নাচতে নাচতে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর দিলেন গওহর
Published: 10th, April 2025 GMT
ফের মা হতে যাচ্ছেন বলিউড অভিনেত্রী গওহর খান। জায়েদ দরবার-গওহর খান দম্পতির এটি দ্বিতীয় সন্তান। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও পোস্ট করে এ খবর জানিয়েছেন গওহর খান।
ভিডিওতে দেখা যায়, গওহর-জায়েদ দম্পতি জেসি জের ট্রেন্ডিং গান ‘প্রাইস’-এর সঙ্গে নাচছেন। নাচতে নাচতে নতুন অতিথি আগমনের ঘোষণা দেন তারা। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখেন, “বিসমিল্লাহ! আপনাদের প্রার্থনা এবং ভালোবাসা প্রয়োজন। ভালোবাসা ছড়িয়ে দিন, বিশ্বকে নাচতে বাধ্য করুন।”
করোনা সংকটের সময়ে জায়েদ দরবারের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান গওহর খান। মুখে মাস্ক পরে শপে জিনিসপত্র কিনতে গিয়েছিলেন গওহর খান, আর সেখানে তাকে দেখে প্রেমে পড়েন জায়েদ। বয়সে জায়েদের চেয়ে ৯ বছরের বড় গওহর। কিন্তু বয়সের এই ব্যবধান বাধা হয়নি এ জুটির প্রেম কাহিনিতে।
আরো পড়ুন:
মেয়ের বলিউড অভিষেক নিয়ে মুখ খুললেন কাজল
কৃষ ফোর: হৃতিকের সঙ্গী প্রীতি, প্রিয়াঙ্কা, নোরা?
করোনার কারণে লকডাউন দেওয়া হয়েছিল ভারতে। এ বিধিনিষেধ শিথিল হতেই ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বিয়ে করেন তারা। ২০২৩ সালের ১১ মে মুম্বাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন গওহর।
ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় দুই দশক পার করছেন গওহর খান। টেলিভিশন থেকে শুরু করে বড় পর্দা, ওটিটি— সব মাধ্যমেই তার অবাধ বিচরণ।
এক সময় এ অভিনেত্রীর লাভ লাইফ নিয়েও কম চর্চা হয়নি। পরিচালক সাজিদ খানের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন গওহর, পরবর্তীতে অভিনেতা কুশল ট্যান্ডনের সঙ্গে গওহরের প্রেমের গল্প কারো অজানা নয়। তবে সেই প্রেম পরিণয় পায়নি। সর্বশেষ সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার জায়েদ দরবারকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেন গওহর খান।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় ত্রাণ নেওয়ার কয়েক মিনিট পর হত্যা করা হয় ক্ষুধার্ত শিশুটিকে: সাবেক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা
গাজার শিশু আমির। সামান্য একটু ত্রাণ পাওয়ার আশায় খালি লম্বা পথ হেঁটে এসেছিল সে। ত্রাণ পাওয়ার কয়েক মিনিট পরই ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে নিহত হয় শিশুটি। মার্কিন সেনাবাহিনীর বিশেষ শাখার সাবেক এক কর্মকর্তার বর্ণনায় গাজার এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। এই কর্মকর্তা গত মাসে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত বিতর্কিত ত্রাণ সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) থেকে পদত্যাগ করেন।
অ্যান্টনি আগুইলার গত সোমবার ‘আনঅ্যাক্সেপ্টেবল’ পডকাস্টে বলেন, গত ২৮ মে দক্ষিণ গাজায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি নিজ চোখে শিশু আমিরসহ অসংখ্য মানুষকে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হতে দেখেছেন।
আগুইলার বলেন, ‘ছোট্ট আমির খালি পায়ে একটি ছেঁড়া জামা পরে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। তাঁর হাড্ডিসার শরীরে থাকা ছেঁড়া-ফাটা কাপড় যেন ঝুলে ঝুলে পড়ে যাচ্ছিল। সে ১২ কিলোমিটার পথ হেঁটে সেখানে (ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র) এসেছিল। সেখানে পৌঁছানোর পর সামান্য যে খাবার ও উচ্ছিষ্ট পেয়েছিল, সে জন্য সে আমাদের ধন্যবাদ জানায়।’
আইগুলার বলতে থাকেন, ‘সে (আমির) খাবারের প্যাকেটগুলো মাটিতে নামিয়ে রাখল। কারণ, তখন আমি হাঁটু গেঁড়ে বসে ছিলাম। তার হাত দুটো বাড়িয়ে আমার গালের দুই পাশে রাখে। সেই হাতগুলো ছিল খুব দুর্বল, হাড্ডিসার, ময়লা। আর সেগুলো দিয়ে সে আমার মুখ ছুঁয়ে দেখে এবং আমাকে চুমু দেয়। ও আমাকে চুমু দিয়ে ইংরেজিতে বলে “থ্যাংক ইউ”। এরপর সে জিনিসগুলো নিয়ে তার দলের কাছে ফিরে যায়।’
এর পরপরই ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে উপস্থিত থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালাতে থাকে। আইগুলার বলেন, তখন আমিরের দিকে মরিচের গুঁড়ার স্প্রে, কাঁদানে গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ছোড়া হয়। তাঁর পায়ের কাছে ও আকাশের দিকে তাক করে গুলি চালানো হয়। সে ভয়ে দৌড় দেয়। ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে সাধারণ মানুষেরা গুলিবিদ্ধ হয়ে একে একে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে থাকেন। আমির ছিল তাঁদেরই একজন।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, বিতর্কিত ত্রাণ সংস্থা জিএইচএফ মে মাসের শেষ দিকে কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে গাজায় খাবার নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।জাতিসংঘের তথ্য বলছে, বিতর্কিত ত্রাণ সংস্থা জিএইচএফ মে মাসের শেষ দিকে কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে গাজায় খাবার নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গত মাসে গাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি ইউসুফ আল-আজউরি মিডল ইস্ট আইকে বলেন, পরিবারের জন্য খাবার সংগ্রহ করার চেষ্টাকে টিভি শো ‘স্কুইড গেম’-এর সঙ্গে তুলনা করা যায়, যেখানে হত্যা করাটা বিনোদনের বিষয়।
ইসরায়েলি সেনারা স্বীকার করেছেন, তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সরাসরি নির্দেশে গাজা উপত্যকায় ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি করে হত্যা করেছেন।
‘তারা পশু না, তারা মানুষ’গত সপ্তাহে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি গাজায় ব্যাপক হারে অনাহারকে ‘মানবসৃষ্ট ও পরিকল্পিত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে লাজারিনি জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণব্যবস্থাকে ত্রুটিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, এ ব্যবস্থা মানবিক সংকট মোকাবিলার জন্য তৈরিই হয়নি।
ফিলিস্তিনের এ ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অবরোধ কখনো কিছুটা শিথিল, আবার কখনো কঠোর ছিল। তবে গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় পুরোপুরি খাদ্য ও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর পথ বন্ধ করে দেয়। এতে মানুষ চরম ক্ষুধার মধ্যে পড়েন।লাজারিনি বলেন, এ ব্যবস্থা সামরিক ও রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটা নিষ্ঠুর। কারণ, এটা যতটা না জীবন বাঁচায়, তার চেয়ে অনেক বেশি জীবন কেড়ে নেয়। গাজার ভেতরে হোক কিংবা বাইরে—উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের প্রতিটি দিক সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরায়েল।
সোমবারের পডকাস্টে আইগুলার ফিলিস্তিনিদের প্রতি অমানবিক আচরণের নিন্দা জানান।
আইগুলার বলেন, ‘আমি মার্কিন জনগণ ও ইসরায়েলিদের বলতে চাই যে আমি সেখানে (গাজা) ছিলাম। আমি ওদের ছুঁয়ে দেখেছি। ওদের সঙ্গে কথা বলেছি। গাজার সাধারণ মানুষ ক্ষুধায় মরছে। তারা পশু না, তারা মানুষ। কিন্তু তাদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করা হচ্ছে। আমরা সিরিয়ার বাগুজে আত্মসমর্পণ করা আইএস যোদ্ধাদের চেয়েও গাজার সাধারণ মানুষদের কম সম্মান করি।’
আরও পড়ুনগাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরায়েলের হামলায় ৭০ জনের বেশি নিহত৩১ জুলাই ২০২৫দৃশ্যমান হচ্ছে দুর্ভিক্ষগত মঙ্গলবার জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা সংস্থা বলেছে, গাজাজুড়ে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। গাজা নগরীর প্রতি তিনটি শিশুর মধ্যে একটি শিশু গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছে।
আমি মার্কিন জনগণ ও ইসরায়েলিদের বলতে চাই, আমি গাজায় ছিলাম। আমি ওদের ছুঁয়ে দেখেছি। ওদের সঙ্গে কথা বলেছি। গাজার সাধারণ মানুষ ক্ষুধায় মরছে। তারা পশু না, তারা মানুষ। কিন্তু তাদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করা হচ্ছে। আমরা সিরিয়ার বাগুজে আত্মসমর্পণ করা আইএস যোদ্ধাদের চেয়েও গাজার সাধারণ মানুষদের কম সম্মান করি।—অ্যান্টনি আগুইলার, মার্কিন সেনাবাহিনীর বিশেষ শাখার সাবেক কর্মকর্তাজাতিসংঘ–সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) তাদের নতুন প্রতিবেদনে বলেছে, গাজা উপত্যকার বেশির ভাগ এলাকায় খাবারের পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে তা এখন দুর্ভিক্ষের মাত্রায় পৌঁছেছে। গাজায় অনেক মানুষ গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছে।
সংস্থাটি আরও বলেছে, অবিরাম সংঘর্ষ, লাখো মানুষের ঘরছাড়া হওয়া, মানবিক সহায়তার ওপর কঠিন বাধা, স্বাস্থ্যসেবাসহ জরুরি সেবাগুলোর ধ্বংসের কারণে এ সংকট এখন এক ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
এমন এক সময়ে প্রতিবেদনটি দেওয়া হয়েছে, যখন কিনা গাজায় প্রায় ১৫০ জন ফিলিস্তিনি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ অনাহারে ভুগে মারা গেছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ প্রাণহানি হয়েছে।
আরও পড়ুননেতানিয়াহুর গাজা গণহত্যার বিরুদ্ধে এবার দাঁড়াচ্ছে ইসরায়েলি সংস্থাও৩১ জুলাই ২০২৫ফিলিস্তিনের এ ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অবরোধ কখনো কিছুটা শিথিল, আবার কখনো কঠোর ছিল। তবে গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় পুরোপুরি খাদ্য ও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর পথ বন্ধ করে দেয়। এতে মানুষ চরম ক্ষুধার মধ্যে পড়েন।
গত সপ্তাহে বিশ্বের ১০০টির বেশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও ত্রাণ সংস্থা অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এসব সংস্থার নিজেদের কর্মীরাও ব্যাপকভাবে খাদ্যসংকটে পড়েছে।
ইউএনআরডব্লিউএর যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক জুলিয়েট টৌমা গত সপ্তাহে মিডল ইস্ট আইকে বলেন, অপুষ্টির কারণে তাঁদের সংস্থার অনেক কর্মী কাজের সময় জ্ঞান হারিয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অনেক দেশ, আন্তর্জাতিক অধিকার সংগঠন ও বিশেষজ্ঞ একে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
আরও পড়ুনএবার ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা কানাডার৩০ জুলাই ২০২৫