অস্ট্রেলিয়ায় আগাম ভোট গ্রহণ শুরু, সামান্য এগিয়ে আলবানিজের দল
Published: 22nd, April 2025 GMT
অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ নির্বাচনের আগাম ভোট গ্রহণ আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি বিরোধী জোটের তুলনায় সামান্য এগিয়ে রয়েছে বলে সাম্প্রতিক জরিপে জানা গেছে। আগামী ৩ মে শনিবার ভোটের দিনের আগেই প্রায় ৫০ শতাংশ ভোটার ডাকযোগে বা আগাম ভোট দিয়ে দেবেন।
সিডনির একটি কেন্দ্রে আগাম ভোট দিতে আসা বাংলাদেশিপ্রবাসী ইস্টলেকের বাসিন্দা হায়দার খান বলেন, ‘ভোটের দিন কাজে যেতে হবে বলে আজই ভোট দিয়ে দিলাম।’
লেবার পার্টির নির্বাচনী সমন্বয়ক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রিজওয়ান চৌধুরী ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘গত জানুয়ারিতে আমরা যখন ৬ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিলাম, তখন এই উত্তরণ আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। বর্তমানে ৯ পয়েন্ট এগিয়ে থাকলেও অস্ট্রেলিয়ার প্রেফারেন্সিয়াল ভোটিং পদ্ধতি অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। তবে আমরা খুবই আশাবাদী, এবারও লেবার পার্টিই সরকার গঠন করবে।’
অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেতা পিটার ডাটনের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার পেছনে বিশেষজ্ঞরা দুটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। প্রথমত, তাঁর কিছু নীতিকে যুক্তরাষ্টের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির অনুরূপ মনে করেন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকেরা। দ্বিতীয়ত, সরকারি চাকরিজীবীদের ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ সুবিধা বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।
আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অভিবাসন আইনজীবী সুরজিত রায় বলেন, ২০১৯ সালের নির্বাচনে লেবার পার্টি যখন জয়ের খুব কাছাকাছি ছিল, তখন শেষ মুহূর্তে স্কট মরিসনের নেতৃত্বে লিবারেল পার্টি জয়ী হয়েছিল। এই ইতিহাস আলবানিজকে এবার সতর্ক করেছে। এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলেই মনে হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তৃতীয় ও শেষ টেলিভিশন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে আলবানিজ ও ডাটন সরাসরি মুখোমুখি হবেন। তবে পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর সব দল নির্বাচনী প্রচার কিছুটা মন্থর করেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আলব ন জ
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার
দেশের প্রতি চারজনের একজন মানুষ এখনো বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে। জাতীয় বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই) বিষয়ক এক সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিকল্পনা কমিশনে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) পক্ষ থেকে ‘বাংলাদেশের জাতীয় বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করেন জিইডির সদস্য (সচিব) মনজুর হোসেন। আলোচক ছিলেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক এ কে এনামুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আখতার এবং বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বিবিএসের ২০১৯ সালের মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভের (এমআইসিএস) তথ্য ব্যবহার করে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই) নিরূপণ করা হয়েছে। বহুমাত্রিক দারিদ্র্য হলো দারিদ্র্য পরিমাপের একটি বিস্তৃত পদ্ধতি, যা শুধু আয় বা ভোগের মতো একক মাত্রার বাইরে গিয়ে দারিদ্র্যকে তার বিভিন্ন দিক থেকে বুঝতে সাহায্য করে। বাংলাদেশের এ সূচকে তিনটি মাত্রা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যাতে জীবনযাত্রার মান, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়েছে। এই মাত্রাগুলোকে ১১টি আলাদা সূচকে ভাগ করা হয়েছে। যেমন জীবনযাত্রার মানের মধ্যে রয়েছে—বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন, খাওয়ার পানি, বাসস্থান, রান্নার জ্বালানি, সম্পদ এবং ইন্টারনেট সংযোগ।
এমপিআই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে ২৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে রয়েছে, যা সংখ্যায় প্রায় ৩ কোটি ৯৮ লাখ। গ্রামীণ এলাকায় এই হার ২৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ, আর শহরে ১৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ। সিলেট বিভাগে এই দারিদ্র্যের হার সর্বোচ্চ, ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর পাঁচটি জেলায় ৪০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার। জেলাগুলো হলো—বান্দরবান, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ, রাঙামাটি ও ভোলা। শিশুদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ২৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এ হার ২১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
প্রধান অতিথি আনিসুজ্জামান চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে এমপিআই-কে দারিদ্র্য দূরীকরণের একটি নতুন ও উদ্ভাবনী কৌশল হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই পদ্ধতি সর্বাধিক ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করতে সহায়তা করবে। তিনি এ সূচককে নীতিনির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। এ ছাড়া কিছু জেলায় দারিদ্র্যের হার বেশি হওয়ার পেছনের কারণ অনুসন্ধানে আরও গবেষণা করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এমপিআই ব্যবস্থাটি আয়ভিত্তিক দারিদ্র্য মাপকাঠিকে সম্পূরকভাবে সহায়তা করবে এবং এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেবে। সভাপতির বক্তব্যে মনজুর হোসেন জানান, জিইডি ভবিষ্যতেও নিয়মিত এই সূচক প্রকাশ করবে এবং নীতিনির্ধারণে এটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হবে।