Samakal:
2025-04-30@22:59:59 GMT

সুন্দরবন সুরক্ষায় বিলম্ব নহে

Published: 22nd, April 2025 GMT

সুন্দরবন সুরক্ষায় বিলম্ব নহে

সুন্দরবনের চতুষ্পার্শ্বের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ইসিএর ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে নূতন শিল্প কাঠামো নিষিদ্ধের যেই সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করিয়াছে, উহাকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা জানি, প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিবিধ কারণে হুমকির সম্মুখীন। বস্তুত সুন্দরবন ঘিরিয়া পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ অনুসারে ১৯৯৯ সালে দেশের প্রথম ইসিএ ঘোষণা করা হইয়াছিল। এই বন সুরক্ষায় প্রতিবেশ অঞ্চলের চতুষ্পার্শ্বে এই প্রকার পরিবেশ গঠন করা জরুরি হইলেও উহা বাস্তবায়ন না হওয়া বিস্ময়কর। বিশ্বব্যাপী তো বটেই, এমনকি প্রতিবেশী ভারতেও বন ও বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ কৌশল হিসাবে যথায় এই সীমারেখা ১০ হইতে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত নির্ধারণ করা হইয়া থাকে, তথায় দেশে উহা উপেক্ষিত হইয়াছিল কেন?

২০১৭ সালে আগস্টে ঘোষিত হাইকোর্টের এক রায়েও সুন্দরবনের চতুষ্পার্শ্বে ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে নূতন কোনো শিল্পকারখানা স্থাপন না করিবার নির্দেশনা দেওয়া হইয়াছিল। উক্ত রায়ে এই সীমানার মধ্যে থাকা শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থানান্তর করিতে বলা হইলেও উহা বাস্তবায়ন হয় নাই।

২০২১ সালের শেষ দিকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় যখন সুন্দরবনের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার সীমা হ্রাসের ‘পর্যালোচনা’ করিয়াছিল তখনও এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা ঐ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছিলাম। আমাদের বক্তব্য ছিল, ইসিএর পর্যালোচনা হইতে পারে কেবল ইতোমধ্যে স্থাপিত কলকারখানা স্থানান্তরকরণ, নূতন স্থাপনা রোধকল্পে এবং উক্ত এলাকা হ্রাসকরণের অর্থ হইবে রাষ্ট্রের স্বঘোষিত আইন ও নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের অবস্থান।

স্বস্তির বিষয় হইল, সোমবার সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত জাতীয় পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন কমিটির নির্বাহী সভায় সুন্দরবনের পরিবেশগত সুরক্ষায় ২০১৭ সালের জাতীয় পরিবেশ কমিটির ৩.

৪.৪ নম্বর সিদ্ধান্ত এবং ২০২১ সালের নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হইয়াছে। একই সঙ্গে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ দ্বারা সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটার ইসিএ এলাকার মধ্যে স্থাপিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহের পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ করিয়া তদনুযায়ী সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া আমরা মনে করি।

স্বয়ং বন বিভাগের ২০১৮ সালের প্রতিবেদনেই স্পষ্ট, সুন্দরবনের ইসিএ এলাকায় অন্তত দুইশত শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়িয়া উঠিয়াছে, যথায় উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান ‘লাল’ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ এই সকল কারখানা ভয়াবহভাবে পানি, বায়ু ও মাটি দূষণ করিয়া থাকে। সেই সকল কারখানা বন্ধ হয় নাই। উপরন্তু এই প্রকার কারখানার সংখ্যা যে আরও বৃদ্ধি পাইয়াছে, বলিবার অপেক্ষা রাখে না। সুন্দরবনকে সর্বাপেক্ষা নাজুক করিয়াছে উহার ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র লইয়া পরিবেশকর্মীদের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও তৎকালীন সরকার উহা নির্মাণ করিয়াছিল। যাহার ফলে উন্মুক্তভাবে কয়লা পরিবহনে দূষিত হইতেছে সুন্দরবন এলাকার নদী ও বন। যাহার বিরূপ প্রভাব পড়িয়াছে জলজ ও বনজ জীববৈচিত্র্যের উপর।

আমরা বিশ্বাস করি, সুন্দরবন সুরক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ যথাযথরূপে প্রতিপালিত হইবে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রাকৃতিক সম্পদের চতুষ্পার্শ্বের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার মধ্যে নূতন করিয়া শিল্পকারখানা যাহাতে গড়িয়া না উঠে, উহা নিশ্চিত করিতে হইবে। সুন্দরবন যদ্রূপ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ন্যায় দুর্যোগে আমাদের প্রাকৃতিক বর্মরূপে ভূমিকা পালন করিয়া থাকে, তদ্রূপ ইহার বনজ সম্পদ দেশের অর্থনীতিতে বিপুল অবদান রাখে। ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্বঐতিহ্যস্থল ও রামসার সাইটের মর্যাদাপ্রাপ্ত সুন্দরবনে ইতোপূর্বে যেই ক্ষতি সাধিত হইয়াছে, নূতন করিয়া মনষ্যসৃষ্ট এইরূপ অবিমৃষ্যকারিতা রোধ করিতে হইবে। ইসিএ সীমানার মাধ্যমেই ইহার সূচনা হইতে পারে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন দরবন র ব শগত স পর ব শ ণ কর য় কর য় ছ ন এল ক হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন জলসীমানা প্রায় দেড়শো কিলোমিটার। ভারতীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ সীমানা দিয়ে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাড়তি তৎপরতা নেওয়া হচ্ছে। খবর আনন্দবাজারের।

খবরে বলা হয়েছে, নদী ও বনভূমি এলাকায় সীমান্ত বরাবর বিএসএফ মোতায়েন আছে। ভাসমান বর্ডার আউটপোস্ট, বঙ্গোপসাগর অংশে কোস্ট গার্ডের নজরদারি চলছে। ড্রোন, সেন্সর ও ক্যামেরা, কিছু জায়গায় নাইট ভিশন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, পুলিশের তরফেও উপকূল এলাকায় দিনরাত নজরদারি চলছে।

উপকূল থানাগুলোর পক্ষ থেকে নদীপথে নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে। রাতেও উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে নজর রাখা হচ্ছে। নদীপথে কোনো জলযান দেখলেই তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। মৎস্যজীবীদের পরিচয়পত্রও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নদী বা সমুদ্রে এখন মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা চলছে। মৎস্যজীবীদের জলযান চলাচল করার কথা নয়। তাই জলযান দেখলেই তল্লাশি চলছে। বাংলাদেশি জাহাজগুলোতেও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।

সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও নালাভাট বলেন, আগেও উপকূলবর্তী এলাকায় পুলিশের নজরদারি চলত। এখন বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। দু’বেলা নদী ও স্থলপথে পুলিশের টহল বৃদ্ধি পেয়েছে। নাকা চেকিং হচ্ছে। চলছে তল্লাশিও।

উত্তর ২৪ পরগনাতেও উপকূল এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বেড়েছে জল ও স্থলসীমান্তে। জল, ভূমি ও আকাশে অত্যাধুনিক ইজ়রাইল রাডারের মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী।

ইতোমধ্যে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহার করে ভারতকে আক্রমণ করতে পারে সশস্ত্র সংগঠনগুলো। ফলে সুরক্ষা বাড়াতে বিএসএফের তৎপরতা শুরু হয়েছে। বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর থেকে হিঙ্গলগঞ্জের হেমনগর কোস্টাল থানা পর্যন্ত ৯৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। তার মধ্যে ৫০ কিলোমিটার জলসীমান্ত। স্থলসীমান্ত ৪৪ কিলোমিটার। সীমান্ত সুরক্ষায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনের মধুসহ ২৪ পণ্য পেল জিআই সনদ
  • সুন্দরবনে হরিণ শিকারে যাওয়া ব্যক্তির লাশ উদ্ধার, মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা
  • টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীরাও উচ্চতর গ্রেড পাবেন
  • ‘তোর সময় শেষ’ লেখা চিঠির সঙ্গে কাফনের কাপড় পাঠিয়ে সাংবাদিককে হুমকি
  • কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে
  • সৌন্দর্যের সন্ধানে সুন্দরবনের গহীনে : দ্বিতীয় পর্ব
  • সুন্দরবনে অস্ত্রসহ বনদস্যু আটক
  • উপকূল রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ধস, প্লাবনের আশঙ্কা সুন্দরবন তীরবর্তী জনপদে