মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার। পুড়ে যাওয়া ঘরের জায়গায় নতুন করে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে। এরই মধ্যে আর্থিক সহায়তাও করেছে জেলা প্রশাসন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক মানোয়ার হোসেন মোল্লা মানবেন্দ্রর বাড়িতে গিয়ে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সময় এ ঘোষণা দেন।

ভাস্কর্যশিল্পীর পরিবার, জেলা প্রশাসন এবং সদর থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এবার পয়লা বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মোটিভ তৈরির অভিযোগে ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষকে ফেসবুকে হুমকি দিয়ে আসছিল দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিরাপত্তার জন্য গত মঙ্গলবার মানবেন্দ্র সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর ওই দিন (মঙ্গলবার) দিবাগত রাত তিনটার দিকে তাঁর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে গতকাল বুধবার ভোর চারটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় গতকাল ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষ বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা করেন।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মানোয়ার হোসেন মোল্লা.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রিকশাচালককে পিটিয়েও পার পেয়ে গেলেন সেই সমাজসেবা কর্মকর্তা

রিকশাচালককে পেটানোর পরও পার পেয়ে গেলেন আলোচিত সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদ হাসান রাসেল। সমাজসেবা মন্ত্রণালয় তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ।

শুধু তাই-ই নয়, বরখাস্ত থাকার সময়টি কর্মকাল হিসেবে গণ্য করে তাকে বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।

আরো পড়ুন: রিকশাচালককে জুতাপেটা করলেন সমাজসেবা কর্মকর্তা

আরো পড়ুন:

তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন

রাবি ছাত্রদলের কমিটি: সভাপতি-সম্পাদকসহ অধিকাংশেরই ছাত্রত্ব নেই

রবিবার (২৭ জুলাই) সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-সচিব মোহাম্মদ আবদুল হামিদ মিয়ার সই করা এক প্রজ্ঞাপনে জাহিদ হাসান রাসেলকে বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়। তাকে বুধবারের (৩০ জুলাই) মধ্যে সেখানে যোগ দিতেও বলা হয়। 

জাহিদ হাসান রাসেল রাজশাহীর পবা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ২ ফেব্রুয়ারি তিনি এক রিকশাচালককে নির্দয়ভাবে পেটান। এর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে।

আরো পড়ুন: রিকশাচালককে জুতাপেটা করা সমাজসেবা কর্মকর্তা বরখাস্ত

জাহিদ হাসান রাসেলের স্ত্রী একজন বিচারক। রাজশাহীতে ঘটনাটি ঘটেছিল জাজেস কোয়ার্টারের সামনেই। ভাড়া ঠিক করে না উঠে কম টাকা দেওয়ায় রিকশাচালক তাকে ‘লাট সাহেব’ বলেছিলেন। এতেই মেজাজ হারিয়ে ওই রিকশাচালককে জুতাপেটা করেন তিনি। এতেও তার মনের ক্ষোভ মেটেনি। গাড়ির ব্যাকডালা থেকে লাঠি বের করে তিনি রিকশাচালককে পেটান। ওই ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। 

গত ৩ ফেব্রুয়ারি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-৫ (প্রশাসন ও শৃঙ্খলা) শাখার এক প্রজ্ঞাপনে জাহিদ হাসান রাসেলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ঘটনা তদন্তে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) শহীদুল ইসলামকে তদন্তকারী কর্মকর্তাও নিযুক্ত করা হয়। তদন্ত শেষে শহীদুল ইসলাম সমাজসেবা অধিদপ্তরে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর ভিত্তিতে গত ২২ জুলাই সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. মহিউদ্দিনের সই করা প্রজ্ঞাপনে দেখা গেছে, জাহিদ হাসান তার অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য অনুতপ্ত ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা তার দ্বারা আর হবে না মর্মে লিখিত অঙ্গীকারনামাও দিয়েছেন। রিকশাচালকের সঙ্গে ‘ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির কারণে’ তিনি ক্ষমাও প্রার্থনা করেন।

জাহিদ হাসান রাসেল তার লিখিত বক্তব্যে জানান, ‍ঘটনাটি তার জীবনকে বদলে দিয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি নিজেকে শুধরে নিয়েছেন। এ শোধরানোর মধ্য দিয়ে তিনি বাকি জীবন অতিবাহিত করতে পারবেন। তাই তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা সমীচীন মর্মে মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। এ জন্য সাময়িক বরখাস্তের আগের আদেশ প্রত্যাহার করা হলো এবং তার সাময়িক বরখাস্তকাল কর্মকাল হিসেবে গণ্য করা হলো।

জাহিদ হাসান রাসেল পবায় থাকাকালে নানা বিতর্কিত ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। তার দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে গত বছরের ৩১ মার্চ উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শিমুল বিল্লাহ সুলতানা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে জাহিদ হাসান রাসেলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। 

শিমুল জানান, জাহিদ প্রায়ই অশোভন আচরণ করতেন। উপজেলা পরিষদ চত্বরে তিনি সবার সামনে অকথ্য ও অশালীন আচরণ করেন।

এর আগে দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে ২০২৩ সালের ১৬ মে পবা উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা শারমিন আফরোজ রাজশাহী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের তৎকালীন উপ-পরিচালক হাসিনা মমতাজের কাছে জাহিদ হাসান রাসেলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযোগের তদন্তও হয়নি।

জাহিদ হাসান রাসেলের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শরীফবাড়ি গ্রামে। সেখানে তিনি ফাতেমা ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন করেছেন। এই সংগঠনের জন্য তিনি নিয়ম ভেঙে পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভা থেকে সরকারি ডাস্টবিন নিয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে। পৌরসভার ওই ডাস্টবিন বিতরণ সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি ছিলেন জাহিদ হাসান রাসেল। 

জাহিদ হাসান রাসেলের বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলায় যোগদানের কথা ছিল আজ। যোগ দিয়েছেন কি না জানতে দুপুরে ফোন করা হয় তাকে। সাংবাদিক পরিচয় দিলেই তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

রাজশাহী বিভাগীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ মোস্তাক হাসান জানান, জাহিদ হাসানের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি তিনি জানেন। তিনি দুপচাচিয়ায় যোগ দিয়েছেন কি না তা জানেন না।

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ