লিভারপুলের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ৬ মিনিটের ব্যবধানে তিনটি পোস্ট করা হয় আজ। প্রথম পোস্টে মাঠে লাল গালিচার ওপর একটি চেয়ার। চেয়ারটি দেখে বোঝা যায়, সেটি গণ্যমান্য কারও বসার আসন। দুই মিনিট পরই আরেকটি পোস্ট—লিভারপুলের জার্সি গায়ে সেই চেয়ারে বসে হাসছেন মোহাম্মদ সালাহ। ক্যাপশনে লেখা, ‘তিনি থাকছেন।’

আরও পড়ুনব্রাজিল–আর্জেন্টিনার মহাদেশ থেকে ৬৪ দলের বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তাব ১ ঘণ্টা আগে

লিভারপুল সমর্থকদের এতটুকুতেই বুঝে ফেলার কথা। মিসরীয় ফরোয়ার্ডের সঙ্গে ইংলিশ ক্লাবটির চুক্তি শেষ পর্যন্ত হবে কি হবে না, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছিল বহুদিন। আজ সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে লিভারপুলের সঙ্গে নতুন চুক্তি করেছেন সালাহ, যেটা দুই মিনিট পরই ফেসবুকে বিবৃতিসহ আরও একটি পোস্টে নিশ্চিত করে অ্যানফিল্ডের ক্লাবটি।

নতুন চুক্তিতে ২০২৭ পর্যন্ত লিভারপুলে থাকছেন সালাহ। অর্থাৎ নতুন চুক্তিতে তাঁর মেয়াদ দুই বছর। চুক্তি সইয়ের পর লিভারপুলের ওয়েবসাইটকে সালাহ বলেছেন, ‘সই করেছি কারণ আমি মনে করি, আমাদের অন্যান্য ট্রফি জয়ের সুযোগ আছে এবং নিজের খেলাটা উপভোগ করতে পারব। এটা দারুণ ব্যাপার, কারণ সেরা বছরগুলো এখানে কাটিয়েছি। আট বছর খেলেছি, আশা করি এটা ১০ বছর হবে। নিজের জীবন এবং ফুটবলটা এখানে উপভোগ করছি। ক্যারিয়ারের সেরা বছরগুলো এখানে কাটিয়েছি।’

সমর্থকদের প্রতি ৩২ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড বলেছেন, ‘(সমর্থকদের প্রতি) বলতে চাই, এখানে থাকতে পেরে আমি খুব খুব খুশি। সই করেছি কারণ আমি বিশ্বাস করি একসঙ্গে অনেক বড় বড় ট্রফি জিততে পারব.

..ভবিষ্যতে আমরা আরও ট্রফি জিততে যাচ্ছি।’

আরও পড়ুনওনানার ভুলে ভরা রাতে জয়বঞ্চিত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড৪ ঘণ্টা আগে

এএস রোমা থেকে ২০১৭ সালে ৩ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ডে (প্রায় ৫৭৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা) লিভারপুলে যোগ দিয়ে প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ, লিগ কাপ, কমিউনিটি শিল্ড, সুপার কাপ, ক্লাব বিশ্বকাপ জয়ের পাশাপাশি চ্যাম্পিয়নস লিগও জিতেছেন সালাহ। শুধু কী তাই, লিভারপুলের ইতিহাসে সালাহ তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতাও (৩৯৩ ম্যাচে ২৪৩ গোল ও গোল বানিয়েছেন ১০৯টি)। তবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের হয়ে সালাহর বেশি গোল নেই আর কারও (২৮৩ ম্যাচে ১৮২ গোল)।

আগামী জুনে সালাহর সঙ্গে লিভারপুলের বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ফুরোবে। চলতি মৌসুমে সালাহ একাধিকবার বলেছেন, তিনি চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে চান। কিন্তু দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাটে-বলে হচ্ছিল না। সে কারণে সমর্থকদের মধ্যে সালাহর লিভারপুল ছেড়ে যাওয়ার শঙ্কা জেগেছিল। কারণ, সৌদি আরবের ঘরোয়া ফুটবল তাঁর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু গত বুধবার জানা যায়, লিভারপুল ও সালাহর মধ্যে ইতিবাচক আলাপ হয়েছে এবং নতুন চুক্তি সন্নিকটে। সেটাই ঘটল আজ।

এত দিন সালাহর এজেন্ট রামি আব্বাসের সঙ্গে নতুন চুক্তির রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করেছেন লিভারপুলের ক্রীড়া পরিচালক রিচার্ড হিউজ। সংবাদমাধ্যম এর আগে জানিয়েছিল, লিভারপুলে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া সালাহ অ্যানফিল্ডের ক্লাবটিতে থাকতে বেতন কমাতেও রাজি ছিলেন। কিন্তু ইএসপিএনকে সূত্র জানায়, নতুন চুক্তিতে বেতন কমানোর কথা ভাবেনি কোনো পক্ষই।

আরও পড়ুনআর্জেন্টিনাকে গুঁড়িয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে নতুন করে যা বললেন রাফিনিয়া ১৪ ঘণ্টা আগে

জুনে তেত্রিশে পা রাখতে যাওয়া সালাহ এবার প্রিমিয়ার লিগে ৩১ ম্যাচে করেছেন ২৭ গোল। এখন পর্যন্ত তিনিই সর্বোচ্চ গোলদাতা। পাশাপাশি ১৭টি গোলও বানিয়েছেন। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে ৪৫ ম্যাচে তাঁর গোলসংখ্যা ৩২।

চলতি মৌসুম শেষে লিভারপুলের যে তিন খেলোয়াড়ের চুক্তির মেয়াদ ফুরোবে, সালাহ তাঁদের মধ্যে সবার আগে নতুন চুক্তি করলেন। বাকি রইলেন ভার্জিল ফন ডাইক ও ট্রেন্ট আলেক্সান্দার-আর্নল্ড। ডাচ ডিফেন্ডার ডাইক জানিয়েছেন, তাঁর বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে যাচ্ছে এবং নতুন চুক্তির বিষয়ে তিনি আশাবাদী। কিন্তু ট্রেন্ট আলেক্সান্দার-আর্নল্ড রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিতে পারেন বলে জোর গুঞ্জন আছে দলবদলের বাজারে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সমর থকদ র নত ন চ ক ত

এছাড়াও পড়ুন:

এবার আগেভাগেই বই ছাপার কাজ শুরু হচ্ছে, ২০২৭ সাল থেকে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের চিন্তা

এ বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই তুলে দিতে মাত্রাতিরিক্ত দেরি করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রায় তিন মাসের মাথায় সারা দেশের সব শিক্ষার্থীর জন্য সব বিষয়ের পাঠ্যবই সরবরাহ করতে পেরেছে এনসিটিবি। আর বই পেতে দেরি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে।

এই ‘বাজে অভিজ্ঞতা’ মাথায় নিয়ে আগামী বছরের পাঠ্যবই ছাপার কাজ এবার আগেভাগেই শুরু করছে এনসিটিবি। আগামী সপ্তাহেই দরপত্র আহ্বান করা হবে। পর্যায়ক্রমে জুনের মধ্যে সব দরপত্রের কাজ শেষ করে আগামী মধ্যে নভেম্বরের মধ্যে সব পাঠ্যবই ছাপিয়ে মাঠপর্যায়ে পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এনসিটিবি।

বর্তমানে এনসিটিবির নিয়মিত চেয়ারম্যান নেই। এক মাসের বেশি সময় ধরে চেয়ারম্যানের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন সংস্থাটির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, গেলবারের অভিজ্ঞতার বিবেচনা করে এবার আগেই পাঠ্যবই ছাপার কাজের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। যাতে করে আগামী বছরের শুরুতেই সব শিক্ষার্থী সব পাঠ্যবই পেতে পারে।

২০২৭ সাল থেকে পুরো শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করে তার আলোকে পাঠ্যবই দেওয়ার পরিকল্পনা করছে এনসিটিবি। প্রথম বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে তা শুরু হতে পারে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণিতে নতুন বা পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে নবম-দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে পাঠ্যবই দেয় সরকার। দেশে উৎসব করে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। তবে গত দু-তিন বছর শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ১ জানুয়ারি উৎসব করে বই বিতরণ শুরু হলেও দরপত্রসংক্রান্ত জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব নতুন বই দেওয়া যায়নি। সব বই দিতে কিছুদিন দেরি হয়েছিল। কিন্তু এবার বই দিতে মাত্রাতিরিক্ত দেরি হয়েছে। শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, পাঠ্যবই পরিমার্জনসহ কিছু সমস্যার কারণে কিছুটা ধারণা দেওয়া হলেও তা শেষ পর্যন্ত গত ২৪ মার্চ সর্বশেষ পাঠ্যবই সরবরাহের অনুমোদন বা পিডিআই দেয় এনসিটিবি। এভাবে এ বছর বই দেওয়ায় দেরি হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে শিক্ষা বিভাগ।

এনসিটিবির সূত্র জানিয়েছে, আগামী বছরের পাঠ্যবই ছাপার কাজ আগেভাগে শুরু করতে ইতিমধ্যে অ্যানুয়াল প্রকিউরমেন্ট প্ল্যান (এপিপি) শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। এরই মধ্যে মাঠ পর্যায় থেকে পাঠ্যবইয়ের চাহিদা সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন সেগুলো পুনরায় যাচাই করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে মাধ্যমিকের মোট পাঠ্যবইয়ের চাহিদা ২৩ কোটি ১২ লাখের মতো আসলেও পুনরায় যাচাইয়ে তা কমে ২২ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। এই সংখ্যাটি আরেকটু কমতে পারে। তবে প্রাথমিকের বইয়ের সংখ্যাটি এখনো নিরূপণ হয়নি। প্রসঙ্গত, বছরের জন্য প্রাথমিকের মোট পাঠ্যবই ছিল ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজারের মতো।

আরও পড়ুন২ মাস চলে গেল, আর কবে সব বই পাবে শিক্ষার্থীরা০৩ মার্চ ২০২৫

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এত দিন বিদ্যালয়গুলো অতিরিক্ত চাহিদা দিত। ফলে বইয়ের সংখ্যা অনেক বেশি হতো। এতে সরকারের ব্যয়ও বেশি হতো। এবার এনসিটিবির কর্মকর্তারা নিজেরাও বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে চাহিদার বিষয়টি দেখভাল করছেন। ফলে তাঁরা ধারণা করছেন আগামী বছর মোট পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা বেশ কমতে পারে। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই চাহিদা নিরূপণ হয়ে যাবে।

এনসিটিবি জানিয়েছে আগামী সপ্তাহে প্রাক প্রাথমিক এবং ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার কাজের দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। তাঁদের লক্ষ্য জুনের মধ্যে সব শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের দরপত্রের কাজ শেষ করা। এই প্রক্রিয়ায় তাঁদের পরিকল্পনা হলো আগামী ২৫ অক্টোবরের মধ্যে প্রাথমিকের সব বই ছাপিয়ে মাঠপর্যায়ে ৫৮৫টি স্থানে (পয়েন্ট) পৌঁছে দেওয়া হবে। আর মাধ্যমিকের সব বই দেওয়া হবে মধ্য নভেম্বরের।

প্রসঙ্গত চলতি বছরের পাঠ্যবই ছাপার কাজের দরপত্র গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত গড়িয়েছিল।

আরও পড়ুনঅবশেষে সব বই সরবরাহ করল এনসিটিবি ০৮ এপ্রিল ২০২৫পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের উদ্যোগ

গত বছর পর্যন্ত প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চলেছে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী এ বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই তা চালুর কথা ছিল; কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম বাতিল হয়ে যায়। তার পরিবর্তে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম পুনর্বহাল করা হয়। তবে প্রাথমিকে কার্যত নতুন শিক্ষাক্রমই বহাল রাখা হয়। আগামী বছরের নতুন পাঠ্যবই তার আলোকেই দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে বিদ্যমান পাঠ্যবই পরিমার্জনের কাজও প্রায় শেষ করেছে এনসিটিবি।

তবে, পরের বছর অর্থাৎ ২০২৭ সাল থেকে পুরো শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করে তার আলোকে পাঠ্যবই দেওয়ার পরিকল্পনা করছে এনসিটিবি। প্রথম বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে তা শুরু হতে পারে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণিতে নতুন বা পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের বিষয়ে তাঁরা এখন থেকে প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু কাজ শুরু করছেন। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আরও পড়ুনপুরোনো শিক্ষাক্রমে বই, বিষয়বস্তুতে কতটা পরিবর্তন ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এবার আগেভাগেই বই ছাপার কাজ শুরু হচ্ছে, ২০২৭ সাল থেকে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের চিন্তা
  • শিক্ষার মানোন্নয়নে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন
  • ২০২৭ সালের জুনের পর ‘করছাড়’ থাকবে না