আল্লাহ-তায়ালার কাছে কেউ যদি দোয়া করে, তাহলে তিনি শোনেন এবং সাড়া দেন। তিনি মহানবীকে (সা.) বলেছেন, ‘যদি আমার বান্দারা আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তখন (আপনি বলুন), ‘আমি তো কাছেই আছি। প্রার্থনা করলে আমি প্রার্থনা কবুল করি। তাই তারা যেন আমার আদেশ মানে। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৬)
কিন্তু কীভাবে আমরা তার কাছে দোয়া করব? তিনি নিজেই সে-বিষয়ে জানান, ‘তোমরা আপন প্রতিপালককে ডাকো মিনতি করে ও চুপে চুপে। নিশ্চয় তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আারাফ, আয়াত: ৫৫)
অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। যারা অহংকার করে আমার ইবাদত থেকে বিরত থাকে, তারা শিগগিরই জাহান্নামে দাখিল হবে লাঞ্ছিত হয়ে।’ (সুরা গাফির, আয়াত: ৬০)
দোয়া একটি ইবাদত
নোমান ইবনে বাশির (রা.
নবীজি (সা.) আরও বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে সম্মানীয় কিছু নেই।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৩৭০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩,৮২৯)
আরও পড়ুনযে কারণে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়া হয়০৮ এপ্রিল ২০২৫দোয়া কীভাবে করতে হবে
প্রতিটি ইবাদতের মতো দোয়া করারও একটি পদ্ধতি আছে। দোয়া কবুল হওয়ার জন্য সঠিক পদ্ধতিতে দোয়া করা জরুরি। দোয়ার মধ্যে কী কী বিষয় লক্ষণীয়, সে-সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন:
প্রার্থনায় জোর দেওয়া: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে,, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন আল্লাহর কাছে কিছু চায়, সে যেন প্রত্যয়ের সঙ্গে চায়। এভাবে যেন না চায় যে, ‘আল্লাহ, তোমার ইচ্ছা হলে আমাকে কিছু দাও।’ কারণ, এটা তার পছন্দ নয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৩৭; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৬৭৮)
খাবার হালাল হওয়া: আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) এক ব্যক্তি সম্পর্কে বললেন, ‘দীর্ঘ সফরের কারণে সে ধূলিমাখা হয়ে আছে। প্রতিপালককে হাত তুলে সে ডাকে ‘হে আমার প্রতিপালক’ ‘হে আমার প্রতিপালক’। অথচ তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পোশাকও হারাম। হারামের দিয়ে তার সামগ্রিক পাথেয় তৈরি। তাহলে কীভাবে তার দোয়া কবুল হবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,০১৫)
আরও পড়ুন‘আত-তাহিয়্যাতু’র মর্মবাণী কী১১ এপ্রিল ২০২৫দ্রুত কবুলের কামনা না করা:
রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেউ কেউ বলে, দোয়া করেছি কিন্তু কবুল হয় নি। তোমাদের যে কারও দোয়া কবুল করা হবে, যখন সে কবুলের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৪০)
দোয়ায় বারবার মিনতি করা: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) যখন দোয়া করতেন, তিনবার করতেন। আর যখন কোনো কিছু চাইতেন তিনবার চাইতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৭৯৪)
ব্যাপকার্থক দোয়া:
আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ব্যাপকার্থ দোয়া পছন্দ করতেন, অন্য (সংকীর্ণ অর্থবোধক) দোয়া করতেন না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১,৪৮২)
দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সামনে বান্দার আনুগত্য প্রকাশ পায়। দুশ্চিন্তার সময় সে একমাত্র আল্লাহর কাছেই আশ্রয় চায়। কারণ, বান্দার উপকার কিংবা ক্ষতি থেকে নিষ্কৃতি সবকিছুর ক্ষমতা একমাত্র তারই আছে। এভাবে মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে তার যাবতীয় প্রয়োজনের বিষয়ে আশ্রয় চেয়ে নিজেকে নিরাপদ বোধ করে। এটাই হলো দাসত্ব ও ইবাদতের মূল কথা। রাসুল (সা.) প্রচুর পরিমাণে দোয়া করতেন। আজানের পরে, নামাজের পরে ও খুতবাতে, এমনকি নামাজের ভেতরেও দোয়া করাকে তিনি নিজের রীতি বানিয়ে নিয়েছিলেন। আমরা কোনো অবস্থাতেই দোয়া পরিত্যাগ করতে পারি না, এক দিনের জন্যও না। কারণ, প্রতিটি মুহূর্তে প্রত্যেক কাজে আমরা আল্লাহর সাহায্যের মুখাপেক্ষী।
আরও পড়ুনযে দুটি বাক্য আল্লাহর কাছে প্রিয়১০ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বল ছ ন আল ল হ বর ণ ত করত ন
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।
ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদ, বিক্ষোভসেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।
কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।