ট্রাম্পের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করবেন জোনাথন কার্ল
Published: 17th, April 2025 GMT
জোনাথন কার্লের পরবর্তী বইটিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎকার অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে জানা গেছে।
এবিসি সাংবাদিকের ‘রিট্রিবিউশন: ডোনাল্ড ট্রাম্প অ্যান্ড দ্য ক্যাম্পেইন দ্যাট চেইঞ্জড অ্যামেরিকে ইন দ্য ফল’ বইটি প্রকাশ করবেন। বইটি হোয়াইট হাউস এবং প্রেসিডেন্ট প্রচারণার গভীরে আমাদের পর্দার আড়ালে আসা অসাধারণ মুহূর্তগুলি প্রকাশ করে, যা একজন ব্যক্তির প্রেসিডেন্টশিপের অবসান ঘটিয়ে অন্য একজনকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনে।
এবিসি নিউজের প্রধান ওয়াশিংটন সংবাদদাতা জোনাথন কার্ল বইটির জন্য গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারণা জুড়ে ট্রাম্পের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেননি যে ট্রাম্প নির্বাচনে জিতবেন এবং বইটি কেন ভুল ছিল তা অনুসন্ধান করবেন।
কার্লের প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে পূর্ববর্তী তিনটি বই হলো– ফ্রন্ট রো অ্যাট দ্য ট্রাম্প শো (২০২০); বিট্রেয়াল: দ্য ফাইনাল অ্যাক্ট অফ দ্য ট্রাম্প শো (২০২১); এবং টায়ারড অফ উইনিং: ডোনাল্ড ট্রাম্প অ্যান্ড দ্য এন্ড অফ দ্য গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি (২০২৩)। একটি তারকাচিহ্নিত পর্যালোচনায়, কিরকাসের একজন সমালোচক লিখেছেন যে ‘টায়ারড অফ উইনিং’ বইটিতে ‘চমৎকার প্রতিবেদন এবং নিশ্চিত লেখা রয়েছে– একটি অশুভ সতর্কবাণী।’
নতুন এই বইয়ের প্রচ্ছদে ইভান ভুচির বিখ্যাত ছবি রয়েছে, যেখানে ট্রাম্প পেনসিলভানিয়ার বাটলারের কাছে একটি সমাবেশে হত্যার চেষ্টার পর তার মুষ্টি উঁচিয়েছিলেন। ডাটন বলেছেন যে, বইটি অভূতপূর্ব রাজনৈতিক চক্রান্তের মোড়ের একটি গল্প, যেখানে দেখানো হয়েছে যে রাজনৈতিক ভাগ্যের পতন এবং পুনরায় উত্থানের সময় পর্দার আড়ালে কী ঘটেছিল এবং একটি নতুন দল যখন সম্পূর্ণ নতুন বিশ্বব্যবস্থা তৈরির লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ঘিরে একত্র হয়েছিল।
চলতি বছর ২৮ অক্টোবর ‘রিট্রিবিউশন: ডোনাল্ড ট্রাম্প অ্যান্ড দ্য ক্যাম্পেইন দ্যাট চেইঞ্জড অ্যামেরিকে ইন দ্য ফল’ প্রকাশের তারিখ নির্ধারিত আছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান ও কারকাস রিভিউস
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইন দ য
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ