ঘড়ির কাঁটায় সময় তখন বেলা ১টা বেজে ৮ মিনিট। বাগেরহাট প্রেসক্লাবের ব্যালকনিতে হঠাৎ হাতটা ধরে কেঁদে ওঠেন এক নারী। রাস্তা দিয়ে তখন মাত্র শেষ হওয়া এসএসসি পরীক্ষার্থীরা যাচ্ছেন। তাদের দেখিয়ে তিনি বলে ওঠেন, ‘বাবা, আজকে আমার ছেলের (এসএসসি) পরীক্ষা ছিল। কিন্তু আজকে আমার ছেলে কোথায় আছে? সবার ছেলেমেয়ে আজ পরীক্ষা দেয়, আর আমার মাহফুজ নেই।’

মাহফুজের পুরো নাম মো.

মাহফুজুর রহমান। বাড়ি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের গুলিশাখালী গ্রামে। ঢাকার আলহাজ আব্বাস উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় থেকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল তাঁর। তবে গেল জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকার মিরপুরে পুলিশের গুলিতে মারা যায় সে। এক দিন পর ২০ জুলাই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে তাঁর লাশ খুঁজে পায় পরিবার। বাবা আবদুল মান্নান ও মা বেগমের সংসারে তিন মেয়ের পর একমাত্র ছেলে ছিল মাহফুজুর। ঢাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসা করে ছেলে লেখাপড়া করাচ্ছিলেন। কিন্তু সেই ছেলেকে হারিয়ে মা-বাবা দুজনই এখনো কেঁদে চলেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে এসে ছেলে মাহফুজুরের ছবি বুকে জড়িয়ে মা বেগম বলছিলেন, ‘আমার বাবা আমারে বলছিল, ‘‘মা দেখবেন, আমার রেজাল্টটা কত সুন্দর ভালো হয়।’’ সেইডা শেখ হাসিনা হইতে দেল না। আমার ছেলেটার কী অপরাধ। কেন ওরে গুলি দিয়ে মারছে। কত হাজার হাজার সন্তান, ওগো জেলখানায় ঢুকায়ে দেত, একদিন না একদিন সন্তান ফিরে পাইতাম। কিন্তু জীবনের তরে এক্কেবারে কেন মাইরে ফেলাইলো।’

গুলিতে মারা যাওয়া ছেলের ছবি হাতে কেঁদে চলেছেন মা।আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

ফুডপ্যান্ডার ডেলিভারি বয় থেকে সফল ফ্রিল্যান্সার আবু সালেহ, মাসে আয় কত জানেন

পরিবারের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। অভাবের সংসারে নিজেকে একরকমের বোঝাই মনে করতেন। কিছু একটা করা দরকার। পরিস্থিতি যেন আবু সালেহ আহমেদকে দিন দিন আরও বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অনেক স্বপ্ন দেখেছেন, সেই স্বপ্নে নিজেকে অটুট রেখেছেন। আর পাড়ি দিতে হয়েছে অনেকটা পথ। ধৈর্য নিয়ে নিজের স্বপ্নের দিকে তাকিয়ে আজ সালেহ নিজেকে বলতেই পারেন একজন সফল ফ্রিল‍্যান্সার। কেননা এখন তিনি মাসে আয় করেন তিন লাখ টাকা।

আবু সালেহ আহমেদ। ডাকনাম আফনান। বাবা মো. কুতুব উদ্দিন শেখ মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। এখন অবসর নিয়েছেন। মা সাজেদা খাতুন গৃহিণী। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার তারাপুর গ্রামের আবু সালেহ আহমেদ এখন অবশ্য এলাকায় থাকেন না। থাকেন ঢাকার কাঁঠালবাগানে। এখান থেকেই আফনান গড়ে মাসিক তিন লাখ টাকা আয় করেন। ছোট্ট একটা অফিসও নিয়েছেন, যেখানে চারজন ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থান করেছেন।

২০১৬ সালে সেনগ্রাম ফাজিল মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাসের পর ২০২০ সালে লক্ষ্মীপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন আবু সালেহ আহমেদ। এখন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে স্থাপত্য বিভাগে চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। ছাত্রাবস্থাতেও তাঁর মাসিক আয় কোনো কোনো মাসে পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে যায়। ২৭ বছর বয়সী আবু সালেহ আহমেদ বিয়ে করেছেন গত বছর। স্ত্রীর নাম ফাতেমা জোহরা।

পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াই ছিল কঠিন

আফনান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আসলে মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাস করে বের হয়েছি। তখন ইচ্ছা থাকলেও আমাদের সামর্থ্য ছিল না ভালো জায়গায় পড়ার। আমার চার বছর যে সম‍য়টা কেটেছে, আসলে খুব কষ্টে কেটেছে। কলেজে আমি এক্সট্রা কারিকুলামে ভালো ছিলাম, ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি ছিলাম, বেশ কিছু জায়গায় বিতর্ক করে চাম্পিয়নও হয়েছি। স‍্যারদের চোখে পড়েছি। একসময় আর পেরে উঠছিলাম না, তাই দুই বছর পড়তে পড়তেই টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) নিতে গিয়েছিলাম। লক্ষ্মীপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষকেরা আমার কথা শুনে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। যার ফলে আমি পড়াশোনাটা শেষ করেছি।’

আবু সালেহ আহমেদ প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘দিনগুলো কঠিন ছিল। টিউশনি করাতাম। ১ হাজার ৫০০ টাকা পেতাম। ১ হাজার টাকা মেসভাড়া ও ৫০০ টাকায় খাওয়া। সকালে ও রাতে খেতাম। মাসে তা–ও খাওয়ার বিল আসত ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। মেসের বাকিরা সেটা দিয়ে দিত। তারপর একদিন ২ হাজার ৫০০ টাকার একটা টিউশনি পেয়ে একটু যেন শক্তি পেলাম। এভাবেই আমার ডিপ্লোমার চার বছর কেটেছে।’

একবুক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায়

২০২০ সালে ডিপ্লোমা পড়া শেষ করেই একবুক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন আবু সালেহ আহমেদ। এসেই শুরু করেন আবার জীবনসংগ্রাম। কোথাও কাজ পাচ্ছিলেন না। শেষমেশ ফুডপ্যান্ডায় রাইডার (ডেলিভারি বয়) হিসেবে কাজ নেন তিনি। কিন্তু শুধু ফুডপ্যান্ডায় কাজের আয় দিয়ে তাঁর চলছিল না। তখন থেকেই কাজের পাশাপাশি কিছু একটা করার চেষ্টা করছিলেন। কিছু জায়গায় খোঁজ নিয়ে ভর্তি হয়ে যান তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ আইটিতে। খাবার ডেলিভারির পাশাপাশি কাজও শিখতেন।

আবু সালেহ আহমেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফুডপ্যান্ডার ডেলিভারি বয় থেকে সফল ফ্রিল্যান্সার আবু সালেহ, মাসে আয় কত জানেন