হয়। তালিকাভুক্তির পর কয়েক বছর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিয়েছিল। এরপর ২০২২ ও ২০২৩ সালে কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। এ কারণে কোম্পানিটির শ্রেণি মানেরও অবনমন ঘটে। বর্তমানে এটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ‘বি’ শ্রেণির কোম্পানি।
আইপিওতে আসার আগে ভালো মুনাফা দেখানো কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর কয়েক বছর না যেতেই লোকসানি কোম্পানিতে পরিণত হয়। সর্বশেষ গত বছরের জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছরে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ৮৪ পয়সা লোকসান করেছে। ওই বছর শেষে কোম্পানিটির লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১০ কোটি টাকা। লোকসান সত্ত্বেও গত বছর শেষে শ্রেণিমান ধরে রাখতে গত অর্থবছরের জন্য সাধারণ শেয়ারধারীদের নামমাত্র নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
এদিকে কাট্টলি টেক্সটাইলের আইপিও তছরুপের ঘটনা দুদকে হস্তান্তরের খবরেও আজ বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে। এদিন ডিএসইতে লেনদেন শুরুর প্রথম ঘণ্টায় কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৪০ পয়সা বা সোয়া ৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ৭০ পয়সায়। ১১৬ কোটি টাকার মূলধনের এই কোম্পানির শেয়ারের ৭০ শতাংশই রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। ফলে তালিকাভুক্তির পর কোম্পানিটি খারাপ হয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
কাট্টলি টেক্সটাইলকে শেয়ারবাজারে আনার অনুমতি দিয়েছিল বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন। খায়রুল কমিশনের বিরুদ্ধে আইপিও অনিয়মেরই সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল। তার সময়ে শেয়ারবাজারে আসা বেশির ভাগ কোম্পানি কয়েক বছর না যেতেই দুর্বল ও বন্ধ কোম্পানিতে পরিণত হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র ব এসইস র ত র পর পর শ ধ তদন ত আইপ ও
এছাড়াও পড়ুন:
পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেবে বিএসইসি
শেয়ার সূচকের নিয়মিত পতনের মূল কারণ খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সেই সঙ্গে যেসব শেয়ারের অস্বাভাবিক বিক্রির চাপ দেখা যাচ্ছে, বাজার তদারকির মাধ্যমে সেসব শেয়ার চিহ্নিত করা হবে বলেও জানিয়েছে তারা।
দেশের পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক নিম্নমুখী প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। গতকাল মঙ্গলবার এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে তাৎক্ষণিক কিছু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এ ছাড়া সভায় বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, বিএসইসির কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর, ফারজানা লালারুখ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব দেলোয়ার হোসেন, পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের প্রতিনিধি ও বিএসইসির নির্বাহী পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।
সভার সিদ্ধান্ত হয়, বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় টক শো ও বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি বিআইসিএম ও বিএএসএম পুঁজিবাজার-বিষয়ক শিক্ষণীয় ভিডিও তৈরি করবে। ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে পুঁজিবাজার সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা প্রচার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা হবে।
প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানির শেয়ার অফলোড করা, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করা এবং টেক্সটাইল ও ওষুধ খাতের দেশী লাভজনক কোম্পানিগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা হবে।
যেসব কোম্পানি এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি, তাদের তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার জন্য আকর্ষণীয় করছাড় দেওয়া হবে। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাত থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সুযোগ সীমিত করা এবং পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্রধান উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে দেশের আর্থিক খাতের অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো হবে। সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা হবে। এ ছাড়া আসন্ন জাতীয় বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য করছাড়ের সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হবে। এর মধ্যে লভ্যাংশ আয়ের ওপর করছাড় এবং পুঁজিবাজারের বিনিয়োগের ওপর বিশেষ করছাড়ের সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।