অবহেলা, লোভ আর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে শৈথিল্যের কারণে গাজীপুরের নদ-নদীগুলোর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। ক্রমশ মরে যাচ্ছে নদীগুলো। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আগামী প্রজন্ম শুধু খিরু-লবলঙ্গ প্রভৃতি নদীর নাম জানবে, দেখতে পারবে না।

একসময় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত লবলঙ্গ, খিরু, মাটিকাটা, সুতিয়া, পারুলী ও শীতলক্ষ্যা নদী ছিল এই অঞ্চলের কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও জনজীবনে প্রাণসঞ্চারক জলধারা। আজ সেগুলো দখল ও দূষণের করালগ্রাসে শুধুই স্মৃতিচিহ্ন।

লবলঙ্গ: নদী নয়, এখন শুধুই এক বিষাক্ত নালা
লবলঙ্গ নদীতে একসময় বড় বড় জাহাজ চলত। এখন সেখানে নৌকাও চলে না। দখল ও দূষণের চাপে নদীটি এখন সরু নালার রূপ নিয়েছে। বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের রাসায়নিক বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হয়। পানির রং কালো, দুর্গন্ধ ছড়ায় আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকায়। 

স্থানীয় বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেছেন, “লবলঙ্গ তো এখন গল্প। বাপ-দাদারা বলতেন, এখানে জাহাজ চলত। এখন পানিতে গরু নামালেও গায়ে ফোসকা পড়ে।”

খিরু: বাণিজ্যের সম্ভাবনা শেষ বিষাক্ত জলে
খিরু নদী একসময় ছিল বাণিজ্যের আশাব্যঞ্জক মাধ্যম। এখন তা মারাত্মক দূষণের শিকার। প্রতিবছর বর্ষায় মাসখানেক নৌকা চলে, বাকি সময় মৃতপ্রায় নদীটি কেবল বিষাক্ত পানিতে ভরপুর। ভালুকা উপজেলার কারখানাগুলো খিরুতে দূষিত পানি ফেলে। এ পানি কৃষিজমিতে সেচ দেওয়া যায় না, ফসল পচে যায়।

মাটিকাটা, সুতিয়া ও পারুলী: পানির বদলে বিষ
মাটিকাটা নদীতে খিরুর দূষিত পানি এসে পড়ায় এটি রীতিমতো বিষবাহক নদীতে পরিণত হয়েছে। কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সুতিয়া নদী একইভাবে দূষিত। ভালুকার বেশকিছু কারখানা এ নদীতে কেমিক্যালযুক্ত পানি ফেলছে। পারুলী নদীর অবস্থাও একই রকম ভয়াবহ।

শীতলক্ষ্যা: শহরের দূষণ গ্রামে পৌঁছেছে
শীতলক্ষ্যা নদীও শ্রীপুর অংশে দখল-দূষণে নাকাল। শহর ও শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য এখন গ্রামীণ জীবনেও বিষ ঢেলে দিচ্ছে।

পরিবেশবিদ ও প্রশাসনের উদ্যোগ
‘নদী পরিব্রাজক দল’–এর শ্রীপুর শাখার সভাপতি সাঈদ চৌধুরী বলেছেন, “আমাদের দাবি, নদীগুলো দূষণমুক্ত করা হোক। আমরা চাই, নদী আবার স্বচ্ছ জলে ভরে উঠুক।”

পরিবেশ অধিদপ্তরের গাজীপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক মো.

আরেফিন বাদল জানিয়েছেন, লবলঙ্গের দূষণ রোধে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। দূষণের জন্য দায়ী কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ জানিয়েছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সচিব নদী পরিদর্শন করেছেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

ঢাকা/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি নেতাকে মারধর: খুলনা সদর থানার সাবেক ওসি কারাগারে

খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল আলমের করা মামলায় সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

রোববার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন হাসান আল মামুন। খুলনা মহানগর দায়রা জজ মো. শরীফ হোসেন হায়দার তার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এদিকে আদালত চত্বরে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীরা মামুনকে লক্ষ্য করে ডিম ও পচা আম নিক্ষেপ করেন। তার শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। পরে নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেন সেনা সদস্যরা। 

মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ কে এম শহিদুল আলম বলেন, মামলাটিতে উচ্চ আদালতের জামিনে ছিলেন হাসান আল মামুন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে রোববার খুলনা মহানগর দায়রা জজ  আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। আমরা জামিনের বিরোধিতা করি। আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি কে ডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির সমাবেশে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এ সময় তৎকালীন ওসি মামুন নিজেই
ফখরুল আলমকে বেদম মারধর করেন। লাঠির আঘাতে ফখরুল আলমের একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট মামুনের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আদালতে মামলা করেন ফখরুল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ