নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা কারও জন্যই সুখকর নয়
Published: 21st, April 2025 GMT
নির্বাচন কবে হবে– এ নিয়ে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলছেন, কম সংস্কার চাইলে এ বছরের ডিসেম্বর; বেশি সংস্কার চাইলে ২০২৬-এর জুনের মধ্যে নির্বাচন। যদিও কম-বেশি সংস্কার বলতে কী বোঝাতে চাইছেন, তা তিনি খোলাসা করেননি। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন ইস্যুতে নিজেদের মধ্যে ফারাক কমিয়ে মোটামুটি কাছাকাছি অবস্থানে চলে এসেছে বলে মনে হচ্ছে। এতদিন মনে হচ্ছিল, প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে জামায়াত ও নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপির নির্বাচনের সময় নিয়ে প্রবল মতবিরোধ রয়েছে। মনে হয়েছে, জামায়াত, এনসিপিসহ আরও কিছু দল জাতীয় নির্বাচন প্রলম্বিত করার নীতি নিয়ে চলছে। তারা নির্বাচনের আগে খুন, গুম, দুর্নীতি, লুটপাট ও গণহত্যায় অভিযুক্তদের বিচার এবং রাষ্ট্র সংস্কারের দৃশ্যমান অগ্রগতি চায়। ছাত্রদের দিক থেকে কখনও নতুন সংবিধান, কখনও সংবিধানের পুনর্লিখন; জাতীয় নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিও উত্থাপন করা হয়েছে।
তবে সম্প্রতি জামায়াত হঠাৎ তার আগের অবস্থান থেকে সরে এসে আগামী রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে। দলটির আমির যথার্থই বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে রোজা; জুনের আগে এসএসসি-এইচএসসি দুটি পাবলিক পরীক্ষা, তারপর কোরবানির ঈদ। তাই জুনের মধ্যে ঘোষিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে চাইলে রোজার আগেই তা করতে হবে, এর পর সম্ভব নয়। বিএনপিও একই যুক্তিতে এ বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন চেয়েছে। এনসিপিও ঠিক তাদের আগের জায়গায় নেই বলে মনে হচ্ছে। সব মিলিয়ে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সময়ের পরিক্রমায় তা পাল্টাচ্ছে, বলা যায়।
এ কথা ঠিক, বিএনপি দ্রুত নির্বাচন; স্বল্পতম সময়ের মধ্যে নির্বাচন; যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন– এসব কথা বলেছে। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির এতটা তাড়াহুড়ো ভালোভাবে নেয়নি। বিএনপি জনগণের এই মনোভাব সময়মতো বুঝতে পেরেই পূর্ববর্তী অবস্থান থেকে সরে এসে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে এখন সোচ্চার। আবার রোডম্যাপ আদায়ের কৌশল নিয়েও দলটির মধ্যে কমবেশি অস্থিরতা কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে। দলটি কখনও বলছে, রোডম্যাপ ইস্যুতে তারা পথে নামবে; সরকারের ওপর চাপ তৈরি করবে। আবার এখন মনে হচ্ছে, তারা সরকারকে আরও কিছু সময় দিতে চায়। এটাও বোধ করি জনমনের ভাবনা আমলে নিয়ে তাদের এগোনোর বাস্তবসম্মত কৌশল।
প্রসঙ্গত, সেনাপ্রধানও একাধিকবার এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা বলেছেন। যদিও কেউ কেউ সেনাপ্রধানের এমন বক্তব্যে নাখোশ হয়েছেন। সমালোচকরা বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে কথা বলবার তিনি কে? কিন্তু আমাদের সবারই মনে রাখতে হবে, তিনি হচ্ছেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর প্রধান। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার পক্ষ নিয়ে দেশকে আরও রক্তক্ষয় থেকে রক্ষা করে স্বৈরশাসকের পদত্যাগে তাঁর নেতৃত্বেই সেনাবাহিনী ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। যেমনটা পালন করেছিল নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল নূরউদ্দিনের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী।
দেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার ছাড়া দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ কায়েম করা যায় না। দ্রব্যমূল্য, জনজীবনে নিরাপত্তা ইস্যু ছাড়াও রয়েছে দেশের বিরুদ্ধে ভেতরে-বাইরে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র। এসব কিছুর কারণে নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলিয়ে রাখা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য হবে না।
বিএনপি কখনোই বলছে না– বিচার, সংস্কার বাদ দিয়ে নির্বাচন করে ফেলতে হবে। তারাও নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা ও তাঁর দোসরদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিচারিক প্রক্রিয়ার দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চায়। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পক্ষেও দলটি ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করছে। এ অবস্থান থেকেই বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর কাছে দলের প্রস্তাব পেশ করেছে। বিএনপি মনে করছে, সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া। ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এমন কিছু সংস্কার এখনই নির্বাহী আদেশে; কিছু সংস্কার অধ্যাদেশ জারি করে সম্পন্ন করা সম্ভব। বাদ বাকি সংস্কার পরবর্তী সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া যায়।
সত্য, টানা অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী শাসনে গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে; দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ পর্যুদস্ত। রাষ্ট্রকে এই ভঙ্গুর দশা থেকে বের করে আনতে রাষ্ট্র কাঠামোয় গুণগত পরিবর্তন আনতেই হবে। তার জন্য প্রয়োজন টেকসই সংস্কার। জনগণের নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতেই শুধু তা সম্ভব।
জাতির জীবনে সুযোগ বারবার আসে না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর আমরা দেশকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। নব্বইয়ের সুযোগ আমরা হাতছাড়া করেছি। আর নয়; এবার পারতেই হবে। এ জন্য দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। রাষ্ট্রের পুনর্গঠনে একটি গণতান্ত্রিক, নিরাপদ, সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে; এখন এবং ভবিষ্যতে।
সব শেষে এ কথা বলা যায়, যেহেতু নির্বাচন নিয়ে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য কাটিয়ে কাছাকাছি আসতে পেরেছে এবং সরকার আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাদের অঙ্গীকারের কথা বারবার বলছে; এমন পরিস্থিতিতে আগামী রোজার আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেওয়াটাই হবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় সম্মানের।
মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল: বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক; নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের
কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত ড স ম বর অবস থ ন সরক র র ত র জন বছর র ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
স্টিভ জবসের মডেল কন্যাকে কতটা জানেন?
মার্কিন ফ্যাশন মডেল ইভ জবস। অ্যাপল কম্পিউটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের কন্যা তিনি। স্টিভ জবস ও লরেন পাওয়েল জবস দম্পতির কন্যা ইভ।
কয়েক দিন আগে বয়সে ছোট প্রেমিকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ২৭ বছরের ইভ। তার বরের নাম হ্যারি চার্লস। যুক্তরাজ্যের নাগরিক হ্যারি অলিম্পিকে স্বর্ণপদকজয়ী অশ্বারোহী। বয়সে ইভের চেয়ে এক বছরের ছোট হ্যারি। গ্রেট ব্রিটেনে এ জুটির বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইভের জাঁকজমকপূর্ণ বিয়েতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধনাঢ্য পরিবারের লোকজন। এ তালিকায় রয়েছেন—তারকা শেফ ব্যারনেস রুথ রজার্স, বিল গেটসের মেয়ে জেসিকা, রোমান আব্রামোভিচের মেয়ে সোফিয়া প্রমুখ। অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা উত্তরাধিকারীর পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের বিলাসবহুল মিনিবাসের স্রোত বইছিল বিয়ের ভেন্যুতে।
জাকজমকপূর্ণ বিয়েতে কত টাকা খরচ হয়েছে তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। সংবাদমাধ্যমটিকে প্রয়াত স্টিভ জবসের স্ত্রী লরেন পাওয়েল জবস বলেন, “ইভ-হ্যারির বিয়েতে ৫ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ হয়েছে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯০ কোটি ২৮ লাখ টাকার বেশি)।
১৯৯১ সালে লরেন পাওয়েলকে বিয়ে করেন স্টিভ জবস। এ সংসারে তাদের তিন সন্তান। ইভ এ দম্পতির কনিষ্ঠ কন্যা। ১৯৯৮ সালের ৯ জুলাই ক্যালিফর্নিয়ায় জন্ম। তার বড় বোন এরিন, ভাইয়ের নাম রিড। লিসা নামে তার একটি সৎবোনও রয়েছে।
ইভা পড়াশোনা করেছেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০২১ সালে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং সমাজ (সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড সোসাইটি) বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। একই বছর প্যারিসে ‘কোপের্নি’ সংস্থার হাত ধরে মডেলিং দুনিয়ায় পা রাখেন। মডেলিং জগতে পা রেখেই চমকে দেন স্টিভ-তনয়া।
অনেকে নামিদামি ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করেছেন ইভ। বিখ্যাত ব্যাগ প্রস্তুতকারী সংস্থা লুই ভিতোঁরের মডেল হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। মডেলিংয়ের পাশাপাশি অশ্বারোহী হিসাবেও খ্যাতি রয়েছে ইভের। এক সময় বিশ্বের ২৫ বছরের কম বয়সি ১ হাজার সেরা অশ্বারোহীর মধ্যে পঞ্চম স্থানে ছিলেন তিনি।
মাত্র ছয় বছর বয়সে ঘোড়ার পিঠে চড়ে দৌড় শুরু করেছিলেন স্টিভ জবস তনয়া। ঘোড়ায় চড়ার প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মেয়ে যাতে পড়াশোনায় মন দেয়, সে দিকে বরাবরই সজাগ দৃষ্টি ছিল ইভের বাবা-মায়ের। তবে গ্রীষ্মাবকাশ ও বসন্তের ছুটির সময়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য বাবা-মায়ের অনুমতি পেতেন ইভ।
ইভ যেখানে অশ্বারোহণের প্রশিক্ষণ নেন, সেই জায়গার মূল্য দেড় কোটি ডলার। ইভ প্রশিক্ষণ শুরু করার পর তার মা ওই জায়গা কিনে নিয়েছিলেন। তবে মডেল হওয়ার কোনো পরিকল্পনা কখনো ছিল না ইভের। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আগে কখনো মডেলিং করিনি। তবে প্রস্তাব পেয়ে ঘাবড়ে যাইনি। আমার মনে হয়েছিল, কেন নয়? এই প্রস্তাব আমাকে আকৃষ্ট করেছিল।”
ঢাকা/শান্ত