শহীদকে নিয়ে ব্যঙ্গ করার অভিযোগ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে
Published: 17th, April 2025 GMT
ময়মনসিংহ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত রিদওয়ান হোসেন সাগরের বাবার সামনে শহীদ সাগরকে নিয়ে ব্যঙ্গ করার অভিযোগ উঠেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিকা পারভীনের অফিস কক্ষে এই ঘটনা ঘটে।
শহীদ সাগরের স্বজনরা জানান, সাগরের ছোট বোন আফিয়া তাবাসুম সুপ্তির সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য গত ৯ এপ্রিল আবেদন করেন। সেই আবেদনের খোঁজ নিতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান সাগরের বাবা আসাদুজ্জামান। পরে তাকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে অপেক্ষায় রাখেন এই কর্মকর্তা। একপর্যায়ে ওই শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, কাজ সম্পন্ন হতে কিছুদিন সময় লাগবে।
আসাদুজ্জামানের ভাষ্য, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত হয়েছে তার ছেলে সাগর। মেয়ের সনদ সংশোধনের কাজ নিয়ে আগেও কয়েকবার গিয়েছিলেন তিনি। আজও শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে কাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে সংশোধনের কাজটি রয়েছে বলে জানান উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মনিকা পারভীন।
আসাদুজ্জামানন আরও বলেন, ‘এই কর্মকর্তার কাছে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ফোন নম্বর চাইলে নম্বর নেই বলে জানান। পরে আমি চলে আসার মুহূর্তে তার কক্ষে উপস্থিত লোকজন আমার পরিচয় তার কাছে শুনতে চান। সেসময় তিনি ব্যঙ্গ করে উত্তর দেন, তিনি নাকি কোথাকার কোন শহীদের বাবা। এমন কথার প্রতিবাদ করতে গেলে শিক্ষা কর্মকর্তা আমাকে অপমান করেন।’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলার সদস্যসচিব আলী হোসেন। তিনি বলেন, ‘সাগরের বাবা আমাকে ফোনে বিষয়টি জানিয়েছেন। একজন শহীদের বাবা পরিচয় দেওয়ার পরেও তাকে অপমান করেছেন। একজন শহীদের বাবার সঙ্গে এমন আচরণ খুবই দুঃখজনক।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম প্রিন্সের ভাষ্য, ঘটনাটির কিছুই জানেন না তিনি। সাগরের বাবাকে ফোন করে বিষয়টি জেনে তারপর ওই শিক্ষা কর্মকর্তাকে ফোন করে ঘটনা শুনবেন বলে জানান তিনি।
অভিযোগের ব্যাপারে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিকা পারভীন সমকালকে বলেন, ‘আমার জানামতে উনার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়নি। তবে ঢাকা থেকে এক ঊর্ধ্বতন শিক্ষা কর্মকর্তার ময়মনসিংহে আগমন উপলক্ষে আমি ব্যস্ত ছিলাম। আমি শহীদ সাগরকে চিনতাম না, বলার মধ্যে শুধু এটুকু বলেছি যে এটা কোন সাগর।’
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার তাহমিনা আক্তার জানান, সাগরের বাবা তার কাছে গিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অপমানের অভিযোগ করেছেন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ময়মনস হ কর মকর ত র সদর উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’
২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।
থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’