‘বইসেতু’ বানিয়ে বাসিন্দারাই নতুন দোকানে নিলেন বই
Published: 17th, April 2025 GMT
‘বইসেতু’ দিয়ে চলে যাচ্ছে একের পর এক বই। এভাবে ওই সেতু দিয়ে এক দোকান থেকে আরেক দোকানে চলে গেছে ৯ হাজার ১০০টি বই। বইসেতু আবার কী, এটা কীভাবে তৈরি হয়েছে, এটাই ভাবছেন তো?
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের একটি ছোট্ট শহরের প্রায় ৩০০ মানুষ একজনের পর একজন দাঁড়িয়ে এই সেতু তৈরি করেন।
একটি বইয়ের দোকান পুরোনো জায়গা থেকে এক ব্লক দূরে একটি নতুন ভবনে সরে গেছে। পুরোনো দোকান থেকে বই নতুন দোকানে সরিয়ে নিতে এগিয়ে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
গত রোববার স্থানীয় বাসিন্দারা চেলসি শহরের একটি হাঁটাপথের দুপাশে দুই সারিতে দাঁড়িয়ে হাতে হাতে বইগুলো পুরোনো দোকান থেকে সরাসরি নতুন দোকানের তাকে ঠিকঠাকমতো সাজিয়ে দেন।
দোকানমালিক মিশেল টাপলিন বলেন, ‘এটি বই সরানোর (এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া) বাস্তবিক পথ ছিল, একই সঙ্গে সবার এটির অংশ হওয়ার উপায়ও ছিল। তাঁরা একজন আরেকজনের কাছে বই দেওয়ার সময় বলছিলেন, “আমি এটা পড়িনি”, “এটা খুব ভালো বই” ইত্যাদি।’
মিশেল টাপলিন জানুয়ারি মাসে তাঁর বইয়ের দোকান স্থানান্তরের ঘোষণা দেন।
মঙ্গলবার মিশেল বলেন, শহরে এটি তুমুল আগ্রহ-উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। অনেক মানুষ সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছেন।
সবার প্রচেষ্টায় মাত্র দুই ঘণ্টায় বই সরানোর কাজ শেষ হয়ে যায় বলেও জানান মিশেল। দোকান থেকে বই সরিয়ে নেওয়ার জন্য কোনো কোম্পানিকে ভাড়া করলে বই বাক্সবন্দী করা, সেগুলো নিয়ে নতুন দোকানে গিয়ে বাক্স খুলে বই সাজাতে আরও অনেক বেশি সময় লাগত।
বই বহনের জন্য তৈরি করা মানবসেতুর লোকজন শুধু এক দোকান থেকে আরেক দোকানে বই নিয়েই যাননি, উপরন্তু নতুন দোকানে ‘বর্ণানুক্রমে’ বইগুলো তাকে সাজিয়েও দিয়েছেন।
এক বছরের সামান্য বেশি সময় ধরে ওই বইয়ের দোকানে কাজ করেন কেছি ফ্রিস। চেলসিতে ছোটবেলা থেকে বেড়ে উঠেছেন ৩২ বছর বয়সী এই নারী। তিনি বলেন, ‘এটি খুবই ছোট শহর এবং এখানকার বাসিন্দারা একে অপরের খেয়াল রাখেন। যেখানেই যাবেন, আপনি চেনা কাউকে না কাউকে দেখতে পাবেন অথবা কেউ না কেউ আপনাকে চিনতে পারবেন এবং আপনার কুশল জিজ্ঞাসা করবেন।’
ফ্রিসের কাছে তাঁর শহর ও শহরের মানুষেরা সত্যিই বিশেষ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নত ন দ ক ন
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ