ময়মনসিংহে বর্ণাঢ্য র্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বর্ষবরণ উদযাপন
Published: 14th, April 2025 GMT
পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে ময়মনসিংহে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকালে জেলা প্রশাসন ও বাংলা ১৪৩২ বর্ষবরণ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে পৃথক পৃথক বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। এছাড়াও বিভিন্ন দল-মত ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
বর্ষবরণ সফল করতে বিভাগীয় নগরী ময়মনসিংহে সকাল ৮ টায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরীর ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয় থেকে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। এদিকে নববর্ষ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া প্রাঙ্গণ থেকে আরেকটি বিশাল বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রা দুটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শিল্পচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কের বৈশাখী মঞ্চে গিয়ে শেষ হয়।
র্যালি শেষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ, অতিরিক্ত রেঞ্জ ডিআইজি আবু বকর সিদ্দিক, জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম, পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম, সিভিল সার্জন ডা.
র্যালি শেষে উপস্থিত সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ বেলুন উড়িয়ে শুভ নববর্ষের ঘোষণা করেন। শোভাযাত্রা দেখতে রাস্তার দু’ধারে শতশত উৎসুক নগরবাসী ভিড় জমান। পরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন উদ্যানে বৈশাখী মঞ্চে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এছাড়াও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের উদ্যোগে পদযাত্রা ও নানা আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। সকালে উপস্থিত ক্লাব সদস্যদেরকে বিনামূল্যে পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিকেলে সার্কিট হাউজ মাঠে বাংলার ঐতিহ্য ঘুড়ি উড়ানো, লাঠি খেলা, রশি টানাটানি ও হা-ডু-ডু প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ময়মনস হ অন ষ ঠ ত অন ষ ঠ ন
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভয়ে’ সরকারি তালিকায় নাম না তোলা ইমরান চলে গেলেন নীরবে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ময়মনসিংহের নান্দাইলের ইমরান হোসেনের (২৬) বুক, পিঠ, চোখসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছররা গুলি বিদ্ধ হয়েছিল। গতকাল শুক্রবার তিনি অনেকটা নীরবেই চলে গেলেন। আজ শনিবার তাঁকে দাফন করা হয় নিজ গ্রামে।
পরিবারের সদস্যরা বলছেন, আওয়ামী লীগ কখনো ফিরে এলে সমস্যা হবে—এমন আশঙ্কায় সরকারিভাবে কোনো চিকিৎসা নেননি কিংবা সরকারি তালিকাভুক্তও হননি ইমরান।
ইমরানের মারা যাওয়ার খবর পেয়ে শনিবার গ্রামের বাড়িতে যান এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আশিকিন আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইমরান জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দেখে আমরা নিশ্চিত হয়েছি; কিন্তু সরকারি কোনো তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। আন্দোলনে আহত হওয়ার বিষয়টিও ইমরান কাউকে বলেননি। এখন আমরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেব।’
ইমরান হোসেনের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুশলী ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামে। স্বজনেরা জানান, স্ত্রী ও ১৮ মাসের সন্তান নিয়ে গাজীপুরের তারগাছ এলাকায় বসবাস করতেন ইমরান। প্রায় সাত বছর ধরে তিনি পাশের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ২৮ জুলাই গাজীপুরের তারগাছ এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। পরে তাঁকে উদ্ধার করে পাশের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গোপনে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়ে শরীর থেকে বেশ কিছু ছররাগুলি বের করলেও যন্ত্রণা কমছিল না। গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে গাজীপুরের ভাড়া বাসায় বুকে ব্যথা অনুভব করলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
ইমরানের স্ত্রী রিতা আক্তার জানান, জুলাই আন্দোলনে তাঁর স্বামী আহত হলেও ভয়ে সরকারি তালিকায় নাম তোলেননি। টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও করানো যায়নি। তাঁর সঙ্গে যাঁরা আহত ও নিহত হয়েছিলেন, তাঁরা সবাই তালিকাভুক্ত হওয়া ছাড়াও সরকারের সব ধরনের অর্থ বরাদ্দ পেয়েছেন; কিন্তু তাঁর স্বামীর কেউ খবর নেয়নি।
নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ফয়জুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইমরান কোথাও তালিকাভুক্ত হননি। তবে তাঁর চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র দেখে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি তিনি আন্দোলনে আহত। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমাদের পক্ষে থেকে পরিবারটিকে যে ধরনের সহযোগিতা করা দরকার তা করা হবে।’
ইমরানকে জুলাই আন্দোলনের শহীদ উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে পোস্ট করেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা শাখার সদস্যসচিব মো. আলী হোসেন বলেন, ‘ইমরান আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন সে ছবি আমাদের কাছে রয়েছে। অনেকটা নীরবে বিনা চিকিৎসায় একজন জুলাইযোদ্ধা আজ মারা গেছেন; কিন্তু সরকারি কোনো তালিকায় তাঁর নাম নেই।’