“বাংলাদেশ ব্যাংকে ২ বিলিয়ন ডলার চুরি বা লুট করার পরিকল্পনা ছিল। শেষ পর্যন্ত ৮৮ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে ৬৬ মিলিয়ন এখনও উদ্ধার করা যায়নি। পুরো বাংলাদেশকে লুট করার পারিকল্পনা ছিল। ২ বিলিয়ন ডলার চলে গেলে আজকে প্রায় দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতির মধ্যে পড়তাম।”

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল রবিবার (১৩ এপ্রিল) সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, “২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জালিয়াতি করে সুইফট কোডের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। স্থানান্তরিত এসব টাকা পাঠানো হয়েছিল ফিলিপিন্সে তিনটি ক্যাসিনোতে। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে ফিলিপিন্স সরকার বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দিলেও বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার আর পাওয়া যায়নি।”

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় আওয়ামী লীগ সরকার তদন্তকারী সিআইডিকে অভিযোগপত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জড়িতদের নাম না দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, “এটা গুরুতর একটা ফিনান্সিয়াল ক্রাইম এবং বাংলাদেশ ঘিরে অনেক বড় ষড়যন্ত্র। এটা তদন্ত করতে গিয়ে তৎকালীন সরকারের আমলে সীমাহীন রাজনীতি করা হয়েছে। সিআইডির তদন্ত যখন একটা ম্যাচিউর পর্যায়ে চলে গিয়েছিল, তখন আগেই সিআইডিকে সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সিআইডি থেকে আমরা যেটা জেনেছি যে বাংলাদেশ ব্যাংকের যারা জড়িত আছে তাদের নাম যেন অভিযোগপত্রে না দেওয়া হয়।”

আসিফ নজরুল বলেন, “আজ আমাদের একটা রিভিউ কমিটির মিটিং ছিল। এ ব্যাপারে অনেক তদন্ত কমিটি হয়েছে, বিচারকার্য শুরু হয়েছে বিদেশে। প্রকৃত অবস্থা কী এবং এখানে সরকারের করণীয় কী, সেসব বিষয় পর্যালোচনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের রিভিউ কমিটি করা হয়েছিল।‌ সেই রিভিউ কমিটির প্রথম মিটিং আজকে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত হয়েছে। রিভিউ কমিটির প্রধান হিসেবে আছি আমি নিজে। জ্বালানি উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ কমিটির সদস্যরা সবাই মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।”

‘‘মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন (সাবেক গভর্নর) সাহেবের একটি রিপোর্ট ছিল, সেই রিপোর্টের পর্যালোচনাটা আমরা শুনেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রক্রিয়াটা বলছি না, বাকি টাকা উদ্ধারের জন্য যে স্টেপগুলো নেওয়া হচ্ছে সেটির গতিশীলতা আনতে কাজ করছি,” যোগ করেন তিনি।

আইন উপদেষ্টা আরো বলেন, “আমাদের অত্যন্ত অভিজ্ঞ একজন তথ্যপ্রযুক্তি এক্সপার্ট, প্রধান উপদেষ্টার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়ব স্পেসিফিকেলি এটা দেখবেন। আমাদের এই রিভিউ কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে উনাকে আমরা মনোনীত করেছি। সিআইডি রিপোর্টে প্রাথমিকভাবে যাদের নাম এসেছে, ফরাসউদ্দিন সাহেবের রিপোর্টে যাদের নাম এসেছে-তাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক কী ব্যবস্থা নিয়েছে এটা আমরা জানতে চেয়েছি। ব্যবস্থা কী নিতে হবে সেটাও বলেছি, সে বিষয়ে এখানে কিছু বলতে চাচ্ছি না।”

আসিফ নজরুল বলেন, “ওই সময় যে লিগ্যাল ফার্মকে কাজ দেওয়া হয়েছিল, সেই ফার্মের সঙ্গে বিগত সরকারের আমলে সরকারের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সিনিয়র একজন আইনজীবী জড়িত ছিলেন। এই কাজ দেওয়ায় লাখ লাখ, কয়েক দিন আগে ৮ লাখ ডলার পে করা হয়েছে। তাদের সাথে শুধু ই-মেইল আদান-প্রদান করতে টাকা দিতে হয়। এ ফার্মটাকে কেন বাছাই করা হয়েছিল, এত টাকার বিনিময়ে এই ফার্ম বাছাই করার পেছনে সরকারের ঘনিষ্ঠ আইনজীবীর কী রোল ছিল, কোনো আর্থিক অনিয়ম হয়েছিল কি না এবং অস্বাভাবিকতা আছে কি না সেটা আমরা খতিয়ে দেখব।”

তিনি বলেন, “আমরা আরেকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সিআইডির যে তদন্তটি ম্যাচিউড পর্যায়ে রয়েছে, এই তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো স্টেপস নিলে সেটা নিউইয়র্কে যে বিচারটা হচ্ছে সেটার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে কি না। আইনগতভাবে ঠিক আমাদের কী করণীয় সেটা পরীক্ষা করে দেখার জন্য আমরা ড.

কামাল হোসেনের যে ফার্ম আছে ওনার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করবো। ওনাদের পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা এই কমিটি দুই সপ্তাহ পরে রবিবার মিটিংয়ে বসব। আমাদের তিন মাসের যে সময় দেওয়া হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করবো বলে আশাবাদী।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কতজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে-জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা তো ফরাসউদ্দিনের রিপোর্টে অনেকের নাম পাবেন। আরো বেশ কয়েকজন ছিল, তাদের নাম বিভিন্ন রিপোর্টে আসছে।”

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ভ উ কম ট র ন উপদ ষ ট সরক র র আম দ র কর র প তদন ত স আইড

এছাড়াও পড়ুন:

মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিল র‍্যাব, চায় সাইবার ইউনিট

অপরাধের ধরন বদলে যাচ্ছে। অভিনব কৌশলে সক্রিয় সাইবার অপরাধীরা। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলা করা নতুন চ্যালেঞ্জ। এ জন্য স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট চেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার কর্মপরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। সেখানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), র‍্যাবসহ একাধিক ইউনিট একুশ শতকের জটিল অপরাধ ও তা নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির বিষয়টি সামনে আনে। গতকাল পুলিশের যে ইউনিটগুলো পরিকল্পনা তুলে ধরেছে, তা হলো হাইওয়ে পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), নৌ পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), শিল্প পুলিশ, র‍্যাব, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট, রেলওয়ে পুলিশ ও সিআইডি।

কীভাবে প্রত্যন্ত এলাকার ভুক্তভোগী র‍্যাবের সহযোগিতা পেতে পারেন, সে বিষয়টি উপস্থাপন করেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি দ্রুত গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থার ওপর জোর দেন। র‍্যাবের জন্য আলাদা একটি সাইবার ইউনিটের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। র‍্যাব জনবান্ধব হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিজি বলেন, ‘কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও মানবাধিকার বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ র‌্যাব। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে তদন্ত সেলকে শক্তিশালী করা হয়েছে। একটি মানবাধিকার সেলও গঠন করা হয়েছে।’
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত সূত্রের মতে, র‍্যাব ডিজির উপস্থাপনায় মূলত বাহিনীর অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিআইডি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়। সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি (ভারপ্রাপ্ত) গাজী জসীম অনুষ্ঠানে জানান, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী মামলার অনুসন্ধানে সিআইডি বিশেষ টিম গঠন করেছে। সাবেক মন্ত্রী, প্রভাবশালীদের সন্দেহজনক সম্পদের উৎস ও প্রকৃতি নিয়ে নিবিড়ভাবে চলছে তদন্ত। এস আলম, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, নাবিল, ইউনিক, সিকদার গ্রুপসহ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এ সময় প্রায় ৫ হাজার ৮০০ শতাংশ জমি ও হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ শনাক্ত করা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের একটি মামলায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

সিআইডির উপস্থাপনায় আরও বলা হয়, ফরেনসিক শাখা দিন দিন অপরাধ বিশ্লেষণের নির্ভরযোগ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। জনবল, সরঞ্জাম এবং অর্থের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি সিআইডিতে আছে কাঠামোগত ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ। কোনো জেলা ইউনিটে একটিও অপারেশনাল যানবাহন নেই। এ ছাড়া অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অনিয়মিত বদলি আতঙ্ক রয়েছে। সাইবার পুলিশ সেন্টারে রয়েছে সরঞ্জামের অভাব। ফরেনসিক ল্যাবে সফটওয়্যারের জন্য বাজেট-স্বল্পতার কথা তুলে ধরেন তারা।

হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়। মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে মহাসড়কের সিসিটিভি থেকে হাইওয়ে পুলিশ ডিজিটাল অটো ফাইন সিস্টেম, ট্রাফিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, ক্লোন নাম্বারপ্লেট শনাক্ত, হাইস্পিড ডিটেকশন করে থাকে।

এর আগে মঙ্গলবার পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পক্ষ থেকে তাদের কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারায় তালিকাভুক্ত ব্যক্তিকে ডিটেনশনে (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনা বিচারে আটক রাখা) নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সে জন্য তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ডিটেনশনে নেওয়া উচিত। সরকারের অনুমতি পেলে এসবির পক্ষ থেকে তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিস্তারিত জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। ডিটেনশনে নেওয়ার জন্য যাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তাদের কেউ কেউ পেশাদার অপরাধী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ