২০২৭ সাল পর্যন্ত লিভারপুলে সালাহ
Published: 11th, April 2025 GMT
লিভারপুলের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ৬ মিনিটের ব্যবধানে তিনটি পোস্ট করা হয় আজ। প্রথম পোস্টে মাঠে লাল গালিচার ওপর একটি চেয়ার। চেয়ারটি দেখে বোঝা যায়, সেটি গণ্যমান্য কারও বসার আসন। দুই মিনিট পরই আরেকটি পোস্ট—লিভারপুলের জার্সি গায়ে সেই চেয়ারে বসে হাসছেন মোহাম্মদ সালাহ। ক্যাপশনে লেখা, ‘তিনি থাকছেন।’
আরও পড়ুনব্রাজিল–আর্জেন্টিনার মহাদেশ থেকে ৬৪ দলের বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তাব ১ ঘণ্টা আগেলিভারপুল সমর্থকদের এতটুকুতেই বুঝে ফেলার কথা। মিসরীয় ফরোয়ার্ডের সঙ্গে ইংলিশ ক্লাবটির চুক্তি শেষ পর্যন্ত হবে কি হবে না, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছিল বহুদিন। আজ সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে লিভারপুলের সঙ্গে নতুন চুক্তি করেছেন সালাহ, যেটা দুই মিনিট পরই ফেসবুকে বিবৃতিসহ আরও একটি পোস্টে নিশ্চিত করে অ্যানফিল্ডের ক্লাবটি।
নতুন চুক্তিতে ২০২৭ পর্যন্ত লিভারপুলে থাকছেন সালাহ। অর্থাৎ নতুন চুক্তিতে তাঁর মেয়াদ দুই বছর। চুক্তি সইয়ের পর লিভারপুলের ওয়েবসাইটকে সালাহ বলেছেন, ‘সই করেছি কারণ আমি মনে করি, আমাদের অন্যান্য ট্রফি জয়ের সুযোগ আছে এবং নিজের খেলাটা উপভোগ করতে পারব। এটা দারুণ ব্যাপার, কারণ সেরা বছরগুলো এখানে কাটিয়েছি। আট বছর খেলেছি, আশা করি এটা ১০ বছর হবে। নিজের জীবন এবং ফুটবলটা এখানে উপভোগ করছি। ক্যারিয়ারের সেরা বছরগুলো এখানে কাটিয়েছি।’
সমর্থকদের প্রতি ৩২ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড বলেছেন, ‘(সমর্থকদের প্রতি) বলতে চাই, এখানে থাকতে পেরে আমি খুব খুব খুশি। সই করেছি কারণ আমি বিশ্বাস করি একসঙ্গে অনেক বড় বড় ট্রফি জিততে পারব.
এএস রোমা থেকে ২০১৭ সালে ৩ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ডে (প্রায় ৫৭৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা) লিভারপুলে যোগ দিয়ে প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ, লিগ কাপ, কমিউনিটি শিল্ড, সুপার কাপ, ক্লাব বিশ্বকাপ জয়ের পাশাপাশি চ্যাম্পিয়নস লিগও জিতেছেন সালাহ। শুধু কী তাই, লিভারপুলের ইতিহাসে সালাহ তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতাও (৩৯৩ ম্যাচে ২৪৩ গোল ও গোল বানিয়েছেন ১০৯টি)। তবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের হয়ে সালাহর বেশি গোল নেই আর কারও (২৮৩ ম্যাচে ১৮২ গোল)।
আগামী জুনে সালাহর সঙ্গে লিভারপুলের বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ফুরোবে। চলতি মৌসুমে সালাহ একাধিকবার বলেছেন, তিনি চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে চান। কিন্তু দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাটে-বলে হচ্ছিল না। সে কারণে সমর্থকদের মধ্যে সালাহর লিভারপুল ছেড়ে যাওয়ার শঙ্কা জেগেছিল। কারণ, সৌদি আরবের ঘরোয়া ফুটবল তাঁর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু গত বুধবার জানা যায়, লিভারপুল ও সালাহর মধ্যে ইতিবাচক আলাপ হয়েছে এবং নতুন চুক্তি সন্নিকটে। সেটাই ঘটল আজ।
এত দিন সালাহর এজেন্ট রামি আব্বাসের সঙ্গে নতুন চুক্তির রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করেছেন লিভারপুলের ক্রীড়া পরিচালক রিচার্ড হিউজ। সংবাদমাধ্যম এর আগে জানিয়েছিল, লিভারপুলে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া সালাহ অ্যানফিল্ডের ক্লাবটিতে থাকতে বেতন কমাতেও রাজি ছিলেন। কিন্তু ইএসপিএনকে সূত্র জানায়, নতুন চুক্তিতে বেতন কমানোর কথা ভাবেনি কোনো পক্ষই।
আরও পড়ুনআর্জেন্টিনাকে গুঁড়িয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে নতুন করে যা বললেন রাফিনিয়া ১৪ ঘণ্টা আগেজুনে তেত্রিশে পা রাখতে যাওয়া সালাহ এবার প্রিমিয়ার লিগে ৩১ ম্যাচে করেছেন ২৭ গোল। এখন পর্যন্ত তিনিই সর্বোচ্চ গোলদাতা। পাশাপাশি ১৭টি গোলও বানিয়েছেন। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে ৪৫ ম্যাচে তাঁর গোলসংখ্যা ৩২।
চলতি মৌসুম শেষে লিভারপুলের যে তিন খেলোয়াড়ের চুক্তির মেয়াদ ফুরোবে, সালাহ তাঁদের মধ্যে সবার আগে নতুন চুক্তি করলেন। বাকি রইলেন ভার্জিল ফন ডাইক ও ট্রেন্ট আলেক্সান্দার-আর্নল্ড। ডাচ ডিফেন্ডার ডাইক জানিয়েছেন, তাঁর বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে যাচ্ছে এবং নতুন চুক্তির বিষয়ে তিনি আশাবাদী। কিন্তু ট্রেন্ট আলেক্সান্দার-আর্নল্ড রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিতে পারেন বলে জোর গুঞ্জন আছে দলবদলের বাজারে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সমর থকদ র নত ন চ ক ত
এছাড়াও পড়ুন:
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।