হয়নি রিমান্ড শুনানি, আ. লীগের ৮ নেতা কারাগারে
Published: 17th, April 2025 GMT
মানিকগঞ্জ সদরের গড়পাড়ায় ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গ্রেপ্তার আটজনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে তুললে শুনানি না করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বিকালে মানিকগঞ্জ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পুলিশ গ্রেপ্তার করা আটজনকে সাত দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে; তবে শুনানি না করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক ইয়াছির আহসান।
আরো পড়ুন:
ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ: টিউলিপসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
হাসিনা-জয়সহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
মানিকগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) আবুল খায়ের মিয়া রাইজিংবিডি ডটকমকে এই তথ্য দিয়েছেন।
মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিরা হলেন- সদর উপজেলার চান্দইর গ্রামের মো.
গ্রেপ্তার করা অন্যরা হলেন, সদর উপজেলার বড় ষাট্টা গ্রামের মৃত হায়াত আলীর ছেলে ও গড়পাড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল হোসেন (৬০), পৌরসভার পূর্ব দাশড়া এলাকার সুনীল ঘোষের ছেলে ও জেলা যুবলীগের কর্মী সঞ্জিব ঘোষ (৪০), উপজেলার অন্বয়পুর গ্রামের মো. বায়হান মল্লিকের ছেলে ও শিবালয় উপজেলার শিবালয় ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেন (৪৮)।
আরো যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছেন- সদর উপজেলার পাঞ্জনখাড়া গ্রামের মৃত শাহীন খান সৃজনের ছেলে ও ছাত্রলীগের নেতা খান মো. রাফি সৃজন ওরফে রাফু (১৮), সদর উপজেলার দক্ষিণ উথলী গ্রামের মৃত মীর নাসির উদ্দিনের ছেলে ও ছাত্রলীগ নেতা মো. মীর মারুফ (২১) এবং একই গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে ও ছাত্রলীগ নেতা মীর আমিনুর (২৬)।
গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের মধ্যে সঞ্জিব ঘোষ ও মো. মোশারফ হোসেন বাদে অন্যদের বাড়ি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের গ্রামে।
মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা তদন্তে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাজমুল হাসান খানকে প্রধান করে ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে ।
পুলিশ ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) গভীর রাতে ঘোষের বাজার এলাকায় ভাস্কর্য শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। মানিকগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে আগুনে একটি ঘরের ভেতরে থাকা সব আসবাবপত্র, ভাস্কর্যসহ একটি মোটরসাইকেল পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
পয়লা বৈশাখের আগে ফেসবুকে চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষকে নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে তাকে হুমকি দেওয়া হয়। বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রায় শেখ হাসিনার মোটিফ বানানোর অভিযোগ তুলে ফেসবুকে এই অপপ্রচার চালানো হয়।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানায় গত ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন মানবেন্দ্র ঘোষ। ওই দিন মধ্যরাতেই তার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
মানবেন্দ্র ও তার পরিবারের দাবি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখাকৃতি তিনি বানাননি, আনন্দ শোভাযাত্রার বাঘের মোটিফ তৈরি করেছেন তিনি।
এই ঘটনায় বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাক্তন ছাত্র চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষ বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা রুজুর পর ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের আটজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি এস এম আমান উল্লাহ বলেন, মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ভুক্তভোগী মানবেন্দ্র বাদী হয়ে একটি মামলার করেছেন। আগুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর হয়ে কাজ করছে।
“এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে আটজনকে গ্রেপ্তার পর আজ (১৭ এপ্রিল) বিকালে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন চেয়ে আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়। পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে,” যোগ করেন তিনি।
ঢাকা/চন্দন/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভ স কর য নববর ষ আগ ন অপর ধ সদর উপজ ল র গ র প ত র কর ম ন কগঞ জ ঘটন য় র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।