রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু সমর্থকেরা আরেকবার মন খারাপ করে স্টেডিয়াম ছাড়ার আগে কেঁদেছে বেঙ্গালুরুর আকাশ। দক্ষিণ ভারতের এই শহরে আজ কয়েক দফা বৃষ্টি হয়েছে।

তাতে খেলা শুরু হয়েছে নির্ধারিত সময়ের সোয়া দুই ঘণ্টা দেরিতে। তবে বৃষ্টিও বেঙ্গালুরুর জন্য আজ আশীর্বাদ বয়ে আনতে পারেনি। কোহলি-হ্যাজলউডদের দল পাঞ্জাব কিংসের কাছে হেরেছে ৫ উইকেটে।

এম.

চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম বেঙ্গালুরুর ঘরের মাঠ। স্টেডিয়ামের টইটম্বুর গ্যালারিগুলোতে সমর্থকদের গগণবিদারি চিৎকার তাতে অন্যরকম আবহ তৈরি করে। কোহলিদেরও নিশ্চয় চাঙা করে তোলে।

কিন্তু এবারের আইপিএলে ঘরই যেন বেঙ্গালুরুর পর হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে এই মৌসুমে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে খেলা তিন ম্যাচেই যে হেরে গেল বেঙ্গালুরু! আজ পাঞ্জাব কিংসের আগে গত ১০ এপ্রিল দিল্লি ক্যাপিটালস ও ২ এপ্রিল গুজরাট টাইটানসের কাছে হেরে যায় রজত পতিদারের দল।

বৃষ্টিবিঘ্নিত রাতে ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ১৪ ওভারে। টস জিতে বেঙ্গালুরুকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলেন পাঞ্জাব অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার। তাঁর সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করে বেঙ্গালুরুর ৯ উইকেট তুল নিয়ে ৯৫ রানে বেঁধে ফেলেন পাঞ্জাবের বোলাররা।

ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ব্যাটসম্যানরাও তাঁদের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করেছেন। পাঞ্জাব জিতেছে ৫ উইকেট ও ১১ বল হাতে রেখে।  

সহজ জয়ে পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে উঠে এসেছে বলিউড অভিনেত্রী প্রীতি জিনতার দল পাঞ্জাব, বেঙ্গালুরু নেমে গেছে চারে। ৭ ম্যাচে ৫ জয়ে পাঞ্জাবের পয়েন্ট এখন ১০, সমান সংখ্যক ম্যাচে ৪ জয়ে ৮ পয়েন্ট বেঙ্গালুরুর।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

* বৃষ্টির কারণে ১৪ ওভারের ম্যাচ

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু: ১৪ ওভারে ৯৫/৯
(ডেভিড ৫০*, পতিদার ২৩; ইয়ানসেন ২/১০, চাহাল ২/১১, অর্শদীপ ২/২৩, ব্রার ২/২৫)।

পাঞ্জাব কিংস: ১২.১ ওভারে ৯৮/৫
(ওয়াধেরা ৩৩*, আর্য ১৬, ইংলিস ১৪, প্রভসিমরান ১৩; হ্যাজলউড ৩/১৪, ভুবনেশ্বর ২/২৬)।

ফল: পাঞ্জাব কিংস ৫ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: টিম ডেভিড (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু)।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক

নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।

ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’

সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।

প্রতিবাদ, বিক্ষোভ

সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।

‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।

পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।

দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।

সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।

সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।

কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ