পাহাড়ে শণ কাটতে গিয়েছিলেন যুবক, অপহরণ করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি
Published: 15th, April 2025 GMT
কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়ার গহিন পাহাড়ি এলাকা থেকে মোহাম্মদ দেলোয়ার (২৫) নামের এক যুবককে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। তাঁর মুক্তির জন্য ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার। গতকাল সোমবার এ ঘটনা ঘটে।
দেলোয়ার উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবনিয়া এলাকার মৃত আবদুল করিম মিস্ত্রির ছেলে। তাঁকে অপহরণের বিষয়টি বাহারছড়ার ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফরিদ উল্লাহ প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
ইউপি সদস্য ফরিদ উল্লাহ বলেন, গতকাল সকালে এলাকার দুই বাসিন্দা আবদুস সালাম (৫০) ও হাসান আহমদের (৪৫) সঙ্গে গহিন পাহাড়ে শণ কাটতে যান দেলোয়ার। সেখানে এক দল সশস্ত্র সন্ত্রাসী তাঁদের ধাওয়া দেন। দুজন এ সময় পালিয়ে রক্ষা পেলেও সন্ত্রাসীরা দেলোয়ারকে অপহরণ করে নিয়ে যান। এরপর তাঁর স্ত্রী নুর নাহার বেগমের মুঠোফোনে কয়েক দফা কল করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে আসছেন অপহরণকারী ব্যক্তিরা। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
ফরিদ উল্লাহ আরও বলেন, পাহাড়ে থাকা কিছু সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার লোকজনকে অপহরণ করে আসছেন। মুক্তিপণ আদায়ের জন্যই অপহরণ করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি নিয়ে অতিষ্ঠ।
দেলোয়ারের স্ত্রী নুর নাহার বেগম প্রথম আলোকে বলেন, আজ মঙ্গলবার সকালেও অপহরণকারী ব্যক্তিরা তাঁকে ফোন করেছেন। দেলোয়ারকে মারধর ও নির্যাতন করে তাঁর চিৎকারের শব্দ মুঠোফোনে শুনিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছেন অপহরণকারী ব্যক্তিরা। এত টাকা তাঁর পক্ষে দেওয়া কখনো সম্ভব নয়।
জানতে চাইলে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক শুভ রঞ্জন সাহা বলেন, ‘এক ব্যক্তিকে অপহরণের বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। এরপরও পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ১০ ল খ ট ক ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
ছয় বছর আগে চট্টগ্রাম থেকে ‘অপহরণ’, ফেনী থেকে মিলল কাস্টমস কর্মকর্তার লাশ
২০১৯ সালের ৭ মে চট্টগ্রাম থেকে ‘অপহৃত’ হয়েছিলেন কাস্টমস কর্মকর্তা আবদুল আহাদ (৪৬)। এরপর তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরিবারের দাবি, আবদুল আহাদের মুক্তির জন্য অপহরণকারীদের মুক্তিপণও দিয়েছিল তারা। তবে ফেরত পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত ছয় বছর পর গতকাল বুধবার আহাদের মরদেহ মিলেছে ফেনীতে।
পুলিশ জানায়, গতকাল দুপুরে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে থেকে আহাদের মরদেহ উদ্ধার হয়। পুলিশের ধারণা ছিল, আহাদ দিনমজুরের কাজ করেন। তবে তাঁর পকেটে থাকা একটি বেসরকারি ব্যাংকের হিসাব নম্বর থেকে আসল পরিচয় পাওয়া যায়। এরপর পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পুলিশ পরিবারকে খবর দেয়।
নিহত ব্যক্তির পরিবার সূত্র জানায়, আবদুল আহাদ মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার ভূইগাঁও ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের মো. ইমানি মিয়ার ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও দুই কন্যাসন্তান রয়েছে। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি একটি কলেজের প্রভাষক ছিলেন। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে তিনি প্রথমে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শেষে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যোগ দেন। সেখান থেকে তিনি নিখোঁজ হন।
নিহত আহাদের ছোট বোন নাঈমা নাসরিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাই চট্টগ্রামে একাই থাকতেন। সেখান থেকেই নিখোঁজ হন। ২০১৯ সালের ৭ মে ভোরে তাঁর ভাবিকে মুঠোফোনে জানানো হয় ভাইকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহরণকারীদের তাঁর ভাবি মুক্তিপণ হিসেবে দুই লাখ টাকাও দেন। তবে তাঁর ভাইকে ফেরত পাওয়া যায়নি।
নাঈমা নাসরিন দাবি করেন, তাঁর ভাই আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। তবে দলীয় কোনো পদে ছিলেন না। তাঁর ভাইকে কেন অপহরণ করা হয়েছে, কেন গুম করা হয়েছে তাঁরা জানেন না। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা।
লাশ ফেনীতে কীভাবে এল, জানে না পুলিশ
নিহত আবদুল আহাদের ফেনীর ছাগলনাইয়া কীভাবে এসেছে, তা আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি এত দিন আহাদ কোথায় ছিলেন, এর কোনো ব্যাখ্যাও তাঁরা দিতে পারেনি। পুলিশের দাবি, আহাদের শরীরে কোনো ধরনের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত কোনো কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে তাদের প্রাথমিক ধারণা।
নিহত আহাদের ভাগনে মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অপহরণের ঘটনার পর তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন। সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। তবে তাঁর মামার সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার শাস্তি চান।
জানতে চাইলে ছাগলনাইয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহ আলম বলেন, নিহত কাস্টম কর্মকর্তার ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল বাশার বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে ছয় বছর আগে অপহরণের যে বিষয়টি জানানো হচ্ছে, সে বিষয়ে পুলিশ খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে এটিকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা তাঁরা নেবেন।