জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও যুগ্ম সদস্যসচিব গাজী সালাহউদ্দিন তানভীরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লেখালেখি হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। এসব বিষয় নিয়ে নতুন দল এনসিপির কেন্দ্রীয় অনেক নেতার মধ্যে নানা প্রশ্ন ছিল।

গতকাল শুক্রবার সাধারণ সভায় হাসনাত ও সারজিসকে ‘বিলাসী জীবন’ নিয়ে এবং তানভীরের বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তাঁরা অভিযোগগুলো খণ্ডনও করেছেন।

শুক্রবার বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত প্রায় ৯ ঘণ্টা ধরে বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা হয়। এটি দলের তৃতীয় সাধারণ সভা। সভায় দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন।

ওই সভায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও জনপরিসরে এনসিপির বেশ কিছু নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ও তদন্ত কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। রোববার (২০ এপ্রিল) এই কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এনসিপি জানিয়েছে।

শুক্রবারের সাধারণ সভায় অংশ নিয়েছেন এনসিপির এমন পাঁচজন নেতার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা বলেন, সভার এক পর্যায়ে আলোচনা ওঠে যে মুষ্টিমেয় কয়েকজনের জন্য এনসিপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এরপর কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে নানা প্রশ্ন করতে শুরু করেন। হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে ৫ আগস্টের পর ‘বিলাসী জীবন’ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তাঁরা কীভাবে দামি গাড়িতে চড়েন, সেই প্রশ্ন তোলা হয়। এ ছাড়া ঈদুল ফিতরের আগে গত মাসে পঞ্চগড়ে সারজিসের গাড়িবহর নিয়ে প্রবেশ করে যে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন, সে বিষয়েও তাঁকে প্রশ্ন করা হয়। বিভিন্ন ঘটনায় নিজেদের মতো করে মন্তব্য করা বা অবস্থান নেওয়া, বিভিন্ন বিষয়ে একা একা ‘ডিল’ করতে যাওয়া নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়েন সারজিস ও হাসনাত।

সভা-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জবাবে সারজিস ও হাসনাত মোটাদাগে বলেছেন, তাঁদের লক্ষ্যবস্তু করে বিভিন্ন পক্ষ থেকে নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এসবের উদ্দেশ্য এনসিপিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। তাঁরা দাবি করেন, নিরাপত্তার কারণে এবং জরুরি প্রয়োজনে তাঁরা গাড়ি ব্যবহার করেন ভাড়া করে। গত মাসে পঞ্চগড়ে গাড়িবহরের বিষয়ে সারজিস ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, তাঁর জীবনযাত্রা আগে থেকেই সচ্ছল। তাঁদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে তোলা অভিযোগের অধিকাংশই অতিরঞ্জন বলে মন্তব্য করেন সারজিস।

সভায় সারজিস ও হাসনাত আরও বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর নানাভাবে সহযোগিতা চেয়ে অনেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁরা অনেককে সহযোগিতা করেছেন, কিন্তু এর বিনিময়ে কোনো আর্থিক সুবিধা নেননি। তাঁরা নানা জায়গায় গেলে অনেকে এসে তাঁদের সঙ্গে ছবি তোলেন। কিন্তু পরে ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে অনেকে তাঁদেরও এর সঙ্গে জড়িত মনে করেন মানুষ।

এনসিপির তৃতীয় সাধারণ সভায় বক্তব্য দেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ঢাকা, ১৮ এপ্রিল.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এনস প র

এছাড়াও পড়ুন:

জকসুতে এআই ব্যবহারে থাকবে শিথিলতা, তবে অপব্যবহার করা যাবে না: নির্বাচন কমিশন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যবহারে শিথিলতা থাকবে। তবে এর অপব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য জুলফিকার মাহমুদ।

রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫-এর আচরণবিধিবিষয়ক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদের এক দাবির জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে ফয়সাল মুরাদ বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধির ৭–এর ঘ ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করা যাবে না। আমরা যারা ছোট সংগঠন, আমাদের তহবিল সীমিত। আমরা নির্বাচনী প্রচারের জন্য এআই ব্যবহার করে দু-এক মিনিটের ভিডিও বানিয়ে প্রচার কার্যক্রম চালাতে চাই। আমাদের দাবি, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন যেন শিথিল নীতি গ্রহণ করে।’

মুরাদ আরও বলেন, বিগত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কিছু ত্রুটি লক্ষ করা গেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনকে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও বিতর্কমুক্ত রাখার জন্য যতগুলো ভোটকক্ষ থাকবে, সব কটি সিসিটিভি ফুটেজের আওতায় রাখতে হবে। সবার জন্য সেই সিসিটিভি ফুটেজ উন্মুক্ত রাখতে হবে। ভোট গ্রহণকে স্বচ্ছ রাখার জন্য ভোটকক্ষের ভেতরে জাতীয় গণমাধ্যমকে সরাসরি সম্প্রচার করার অনুমতি দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জকসুর নির্বাচন কমিশনার জুলফিকার মাহমুদ বলেন, ‘এআই ব্যবহার করে বিভিন্নজনের চরিত্র হনন করা হয়, অপপ্রচার চালানো হয়। সেদিক থেকে চিন্তা করে এআই ব্যবহার নিষিদ্ধ রেখেছিলাম। তোমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এআই ব্যবহারে শিথিলতা থাকবে প্রচার–প্রসারে, তবে অপব্যবহার করা যাবে না। আর সরাসরি সম্প্রচারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আলোচনা করে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর নির্বাচন কমিশনার ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল সংগঠন ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ