নাটোরের লালপুর উপজেলার এক ফসলি মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছিল একটি বাগডাশ বা গন্ধগোকুল। কিন্তু স্থানীয় যুবকেরা প্রাণীটির ঘুরে বেড়ানোতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। জাল দিয়ে এটিকে আটক করে খাঁচাবন্দী করে।  

বুধবার (১৬ এপ্রিল) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে উপজেলার দুয়ারিয়া ইউনিয়নের চাত্রার মাঠ থেকে গন্ধগোকুলটি আটক করা হয়।

রাজশাহী বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির জানান, বাগডাশ বা গন্ধগোকুলকে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) পৃথিবীর বিপন্নপ্রায় প্রাণীর তালিকাভুক্ত করেছে।

স্থানীয় যুবক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, একটি গন্ধগোকুল কয়েক দিন ধরে মাঠের ফসলের মধ্যে ঘোরাঘুরি করছিল। কয়েকজন যুবক প্রাণীটি দেখতে পেয়ে মাছ ধরার জাল দিয়ে একটি ফসলি জমি ঘিরে ফেলে। একপর্যায়ে গন্ধগোকুলটি ওই জালে আটকা পড়ে। জাল থেকে ছাড়ানোর সময় গন্ধগোকুলের দেওয়া আঁচড়ে এক তরুণ আহত হয়। পরে প্রাণীটি গ্রামের ছেলেরা খাঁচাবন্দী করে।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মী সাইফুল ইসলাম জানান, বাগডাশ বা গন্ধগোকুল হিংস্র নয়। বিরক্ত না করলে তারা কারও ওপর আক্রমণ করে না। বিপন্নপ্রায় এ প্রাণীটি ফসলি মাঠে লুকিয়ে থাকে। তারা ছোট ছোট প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে।

খবর পেয়ে লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান গন্ধগোকুলটির নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন এবং রাজশাহী বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগকে খবর দেন। খবর পেয়ে সেখানকার কর্মীরা ঘটনাস্থলে যান। তারা প্রাণীটি সংরক্ষিত বনে ছেড়ে দেবেন বলে জানান। 

ইউএনও বলেন, “গন্ধগোকুলটিকে যেন কেউ মেরে না ফেলে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

ঢাকা/আরিফুল/টিপু 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি

ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।

শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।

ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।

ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।

কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলা

শিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’

শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি