‘মানবিক হতে পারাটাও জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ’
Published: 12th, April 2025 GMT
ক্লাউডিয়া শিফার। জার্মান সুপারমডেল। কিংবদন্তি এই মডেলের বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণামূলক কথা তুলে এনেছেন ইমাম হোসেন মানিক
দীর্ঘদিন ধরে আমার মনে হয়ে আসছে, কোনো একটা ভুল করে ফেলেছি জীবনে! মনে পড়ে, ১৯৯৯ সালের কথা। আমেরিকান ফিল্মমেকার জেমস টোব্যাক তখন তাঁর ‘ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’ সিনেমাটিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই প্রস্তাব পেয়ে বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলাম। তার জন্য তো কিছুই করতে পারব না আমি। অভিনয় তো আমার লক্ষ্য ছিল না। রাজনীতিও আমার লক্ষ্য নয়। ফলে এ দুটি মাধ্যমে নিজের ভবিষ্যতের কথা ভাবতে পারি না কখনোই।
অজান্তে রাজনীতিতে
তবু মাঝে মধ্যে ভাবি, এই যে এত এত শিশু মরে যাচ্ছে আফ্রিকায়; আমার নিশ্চয়ই কিছু করার আছে। নিজেকে সান্ত্বনা দিই: না, এটি অত বেশি রাজনৈতিক বিষয় নয়; বরং একটু আন্তরিক প্রচেষ্টা এমন মানবসৃষ্ট বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে পারবে পৃথিবীকে। ফলে অজান্তে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে গেলাম আমি! সরাসরি নয় যদিও। বরং আফ্রিকার শিশুদের নিজের সন্তান মনে হওয়ায়, এমন কাজে নিয়োজিত জার্মান রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে করতে শুরু করলাম আলোচনা। কেননা, মানুষ হিসেবে এতটুকু দায়িত্ব আমাকে নিতে হতো।
বড় করে শ্বাস নিই
ছোটবেলায় খুব লাজুক ছিলাম আমি। যেখানে যেতাম, সঙ্গে থাকত প্রিয় বান্ধবীর দল। ফটো স্টুডিওতে গিয়ে মুখ ফুটে একটা শব্দও বলতাম না আমি। যখন কেউ কথা বলতে আসত, লজ্জায় চোখ-মুখ লাল হয়ে যেত। তবে এক্ষেত্রে মেকআপ আমাকে অনেক বাঁচিয়েছে বলা যায়! ফলে চোখ-মুখের এ পরিবর্তন ঠিকঠাক নজরে পড়েনি কারও। এখনও, যখন কোথাও যাই, নজরে পড়ে ফটোগ্রাফারদের ব্যস্ততা। তখন খুব বড় করে শ্বাস নিই; তাতে এক ধরনের স্বস্তি অনুভব হয় আমার। তখন বলি, তাড়াতাড়ি ছবি তুলুন; আমার তাড়া আছে!
নিজেকে প্রস্তুত করতে.
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মডেলিং সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা ছিল না। এ মাধ্যমে যে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব ভাবিনি এমনটাও। প্রথম দিকে স্রেফ পরিকল্পনা ছিল, নিজেকে আরেকটু ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য প্যারিসে পাড়ি জমানো। মডেলিংয়ের দুনিয়ায় নিজেকে জড়িয়ে নেওয়া আমি কোনোদিনই এমন পোশাক পরিনি, যেটি আমাকে অস্বস্তি দিতে পারে। ব্যক্তিজীবনে সাধারণত মেকআপ এড়িয়ে যেতে ভালোবাসি। দীর্ঘ একটি সময় এ পেশায় থেকে দেখেছি, মডেলিংয়ের বাজারটি প্রতিনিয়ত বড় হয়ে উঠছে। অনেক ধরনের ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে এ মাধ্যমে। তাতে আমার নিজেরও, সামান্য হলেও অবদান রয়েছে ভাবতে আনন্দ হয়।
যার মাধ্যমে বদলে যেতে পারে ভাগ্য
মডেলিং দুনিয়ায় যারা কাজ করতে আগ্রহী, অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, একটি ভালো ফটোগ্রাফই খুলে দিতে পারে আপনার ভাগ্য। মনে রাখুন, ছবিতে যথাযোগ্য আবেগ ফুটিয়ে তুলতে পারা এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় গুণ। যে ছবি দেখে যে কারও মনে ভালো, খুব ভালো একটি অনুভূতি তৈরি হবে সেটিকে আমি সে ছবির মডেলের সেরা অর্জন বলে মনে করি। এ ক্ষেত্রে দক্ষ কোনো ফটোগ্রাফারের ক্যামেরায় সঁপে দিন নিজেকে। রাখুন আস্থা। করুন পরিশ্রম। দেখবেন, তার তোলা ছবিগুলো আপনাকে একটি নতুন দুনিয়ার সন্ধান দেবে। সেই ফটোগ্রাফার সিলেকশনটাও হতে হবে যথাযোগ্য। এই ক্ষেত্রে কেউ এসে আপনাকে বলে দেবে না। নিজের মেধা দিয়ে সেরা ফটোগ্রাফারকে খুঁজে বের করতে হবে। কিংবা আপনার জন্য যে ফটোগ্রাফার সেরা তাকে বের করে আনতে হবে। তবেই দুনিয়া আপনাকে চিনবে নতুন করে। আপনিও উড়ে বেড়াতে পারবেন স্বপ্নের আকাশে!
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা।
আরো পড়ুন:
শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?
বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।”
একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।”
শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি।
১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।
দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
ঢাকা/শান্ত