খেলার ছলে নলকূপে কীটনাশক ঢেলে পানি পান, হাসপাতালে ৬ শিশু
Published: 22nd, April 2025 GMT
ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার কাচারীতলা গ্রামে খেলার সময় নলকূপের পানির সঙ্গে কীটনাশক মিশিয়ে পান করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে ৬ শিশু। সোমবার রাত ৯টার দিকে তাদেরকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালে ভর্তি শিশুরা হলো- ওই গ্রামের কামিরুল শাহের ছেলে হোসাইন শাহ (৪), সাইফুল শাহের মেয়ে মরিয়ম (৭), সাগর খাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ (৩), হাসান মন্ডলের মেয়ে জান্নাতুল (৯), রতন শাহের ছেলে রোকেয়া (৯) ও মারুফ শাহের ছেলে মার্ফিয়া (৬)। বর্তমানে তারা শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
শিশুদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার দুপুরের দিকে কাচারীতলা গ্রামের রমজান মন্ডল জমিতে ঘাস মারার কীটনাশক ছিটিয়ে বোতলে কিছু ওষুধ রেখে পাশের আম বাগানে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। পরে ভুল করে ওই বোতল ফেলে বাড়িতে চলে যান তিনি। বিকেলে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি বাড়ির ছয়টি শিশু বোতলটি কুড়িয়ে পায়। তারা খেলার ছলে বোতলের ওষুধ রাস্তার পাশে থাকা নলকূপের ভেতর ফেলে এবং সেই পানি পান করে।
সন্ধ্যার দিকে রমজান মন্ডল তার ওষুধের বোতল খুঁজতে আসেন। কিছুক্ষণ পর কামিরুল শাহের চার বছরের ছেলে হোসাইন শাহের পেটে ব্যথা শুরু হয়। ওই শিশুর সঙ্গে কথা বলে নলকূপের ধারে গিয়ে কীটনাশকের বোতল পায় অভিভাবকরা। পরক্ষণেই শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে রাত ৮টার দিকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে হোসাইনের সঙ্গে কীটনাশক মিশানো পানি খাওয়া অপর পাঁচ শিশুর বমির পাশাপাশি পেটে ও গলায় ব্যথা শুরু হলে রাতেই তাদের সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই ছয় শিশুর মধ্যে হোসাইনকে ওয়াশ করা হয়েছে।
শিশু হোসাইনের মা মমতাজ খাতুন বলেন, বাচ্চার পেট ব্যথা শুরু হলেই হরিনাকুন্ডু হাসপাতালে নিই। সেখান থেকে ডাক্তার সদর হাসপাতালে পাঠায়। ওর বিষ ওয়াশ করে বের করা হয়েছে। এখন কী হবে বুঝতে পারছি না।
অপর শিশুর বাবা মারুফ শাহ বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে মেয়েটার পেটে ও গলায় ব্যথা শুরু হয়। এর কিছুক্ষণ পর বমি করতে থাকে। তখনই সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখন একটু সুস্থ আছে।
হরিনাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মেহেদী ইসলাম টিটু বলেন, শিশুরা বিষ খাওয়ার হিস্ট্রি নিয়ে সদর হাসপাতালে এসেছে। তবে তাদের শারীরিক অবস্থা প্রাথমিকভাবে শঙ্কামুক্ত মনে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে শিশুদের ভর্তি রাখা হয়েছে।
হরিনাকুন্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ রউফ খান বলেন, ঘটনাটি শোনার পর গ্রামটিতে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। অসাবধানতাবশত খেলার ছলে শিশুরা নলকূপের পানির সাথে কীটনাশক মিশিয়ে খেয়েছে। তবে বিষয়টি শত্রুতামূলক মনে হচ্ছে না। তবুও আমরা তদন্ত করছি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঝ ন ইদহ নলক প র হ স ইন
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।
ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদ, বিক্ষোভসেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।
কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।