ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে দুই দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত জসিম উদ্দিন (৪৫) মারা গেছেন। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত একটার দিকে রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।

জসিম উদ্দিন উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের তেরকান্দা গ্রামের মৃত মুসলিম উদ্দিনের ছেলে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে তাঁর লাশ সরাইল থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

আরও পড়ুনসরাইলে আহত ব্যক্তির মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে প্রতিপক্ষের বসতবাড়ি ও দোকানে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ১৯ ঘণ্টা আগে

জসিমের মৃত্যুর খবরে গতকাল রাতেই তেরকান্দা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান অনেকেই। গরু-ছাগল, ধান-চাল ও বসতঘরের আসবাব নিয়ে আশপাশের গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। গ্রামটি এখন প্রায় পুরুষশূন্য বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বাসিন্দারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.

মোশাররফ হোসাইন বলেন, গ্রামটিতে নতুন করে ভাঙচুর, লুটপাটসহ সব ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করে লাশ দাফন করা হবে।

সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, জসিম উদ্দিনের শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পুলিশের জিম্মায় লাশটি ময়নাতদন্ত চলছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে গ্রামটিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

গত সোমবার সন্ধ্যায় ও মঙ্গলবার ভোরে তেরকান্দা গ্রামে দুই দল মানুষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার ভোরে জসিম উদ্দিন গুরুতর আহত হন। বুধবার বেলা ৩টার দিকে জসিম উদ্দিন মারা গেছেন বলে গ্রামে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ সংবাদে প্রতিপক্ষের বসতবাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে ইউএনও মোশাররফ হোসাইনের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, তেরকান্দা গ্রামের আমীর আলীর বংশ এবং চান্দের বংশের লোকজনের মধ্যে কয়েক মাস ধরে বিরোধ চলে আসছে। এর মধ্যে এক সপ্তাহ আগে চান্দের বংশের এক তরুণের সিএনজিচালিত অটোরিকশা চুরি হয়। এ জন্য চান্দের বংশের লোকজন আমীর আলী বংশের লোকজনকে দায়ী করেন। এর জেরে দুই দিন ধরে সংঘর্ষে জড়ান উভয় পক্ষের লোকজন। এ সংঘর্ষে ইউএনও, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল হাসান, তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ আহত হন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি

ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।

শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।

ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।

ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।

কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলা

শিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’

শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি