সরাইলে সংঘর্ষে আহত ব্যক্তির মৃত্যু, রাতেই গ্রাম ছেড়েছেন অনেকে
Published: 10th, April 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে দুই দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত জসিম উদ্দিন (৪৫) মারা গেছেন। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত একটার দিকে রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
জসিম উদ্দিন উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের তেরকান্দা গ্রামের মৃত মুসলিম উদ্দিনের ছেলে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে তাঁর লাশ সরাইল থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
আরও পড়ুনসরাইলে আহত ব্যক্তির মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে প্রতিপক্ষের বসতবাড়ি ও দোকানে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ১৯ ঘণ্টা আগেজসিমের মৃত্যুর খবরে গতকাল রাতেই তেরকান্দা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান অনেকেই। গরু-ছাগল, ধান-চাল ও বসতঘরের আসবাব নিয়ে আশপাশের গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। গ্রামটি এখন প্রায় পুরুষশূন্য বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বাসিন্দারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, জসিম উদ্দিনের শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পুলিশের জিম্মায় লাশটি ময়নাতদন্ত চলছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে গ্রামটিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গত সোমবার সন্ধ্যায় ও মঙ্গলবার ভোরে তেরকান্দা গ্রামে দুই দল মানুষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার ভোরে জসিম উদ্দিন গুরুতর আহত হন। বুধবার বেলা ৩টার দিকে জসিম উদ্দিন মারা গেছেন বলে গ্রামে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ সংবাদে প্রতিপক্ষের বসতবাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে ইউএনও মোশাররফ হোসাইনের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, তেরকান্দা গ্রামের আমীর আলীর বংশ এবং চান্দের বংশের লোকজনের মধ্যে কয়েক মাস ধরে বিরোধ চলে আসছে। এর মধ্যে এক সপ্তাহ আগে চান্দের বংশের এক তরুণের সিএনজিচালিত অটোরিকশা চুরি হয়। এ জন্য চান্দের বংশের লোকজন আমীর আলী বংশের লোকজনকে দায়ী করেন। এর জেরে দুই দিন ধরে সংঘর্ষে জড়ান উভয় পক্ষের লোকজন। এ সংঘর্ষে ইউএনও, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল হাসান, তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ আহত হন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আ.লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করে ইউএনওকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার হরিতলা মোড়ে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ইউএনওর অপসারণের দাবি জানানো হয়।
এলাকার সচেতন নাগরিক, ব্যবসায়ী মহল, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী, কর্মচারী-শিক্ষকমণ্ডলীর ব্যানারে এ মানববন্ধন করা হয়। এতে এলাকাবাসী ছাড়া তাহেরপুর কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন থেকে কলেজের সম্পত্তি অন্যত্র ইজারা দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদ জানানো হয়।
তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়। পৌরসভার নির্মিত দোকানঘর থেকে তাহেরপুর কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ায় এ কর্মসূচি পালন করা হয় বলে অভিযোগ। আওয়ামী লীগের নেতার দাবি, তিনি দলীয় পরিচয়ে নয়, কলেজশিক্ষক হিসেবে মানববন্ধনে যোগ দিয়েছেন। তবে ব্যানারে ফ্যাসিবাদ শব্দটি প্রথমে দেখেননি। পরে দেখেছেন।
মানববন্ধনে তাহেরপুর কলেজের শিক্ষক রইচ আহমেদ, সুরাইয়া আক্তার, তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা বাগমারার ইউএনওকে ফ্যাসিবাদের দোসর ও চব্বিশের চেতনাবিরোধী অভিযোগ তুলে তাঁদের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ার নিন্দা জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাহেরপুর কলেজ–সংলগ্ন স্থানে পৌর কর্তৃপক্ষ দোকানঘর নির্মাণ করেছে। পৌরসভার পক্ষে নিয়মিত ভাড়া আদায় করা হয় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে। ৫ আগস্টের পর থেকে কলেজের পক্ষ থেকে ৪১টি দোকানঘর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করা হয়।
পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে বাগমারার ইউএনও দোকানঘর থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেন। দোকানঘরগুলো পৌরসভার হওয়ায় তারাই সেখান থেকে ভাড়া আদায় করবে বলে জানানো হয়। সেখান থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ আর ভাডা আদায় করবে না জানিয়ে ২২ এপ্রিল পৌরসভার প্রশাসককে লিখিতভাবে জানান কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম। এর পর থেকে কর্তৃপক্ষ ইউএনওর ওপর ক্ষুব্ধ হয়।
তাহেরপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, কলেজের জায়গায় তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়ব ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ দোকানঘর নির্মাণ করে মোটা অঙ্কের টাকায় ভাড়া দেন। ৫ আগস্টের পর তাঁরা (কলেজ কর্তৃপক্ষ) সেগুলো নিয়ন্ত্রণে নেন। তবে ২২ এপ্রিল ইউএনও সাদা কাগজে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছ থেকে ভাড়া আদায় বিষয়ে একটি লিখিত নিয়েছেন। এর প্রতিবাদে মূলত তাঁদের এই কর্মসূচি।
পৌরসভার দোকানঘর থেকে কেন পৌরসভা ভাড়া আদায় করবে না জানতে চাইলে সুরাইয়া আক্তার বলেন, ‘জায়গাগুলো কলেজের ছিল।’ ব্যানারে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখা হলেও কেন আওয়ামী লীগের নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কলেজের স্বার্থে আমরা এক।’
জানতে চাইলে ইউএনও মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, দোকানগুলো তাহেরপুর পৌরসভার। সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করে পৌরসভার কোষাগারে জমা করা হয়। তিনি প্রশাসক হিসেবে ভাড়া আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছেন। কলেজের অধ্যক্ষ নিজেই জানিয়েছেন, এখন থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভাড়া আদায় করবে না।