শ্রীপুর পৌরসভার মাধখলা গ্রামের মুদি দোকানি হাফেজ আজহারুল ইসলাম। ভালোই চলে তার বেচাবিক্রি। হাফেজ আজহারুল ইসলাম বিয়ে করেন পার্শ্ববর্তী কেওয়া মধ্যপাড়া গ্রামের হাজী ইব্রাহীমের মেয়ে আফসানাকে। সংসার জীবনেও কুরআন-হাদিসের নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করেন আজহার। স্ত্রীর কষ্ট হয় কিংবা তাঁর সঙ্গে এমন আচরণ করেন না; যা বারণ করেছে ইসলাম। কিছুটা মান-অভিমান থাকলেও ভালোই চলতে থাকে নির্মোহ আজহার-আফসানার সংসার।

তবে ২ বছর ৪ মাস আগে বিয়ের পিঁড়িতে বসা আজহার যখন বুঝতে পারলেন, তাদের ঘরে আসতে যাচ্ছে নতুন মেহমান, তখন আরেকটু নড়েচড়ে বসেন। নিতে থাকেন স্ত্রী আফসানার বিশেষ যত্ন। ভারী কাজ নিজেই করতে থাকেন আজহার।

ধর্মীয় গোঁড়ামিকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে স্ত্রীকে নিয়মিত চেকআপে রাখেন ডাক্তারের। স্ত্রীর কাঁধে হাত রেখে জোগাতে থাকেন সাহস। এরই মধ্যে হঠাৎ ব্যথা ওঠে আফসানার। যদিও ডাক্তার বলেছিলেন, ১৪ এপ্রিলের আগে-পরে তাদের ঘর আলো করে আসতে পারে অতিথি। কিন্তু হঠাৎ এমন ঘটনার মুখোমুখি হতে হবে ভাবতে পারেনি আজহার। তবে মানসিকভাবে কিছুটা প্রস্তুত থাকায় সোমবার শেষ রাতে প্রসব বেদনায় ছটফট করতে থাকা আফসানাকে দ্রুত নিয়ে যান হাসপাতালে। বাড়ি থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে মাওনা চৌরাস্তা মাদার্স কেয়ার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পরের সময়টা যেন ঘোরের মধ্যেই কাটতে থাকে তাঁর।

হাসপাতালে নেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ডা.

জহিরুন্নেসা রেণু হাজির হন আফসানার বেডে। দ্রুত প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে নরমাল ডেলিভারির প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ওদিকে আজহার পড়তে থাকেন পবিত্র কুরআনের আয়াত।

রাত গড়িয়ে ভোরের আলো ফুটতে থাকে। ভোরের পিনপিনে বাতাস জানালা গলিয়ে এসে লাগে আজহারের গায়ে। নড়েচড়ে ওঠেন তিনি। সময় থমকে আছে যেন! পশ্চিম আকাশে সূর্য তখনও উঁকি দেয়নি। এরই মধ্যে আজহারের কানে পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র কান্নার শব্দ আসে। তাঁর বুক থেকে যেন হাজার মণ ওজনের পাথর নেমে যায়। ডা. জহিরুন্নেসা রেণু গোলাপি রঙের একটি টাওয়েলে মুড়িয়ে একটা সুন্দরতম বাচ্চা এনে তুলে দেন হাফেজ আজহারের কোলে! মেয়েকে কোলে নিয়েই অঝোরে কাঁদতে থাকেন সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানের বাবা। কাঁদতে কাঁদতেই ডান হাতে কান রেখে আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে কাঁপিয়ে তোলেন পরিবেশ। মেয়ের কানে যায় বাবার আজান। পাশেই আঁচলে মাথা ঢাকেন দাদি খোদেজা বেগম ও নানি শেফালী আক্তার। আজান শেষ হতেই পূর্ব আকাশে উঁকি দিল বাংলা বছরের প্রথম সূর্য। সেই সঙ্গে আজহার-আফসানার জীবনও আলোকিত করতে এলো প্রথম সন্তান। ‘আকিকা দিয়ে আমার সন্তানের নাম রাখা হবে। মেয়েটিকে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করাব। আলেমা বা হাফেজা বানাব। আমার এ সন্তানের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’ আজহারুল ইসলাম যখন এসব বলছিলেন, তখনও তাঁর চোখের কোণে অশ্রু। এই আনন্দ অশ্রু যেন স্বর্গ থেকেই নেমে এসেছে তাঁর চোখের কোণে!

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আফস ন র ইসল ম আজহ র

এছাড়াও পড়ুন:

অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে, দুই বন্ধু নিহত

রাজধানীতে অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে পড়ে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার বনশ্রীর এফ ব্লক সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিন মতিঝিলের ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেট কারের চাপায় আব্দুল মতিন (৩৬) নামে এক রিকশাচালক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া পাঁচ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন।

বনশ্রীতে নিহত দু’জন হলেন– আব্দুল্লাহ আল নোমান (২১) ও পাভেল মিয়া (২০)। নোমানের মামা আব্দুল হামিদ জানান, নিহতরা পরস্পর বন্ধু। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে ঢাকায় ঘুরতে যাওয়ার সময় দু’জন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। তারা রূপগঞ্জের নামারমুসুরি এলাকায় থাকতেন। নোমান মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পাভেল তেমন কিছুই করতেন না। এ ঘটনায় নোমানের পরিবারের পক্ষ থেকে সড়ক নিরাপত্তা আইনে খিলগাঁও থানায় মামলা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী মোটরসাইকেল চালক টিপু সুলতান বলেন, সড়কটি যানবাহনে ঠাসা ছিল। এ কারণে গাড়ি চলছিল ধীরগতিতে। হঠাৎ একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পাশ থেকে এসে নোমানের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে দু’জন সড়কের ওপর ছিটকে পড়েন। পরে মিয়ামি পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দেয়। নোমান ঘটনাস্থলেই মারা যান। মোটরসাইকেল আরোহী পাভেলকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফরাজী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

খিলগাঁও থানার ওসি দাউদ হোসেন জানান, বাসটি জব্দ করা হয়েছে। চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছে। অটোরিকশা চালককেও আটক করা যায়নি। মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেটকারের চাপায় প্রাণ হারান রিকশাচালক আব্দুল মতিন। তাঁর বাড়ি রংপুরে। তিনি মুগদার মাণ্ডা এলাকায় একটি রিকশার গ্যারেজে থাকতেন। মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাইমিনুল ইসলাম জানান, প্রাইভেটকারের চালক আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। ময়নাতন্ত শেষে পরিবারের কাছে মতিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর থানার সিভিল এভিয়েশন কোয়ার্টার গেটের (সি-টাইপ) সামনের ফুটপাত থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। বিমানবন্দর থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই যুবকের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।

সড়কে ঝরল আরও ছয় প্রাণ
খুলনার ডুমুরিয়ায় তেলবাহী লরির চাপায় দুই নারী নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের নরনিয়া মহিলা মাদ্রাসার কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন– রোকেয়া বেগম (৫৫) ও রশিদা বেগম (৪৫)।

গতকাল সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাছে সেলফি পরিবহনের বাসের ধাক্কায় শামসুল হক নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরে গণস্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। সাভার থেকে অবসরের পাওনাদি নিয়ে ফেরার পথে তিনি প্রাণ হারান। শামসুলের বাড়ি চাঁদপুরে। ঘটনার পর গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মচারীরা সেলফি পরিবহনের পাঁচটি বাস আটক করেন।

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে নয়ন মিয়া (৩৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন। গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের রতনদী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে শান্ত ইসলাম (১৮) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। গতকাল উপজেলার কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শান্ত মথুরাপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের রিপন মণ্ডলের ছেলে। 

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী বাজারে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে ছিটকে পড়ে স্বপন শীল নামে এক স্যালুন ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র বিলি করতে বেরিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ