আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এখন আর নিরাপদ দেশ নয়
Published: 17th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জীবন যে অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকিতে ডুবে আছে, তা কোনোভাবেই হালকা করে দেখার সুযোগ নেই।
২০০৩ সালে কলকাতা থেকে উত্তর নিউইয়র্কের একটি ছোট লিবারেল আর্টস কলেজে স্নাতক পড়তে যাওয়ার সময় আমার প্রথম অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তখন মার্কিন নেতৃত্বে ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ তুঙ্গে। আমার নিউইয়র্ক পৌঁছানোর কয়েক মাস আগেই মার্কিন বাহিনী ইরাক আক্রমণ করেছিল। ক্যাম্পাসে ‘অশুভ অক্ষশক্তি’-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে উগ্র জাতীয়তাবাদ, ক্লাসে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনার অভাব, বিমানবন্দরে ‘এলোমেলো’ নিরাপত্তা তল্লাশি বা মিডিয়ায় ইসলামভীতি ও বর্ণবিদ্বেষ—সব মিলিয়ে খুব দ্রুতই বুঝতে পেরেছিলাম, আমার মতো দেখতে কাউকেই ‘মুক্তির দেশে’ স্বাগত জানানো হয় না।
এর পরের বছরগুলোতেও যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের অবস্থার উন্নতি হয়নি। অনেক মার্কিনের চোখে তাঁরা অবিশ্বস্ত, অবাঞ্ছিত বিদেশি। তবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এই অনিশ্চয়তা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র শুধু অসহিষ্ণুই নয়, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য স্পষ্টতই বিপজ্জনক।
ট্রাম্প আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জীবনকে আগের চেয়েও কঠিন করেছেন। তিনি নির্বাচনী প্রচারে বলেছিলেন, মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘মার্ক্সবাদী ও চরম বামপন্থী’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিন সমর্থকদের তিনি ঘৃণা করেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরেই তিনি ঘোষণা দেন, পুনর্নির্বাচিত হলে ফিলিস্তিন বিক্ষোভে জড়িত ‘উগ্র, মার্কিনবিরোধী, ইহুদিবিদ্বেষী বিদেশি’ শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করবেন।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তিনি ফিলিস্তিনসমর্থক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের টার্গেট করতে শুরু করেন। এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক মাহমুদ খলিল। ফিলিস্তিন বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের মধ্যে মধ্যস্থতা করা খলিল গ্রিনকার্ডধারী হওয়া সত্ত্বেও ট্রাম্প প্রশাসন তাঁকে ডিপোর্ট করার চেষ্টা করছে। তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে যে তিনি ‘হামাস-সমর্থক, অমার্কিন’ কর্মকাণ্ডে জড়িত।
২০২৪ সালের মার্চে নিউইয়র্কের বাড়ি থেকে তাঁর গর্ভবতী মার্কিন স্ত্রীর সামনেই আইসিই অফিসাররা তাঁকে গ্রেপ্তার করে লুইজিয়ানার একটি ডিটেনশন সেন্টারে রাখেন।
অন্য একটি ঘটনায় টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী ও তুর্কি নাগরিক রুমেইসা ওজতুর্ককে বোস্টনে মাস্ক পরা পুলিশ অপহরণ করে। তাঁকে ওই একই ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হয়। তাঁর অপরাধ? ইসরায়েল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবি করে টাফটস একটি ডেইলিতে একটি কলাম লিখেছিলেন।
এ ঘটনাগুলো প্রমাণ করে, ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হুমকির মুখে। ফিলিস্তিনি অধিকারের সমর্থন করলেই শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। ফলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য মার্কিন ক্যাম্পাসগুলো এখন আর স্বপ্নের গন্তব্য নয়; বরং ভয় ও অনিশ্চয়তার জায়গা।
জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির পোস্টডক্টরাল স্কলার ও ভারতীয় নাগরিক বাদার খান সুরি এখন টেক্সাসের একটি আইসিই (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) ডিটেনশন সেন্টারে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়েছেন। তাঁকেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের চেষ্টা চলছে। অথচ সুরি কোনো ফিলিস্তিন সংহতি আন্দোলনেও অংশ নেননি। তাঁর অপরাধ বলে মনে করা হচ্ছে, তিনি গাজার হামাস সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আহমেদ ইউসুফের জামাই। তবে ইউসুফ এক দশকের বেশি সময় আগে হামাসের রাজনৈতিক শাখার পদ ছেড়েছেন এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলাকে ‘একটি ভয়াবহ ভুল’ বলে মন্তব্য করেছেন।
এরপর কর্নেল ইউনিভার্সিটির পিএইচডি প্রার্থী মোমোদু তালের ঘটনার কথা বলা যায়। তিনি যুক্তরাজ্য ও গাম্বিয়ার দ্বৈত নাগরিক এবং ফিলিস্তিন সংহতি আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। এরপর মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ তাঁকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা থেকে তিনি আড়ালে চলে যান এবং দুই সপ্তাহের বেশি সময় আত্মগোপনে থাকার পর শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এই ঘটনাগুলো কেবল হিমশৈলের চূড়া। ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যে শত শত আন্তর্জাতিক ছাত্রের ভিসা বাতিল করেছে। কারণ, তাঁরা ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ–সম্পর্কিত পোস্ট দিয়েছিলেন।
১০ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের ১০০টির বেশি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০০-এর বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে এবং এখনো এর কোনো শেষ দেখা যাচ্ছে না। মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ এখন বিদেশি নাগরিকদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করছে এবং যাঁরা ফিলিস্তিন সংহতিমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন বা ট্রাম্প প্রশাসনের ভাষায় ‘ইহুদিবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডে’ অংশ নিয়েছেন, তাঁদের ভিসা ও গ্রিনকার্ড প্রত্যাখ্যান করছে।
এদিকে আমেরিকার শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন এই চাপের সামনে মাথানত করেই চলেছে। তারা যেন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতেই তাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিপদের মুখে ফেলে দিচ্ছে, যাতে ফেডারেল ফান্ডিং বন্ধ না হয়।
আমেরিকার অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যেভাবে ট্রাম্পের দাবির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে, তা পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দেয় যে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশের জায়গা হিসেবে নিজেদের মূল উদ্দেশ্য দেখছে না; বরং এখন তারা এমন এক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, যারা আর সত্যিকার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়; বরং কেবল একটি ব্যবসা—যেখানে একটি পণ্যের (অর্থাৎ কলেজ ডিগ্রি) বিনিময়ে একজন ক্রেতা (অর্থাৎ ছাত্র) টাকা দেন।যেমন কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির কথা বলা যায়। ফিলিস্তিন সংহতি আন্দোলনের সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ‘নিষ্ক্রিয়তা’র অভিযোগ তুলে ট্রাম্প প্রশাসন যখন ৪০০ মিলিয়ন ডলার ফেডারেল তহবিল আটকে দেয়, তখন এই বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত নতিস্বীকার করে। অথচ তাদের নিজস্ব তহবিল প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এরপরও তারা ক্যাম্পাসে আন্দোলন ঠেকাতে নীতিমালা পরিবর্তন করে, নিরাপত্তা জোরদার করে এবং ফিলিস্তিন সংহতি ক্যাম্প বা প্রতিবাদ যেন আর না হয়, সে ব্যবস্থা নেয়।
এ ছাড়া ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করে, কলাম্বিয়ার মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকাবিষয়ক স্টাডিজ বিভাগকে পাঁচ বছরের জন্য ‘একাডেমিক রিসিভারশিপ’-এর আওতায় আনতে হবে। সাধারণভাবে এই ব্যবস্থা তখনই নেওয়া হয়, যখন কোনো বিভাগ বা প্রোগ্রাম ব্যর্থ হয়ে পড়ে এবং তাকে ‘ঠিক পথে’ ফিরিয়ে আনতে হয়।
ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভাগটির ওপর নজরদারি করতে একজন নতুন সিনিয়র ভাইস প্রভোস্ট নিয়োগ দেয়।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিও একই রকম চাপের মুখে পড়ে। ট্রাম্প প্রশাসন তাদের ফেডারেল ফান্ডিং অব্যাহত রাখতে কয়েকটি দাবি তোলে, যার মধ্যে ছিল ‘পক্ষপাত দূর করা, মতবৈচিত্র্য বৃদ্ধি করা এবং আদর্শিক একচেটিয়া প্রভাব বন্ধ করা’; বিশেষত সেসব বিভাগে যেগুলো ‘ইহুদিবিদ্বেষী হয়রানির’ পরিবেশ তৈরি করছে। যদিও কলাম্বিয়ার মতো নির্দিষ্ট কোনো বিভাগের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে হার্ভার্ড প্রশাসন বুঝে নেয়, তাদের কী করতে হবে।
হার্ভার্ডের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অন্তর্বর্তী ডিন ডেভিড এম কাটলার ফিলিস্তিন বিষয়ে ‘একপক্ষীয়’–এর অভিযোগ তুলে মধ্যপ্রাচ্য স্টাডিজ কেন্দ্রের নেতৃত্ব বরখাস্ত করেন। তিনি বলেন, ফিলিস্তিন বিষয়ে কেন্দ্রটির প্রোগ্রামগুলোতে ‘দৃষ্টিভঙ্গির ভারসাম্য ও বৈচিত্র্য’ নেই। হার্ভার্ড একই সঙ্গে পশ্চিম তীরে অবস্থিত ফিলিস্তিনি বিশ্ববিদ্যালয় বিরজেইতর সঙ্গেও সম্পর্ক ছিন্ন করে।
আমেরিকার অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যেভাবে ট্রাম্পের দাবির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে, তা পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দেয় যে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশের জায়গা হিসেবে নিজেদের মূল উদ্দেশ্য দেখছে না; বরং এখন তারা এমন এক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, যারা আর সত্যিকার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়; বরং কেবল একটি ব্যবসা—যেখানে একটি পণ্যের (অর্থাৎ কলেজ ডিগ্রি) বিনিময়ে একজন ক্রেতা (অর্থাৎ ছাত্র) টাকা দেন।
এ কারণেই হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের রক্ষা না করাই ভালো। কারণ, তাঁদের কারণে প্রতিষ্ঠানটি যত টাকা ফেডারেল তহবিল থেকে হারাচ্ছে, তা তাঁরা নিজেরা টিউশন ফি দিয়ে পুষিয়ে দিতে পারছেন না।
ট্রাম্প প্রশাসনের ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনে জড়িত বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আক্রমণের পাশাপাশি, তারা আরও একটি আক্রমণ শুরু করে ডাইভার্সিটি, ইকুয়ালিটি অ্যান্ড ইনক্লুশন (ডিইআই) বা বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি উদ্যোগগুলোর বিরুদ্ধে। অথচ এই ডিইআই উদ্যোগগুলোর কারণে বিগত বছরগুলোতে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রান্তিক ও সংখ্যালঘু পটভূমি থেকে আসা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য কিছুটা হলেও বন্ধুসুলভ হয়ে উঠেছিল।
এ দুই ধরনের নীতির মিলিত প্রভাবে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য, বিশেষত বৈশ্বিক দক্ষিণ (গ্লোবাল সাউথ) থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য একেবারেই বৈরী পরিবেশে পরিণত হয়েছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জীবন এখন অত্যন্ত অনিশ্চিত ও আতঙ্কপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এটি কেবল ফিলিস্তিন সংহতির প্রতিবাদ বা মতপ্রকাশের বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকবে—এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। একবার এই নজির তৈরি হয়ে গেলে, আমেরিকায় এখন প্রতিটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে মেনে নিতে হবে যে তাঁরা যেকোনো সময় (শুধু একটি প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার জন্য, কোনো একটি নিবন্ধ লেখার জন্য বা এমন একটি মতপ্রকাশের জন্য, যা হোয়াইট হাউস বা তার মিত্রদের অসন্তুষ্ট করে) অপহৃত, আটক কিংবা বহিষ্কৃত হতে পারেন।
এমনকি কোনো আত্মীয়ের আগের কোনো চাকরির কারণেও তাঁদের আটক ও বহিষ্কারের মুখোমুখি করা যেতে পারে।
এই অবস্থায় আইনি কিংবা রাজনৈতিক দিক দিয়ে খুব একটা সহায়তার আশা নেই। তাই ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এই প্রশ্ন করা একেবারে যুক্তিসংগত: যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার ঝুঁকি আদৌ নেওয়া কি ঠিক হবে?
সোমদীপ সেন ডেনমার্কের রস্কিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।
আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট কল ম ব য় ন শ চয়ত ত হয় ছ অন শ চ আম র ক ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
৪৪তম বিসিএসের ৪০০ রিপিট ক্যাডার বাদ দিচ্ছে সরকার, নতুন সিদ্ধান্ত আসছে
৪৪তম বিসিএসে পুনরাবৃত্তি হওয়া ৪০০ ক্যাডারকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তারা ৪৩তম বিসিএসে বা আগের বিসিএসে যে ক্যাডারে আছেন ৪৪তম বিসিএসেও একই ক্যাডার পেয়েছিলেন। এই ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুতই হবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা।
প্রথম আলোকে ওই কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার বলেন, ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে পিএসসির কিছু সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এগুলো বাদ দিতে সরকার কাজ করছে। বাদ দিলে কি করা হবে তা নিয়েও কাজ করছে সরকার। এখন পিএসসিকে এ বিষয় নিয়ে একটি মতামত দিতে বলা হয়েছে। পেলেই তা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে প্রজ্জাপন দেওয়া হবে। এটি যাতে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি।
আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএস: অনলাইন আবেদন ও ফি জমাদানে পিএসসির নতুন নির্দেশনা৩০ জুলাই ২০২৫৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন প্রকাশিত হয়। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৬৯০ জনকে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সাময়িকভাবে মনোনীত করেছে।
প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ হাজার ৬৯০ জনের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন প্রার্থী একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন (রিপিট ক্যাডার)। এই ৪০০ জনের তালিকা পেয়েছে পিএসসি। এই রিপিট ক্যাডার বন্ধে বিধি সংশোধন করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পিএসসি।
পিএসসি জনপ্রশাসনের চিঠিতে বলছে, এই রিপিট ক্যাডারের ফলে নতুন ও অপেক্ষমাণ মেধাবীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসম্পদের সদ্ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছে। এখন এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া বন্ধ করার জন্য বিদ্যমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪–এর বিধি-১৭ এর শেষে নিম্নোক্ত শর্ত যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে পিএসসি।
আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫শর্তে কী আছে—পিএসসির চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা আছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিবার প্রাক্কালে, কিংবা কোনো বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রস্তুতকালে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে কিংবা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যদি কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয় যে এই বিধির আওতাধীন মনোনয়নযোগ্য কিংবা মনোনীত কোনো প্রার্থী একই ক্যাডার পদ, সমপদ কিংবা প্রার্থীর আগ্রহ নেই এমন কোনো সার্ভিস বা ক্যাডার পদে পুনরায় মনোনীত হইবার কারণে মনোনীত সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে যোগদান করিতে অনিচ্ছুক, এইরূপ ক্ষেত্রে কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশকারী প্রার্থীকে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিতে পারিবে; আরও শর্ত থাকে যে প্রথম শর্তাংশে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থীকে সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিবার কারণে উদ্ধৃত শূন্য পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রেরণ করিবার জন্য উত্তীর্ণ প্রার্থিগণের মধ্য হইতে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনপূর্বক কমিশন সম্পূরক ফলাফল প্রকাশ এবং সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিতে পারিবে;আরও অধিকতর শর্ত থাকে যে দ্বিতীয় শর্তাংশে উল্লিখিত সম্পূরক ফলাফল দ্বারা বা উহার পরিণতিতে প্রথম ঘোষিত ফলাফলে সার্ভিস বা ক্যাডার পদের জন্য মনোনীত কোনো প্রার্থীর প্রতিকূলে কোনো পরিবর্তন ঘটানো কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাইবে না।’
আরও পড়ুনবস্ত্র অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, চাকরির সুযোগ ১৯০ জনের২৯ জুলাই ২০২৫