সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ রিট নিষ্পত্তিতে বেঞ্চ নির্ধারণ হাইকোর্টে
Published: 20th, April 2025 GMT
বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদন নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে বেঞ্চ নির্ধারণ করা হয়েছে। বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটির শুনানি ও নিষ্পত্তি হবে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ এ বেঞ্চ নির্ধারণ করেন।
এর আগে, মামলাটি বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চে শুনানি ও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল। তবে গত ২৪ মার্চ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় সেই বেঞ্চটি ভেঙে যায়। এরপর সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ সংক্রান্ত মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য নতুন বেঞ্চ নির্ধারণের আবেদন করেন রিটকারী আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি গত বছরের ২৫ আগস্ট ১০ জন আইনজীবীর পক্ষে মূল সংবিধানের ১৯৭২ সালের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করেন। পরে হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চায়—বিদ্যমান সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না। নতুন বেঞ্চে রুলের শুনানি শিগগিরই শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
বর্তমানে প্রযোজ্য (সংশোধিত) সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘অধস্তন আদালতের দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে।’ কিন্তু ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, ‘বিচারকর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্বে নিযুক্ত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধান সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত থাকবে।’
বিদ্যমান সংবিধানের অনুযায়ী বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়োগ, পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি, ছুটি ও শৃঙ্খলাবিধির ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগের প্রভাব রয়েছে- যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব চ রপত
এছাড়াও পড়ুন:
দক্ষিণ ভারতের নিষ্পেষিত মুসলিম নারীদের কণ্ঠস্বর
বানু মুশতাক বললেন, ‘মানুষ ও তার মৌলিক স্বভাব সবখানেই একই ধরনের। এটাই আমার লেখার উদ্দেশ্য। আমার বিষয়বস্তু নারী, প্রান্তিক মানুষ, কণ্ঠহীন সমাজের কণ্ঠস্বর হওয়া।’
বানু মুশতাকের মাধ্যমে এ বছরই প্রথম কোনো ছোটগল্প সংকলন বুকার জিতেছে। আবার কন্নড় ভাষাতেও এসেছে প্রথম বুকার। হার্ট ল্যাম্প ইংরেজি ভাষায় অনূদিত বানু মুশতাকের প্রথম বই। তাঁর বয়স এখন ৭৭ বছর।
বানু মুশতাক একজন আইনজীবী, সমাজকর্মী ও লেখক। ১৯৮১ সাল থেকে তিনি গল্প লিখছেন। হার্ট ল্যাম্প তাঁর বিভিন্ন সময়ে লেখা গল্পের একটি সংকলন। তাঁর গল্পে দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকের মুসলিম নারীদের জীবনের গল্প ফুটে উঠেছে। সেখানে দেখানো হয়েছে, তাঁরা কীভাবে পারিবারিক রীতির জাঁতাকলে পড়েন।
বানু মুশতাক বলেন, ‘হ্যাঁ, মেয়েরা, আজও তারা অবহেলিত। আর ঘর থেকেই এর শুরু।’
তাঁর অনুবাদক দীপা ভাস্তি বলেন, ‘এই গল্পগুলো একটি সুনির্দিষ্ট অঞ্চলের সুনির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও একেবারে সর্বজনীন।’
একজন আইনজীবী ও সমাজকর্মী হিসেবে তাঁর কাজ লেখালেখিতে কী প্রভাব ফেলে—এ প্রশ্নের জবাবে বানু মুশতাক বলেন, ‘কেউ যখন কোনো আইনি সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসে, তখন তারা তাদের সব অনুভূতি ভাগ করে নিতে চায়। সেসব তাড়না আমার মধ্যে ক্রমাগত বাড়তে থাকে। তারপর একদিন ছোটগল্পে পরিণত হয়।’
কিন্তু আইনি মামলা নাহয় সমস্যার সমাধান করতে পারে, ছোটগল্প কি পারে? ‘অবশ্যই। কারণ নীরবতা কোনো সমাধান নয়। তারা যে পাল্টা লড়াই করতে পারে, সেই দৃষ্টিভঙ্গি আমি গল্পের মাধ্যমে দিয়েছি।’
বানু মুশতাকের ‘কালো গোখরারা’ গল্পে একজন নারীকে জানানো হয়েছে, ইসলাম নারীদের শিক্ষিত হওয়ার এবং কাজ করার কথা বলেছে। কিন্তু সমাজ সুবিধার জন্য তাদের সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখে। গল্পে আমি বলেছি, নিজের অধিকারের কথা বলো।’ বলেন বানু মুশতাক।
বানু মুশতাকের গল্পে কমেডিও আছে। তাঁর ভাষ্য, ‘এই স্টাইল ব্যবহারের কারণ আমি ক্ষমতাকাঠামোর মুখে সত্য বলছি। পিতৃতন্ত্র, রাজনীতি, ধর্ম—সব একসঙ্গে মিলিয়েই ক্ষমতাকাঠামো। খুব গম্ভীর সুরে কথাটি বললে এর পরিণতি যা–ই হোক না কেন, আমি দায়বদ্ধ থাকব। তাই আমি ব্যঙ্গাত্মক মোচড় দিই। সেলফ সেন্সরশিপের বদলে এই কৌশল ব্যবহার করি।’
অনুবাদক ভাস্তি বলেন, ‘নারীরা যে পুরুষদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, রসিকতা করে এই গল্পে সেটাই বোঝানো হয়েছে।’
বানু মুশতাক বান্দায়া সাহিত্যের (কন্নড়ের প্রতিবাদী সাহিত্য আন্দোলন) ঐতিহ্যে লিখেছেন। ১৯৭০–এর দশকে লেখকেরা ছিলেন ‘বেশির ভাগ পুরুষ এবং উচ্চবর্ণের’। সে আন্দোলনের স্লোগান ছিল, ‘লেখক হলে আপনিও একজন যোদ্ধা’। এটি নারী ও সংখ্যালঘু লেখকদের নিজস্ব পরিচয়ে লিখতে উত্সাহিত করেছিল।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ
রবিউল কমল