Prothomalo:
2025-05-01@00:16:09 GMT

দোয়া কীভাবে করতে হয়

Published: 20th, April 2025 GMT

আল্লাহ-তায়ালার কাছে কেউ যদি দোয়া করে, তাহলে তিনি শোনেন এবং সাড়া দেন। তিনি মহানবীকে (সা.) বলেছেন, ‘যদি আমার বান্দারা আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তখন (আপনি বলুন), ‘আমি তো কাছেই আছি। প্রার্থনা করলে আমি প্রার্থনা কবুল করি। তাই তারা যেন আমার আদেশ মানে। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৬)

কিন্তু কীভাবে আমরা তার কাছে দোয়া করব? তিনি নিজেই সে-বিষয়ে জানান, ‘তোমরা আপন প্রতিপালককে ডাকো মিনতি করে ও চুপে চুপে। নিশ্চয় তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আারাফ, আয়াত: ৫৫)

অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। যারা অহংকার করে আমার ইবাদত থেকে বিরত থাকে, তারা শিগগিরই জাহান্নামে দাখিল হবে লাঞ্ছিত হয়ে।’ (সুরা গাফির, আয়াত: ৬০)

দোয়া একটি ইবাদত

নোমান ইবনে বাশির (রা.

) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া হলো ইবাদত। তোমাদের প্রতিপালক বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি ডাকে সাড়া দেবো’।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১,৪৭৯; সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৯৬৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩,৮২৮)

নবীজি (সা.) আরও বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে সম্মানীয় কিছু নেই।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৩৭০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩,৮২৯)

আরও পড়ুনযে কারণে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়া হয়০৮ এপ্রিল ২০২৫

দোয়া কীভাবে করতে হবে

প্রতিটি ইবাদতের মতো দোয়া করারও একটি পদ্ধতি আছে। দোয়া কবুল হওয়ার জন্য সঠিক পদ্ধতিতে দোয়া করা জরুরি। দোয়ার মধ্যে কী কী বিষয় লক্ষণীয়, সে-সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন:

প্রার্থনায় জোর দেওয়া: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে,, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন আল্লাহর কাছে কিছু চায়, সে যেন প্রত্যয়ের সঙ্গে চায়। এভাবে যেন না চায় যে, ‘আল্লাহ, তোমার ইচ্ছা হলে আমাকে কিছু দাও।’ কারণ, এটা তার পছন্দ নয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৩৭; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৬৭৮)

খাবার হালাল হওয়া: আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) এক ব্যক্তি সম্পর্কে বললেন, ‘দীর্ঘ সফরের কারণে সে ধূলিমাখা হয়ে আছে। প্রতিপালককে হাত তুলে সে ডাকে ‘হে আমার প্রতিপালক’ ‘হে আমার প্রতিপালক’। অথচ তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পোশাকও হারাম। হারামের দিয়ে তার সামগ্রিক পাথেয় তৈরি। তাহলে কীভাবে তার দোয়া কবুল হবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,০১৫)

আরও পড়ুন‘আত-তাহিয়্যাতু’র মর্মবাণী কী১১ এপ্রিল ২০২৫

দ্রুত কবুলের কামনা না করা:

রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেউ কেউ বলে, দোয়া করেছি কিন্তু কবুল হয় নি। তোমাদের যে কারও দোয়া কবুল করা হবে, যখন সে কবুলের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৪০)

দোয়ায় বারবার মিনতি করা: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) যখন দোয়া করতেন, তিনবার করতেন। আর যখন কোনো কিছু চাইতেন তিনবার চাইতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৭৯৪)

ব্যাপকার্থক দোয়া:

আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ব্যাপকার্থ দোয়া পছন্দ করতেন, অন্য (সংকীর্ণ অর্থবোধক) দোয়া করতেন না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১,৪৮২)

দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সামনে বান্দার আনুগত্য প্রকাশ পায়। দুশ্চিন্তার সময় সে একমাত্র আল্লাহর কাছেই আশ্রয় চায়। কারণ, বান্দার উপকার কিংবা ক্ষতি থেকে নিষ্কৃতি সবকিছুর ক্ষমতা একমাত্র তারই আছে। এভাবে মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে তার যাবতীয় প্রয়োজনের বিষয়ে আশ্রয় চেয়ে নিজেকে নিরাপদ বোধ করে। এটাই হলো দাসত্ব ও ইবাদতের মূল কথা। রাসুল (সা.) প্রচুর পরিমাণে দোয়া করতেন। আজানের পরে, নামাজের পরে ও খুতবাতে, এমনকি নামাজের ভেতরেও দোয়া করাকে তিনি নিজের রীতি বানিয়ে নিয়েছিলেন। আমরা কোনো অবস্থাতেই দোয়া পরিত্যাগ করতে পারি না, এক দিনের জন্যও না। কারণ, প্রতিটি মুহূর্তে প্রত্যেক কাজে আমরা আল্লাহর সাহায্যের মুখাপেক্ষী।

আরও পড়ুনযে দুটি বাক্য আল্লাহর কাছে প্রিয়১০ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বল ছ ন আল ল হ বর ণ ত করত ন

এছাড়াও পড়ুন:

মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের

এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।

চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।

টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর। 

গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।

দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত। 

শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।

মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।  

সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ