Samakal:
2025-06-15@23:48:22 GMT

সুন্দরবন সুরক্ষায় বিলম্ব নহে

Published: 22nd, April 2025 GMT

সুন্দরবন সুরক্ষায় বিলম্ব নহে

সুন্দরবনের চতুষ্পার্শ্বের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ইসিএর ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে নূতন শিল্প কাঠামো নিষিদ্ধের যেই সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করিয়াছে, উহাকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা জানি, প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিবিধ কারণে হুমকির সম্মুখীন। বস্তুত সুন্দরবন ঘিরিয়া পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ অনুসারে ১৯৯৯ সালে দেশের প্রথম ইসিএ ঘোষণা করা হইয়াছিল। এই বন সুরক্ষায় প্রতিবেশ অঞ্চলের চতুষ্পার্শ্বে এই প্রকার পরিবেশ গঠন করা জরুরি হইলেও উহা বাস্তবায়ন না হওয়া বিস্ময়কর। বিশ্বব্যাপী তো বটেই, এমনকি প্রতিবেশী ভারতেও বন ও বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ কৌশল হিসাবে যথায় এই সীমারেখা ১০ হইতে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত নির্ধারণ করা হইয়া থাকে, তথায় দেশে উহা উপেক্ষিত হইয়াছিল কেন?

২০১৭ সালে আগস্টে ঘোষিত হাইকোর্টের এক রায়েও সুন্দরবনের চতুষ্পার্শ্বে ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে নূতন কোনো শিল্পকারখানা স্থাপন না করিবার নির্দেশনা দেওয়া হইয়াছিল। উক্ত রায়ে এই সীমানার মধ্যে থাকা শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থানান্তর করিতে বলা হইলেও উহা বাস্তবায়ন হয় নাই।

২০২১ সালের শেষ দিকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় যখন সুন্দরবনের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার সীমা হ্রাসের ‘পর্যালোচনা’ করিয়াছিল তখনও এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা ঐ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছিলাম। আমাদের বক্তব্য ছিল, ইসিএর পর্যালোচনা হইতে পারে কেবল ইতোমধ্যে স্থাপিত কলকারখানা স্থানান্তরকরণ, নূতন স্থাপনা রোধকল্পে এবং উক্ত এলাকা হ্রাসকরণের অর্থ হইবে রাষ্ট্রের স্বঘোষিত আইন ও নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের অবস্থান।

স্বস্তির বিষয় হইল, সোমবার সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত জাতীয় পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন কমিটির নির্বাহী সভায় সুন্দরবনের পরিবেশগত সুরক্ষায় ২০১৭ সালের জাতীয় পরিবেশ কমিটির ৩.

৪.৪ নম্বর সিদ্ধান্ত এবং ২০২১ সালের নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হইয়াছে। একই সঙ্গে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ দ্বারা সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটার ইসিএ এলাকার মধ্যে স্থাপিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহের পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ করিয়া তদনুযায়ী সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া আমরা মনে করি।

স্বয়ং বন বিভাগের ২০১৮ সালের প্রতিবেদনেই স্পষ্ট, সুন্দরবনের ইসিএ এলাকায় অন্তত দুইশত শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়িয়া উঠিয়াছে, যথায় উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান ‘লাল’ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ এই সকল কারখানা ভয়াবহভাবে পানি, বায়ু ও মাটি দূষণ করিয়া থাকে। সেই সকল কারখানা বন্ধ হয় নাই। উপরন্তু এই প্রকার কারখানার সংখ্যা যে আরও বৃদ্ধি পাইয়াছে, বলিবার অপেক্ষা রাখে না। সুন্দরবনকে সর্বাপেক্ষা নাজুক করিয়াছে উহার ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র লইয়া পরিবেশকর্মীদের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও তৎকালীন সরকার উহা নির্মাণ করিয়াছিল। যাহার ফলে উন্মুক্তভাবে কয়লা পরিবহনে দূষিত হইতেছে সুন্দরবন এলাকার নদী ও বন। যাহার বিরূপ প্রভাব পড়িয়াছে জলজ ও বনজ জীববৈচিত্র্যের উপর।

আমরা বিশ্বাস করি, সুন্দরবন সুরক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ যথাযথরূপে প্রতিপালিত হইবে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রাকৃতিক সম্পদের চতুষ্পার্শ্বের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার মধ্যে নূতন করিয়া শিল্পকারখানা যাহাতে গড়িয়া না উঠে, উহা নিশ্চিত করিতে হইবে। সুন্দরবন যদ্রূপ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ন্যায় দুর্যোগে আমাদের প্রাকৃতিক বর্মরূপে ভূমিকা পালন করিয়া থাকে, তদ্রূপ ইহার বনজ সম্পদ দেশের অর্থনীতিতে বিপুল অবদান রাখে। ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্বঐতিহ্যস্থল ও রামসার সাইটের মর্যাদাপ্রাপ্ত সুন্দরবনে ইতোপূর্বে যেই ক্ষতি সাধিত হইয়াছে, নূতন করিয়া মনষ্যসৃষ্ট এইরূপ অবিমৃষ্যকারিতা রোধ করিতে হইবে। ইসিএ সীমানার মাধ্যমেই ইহার সূচনা হইতে পারে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন দরবন র ব শগত স পর ব শ ণ কর য় কর য় ছ ন এল ক হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বহর নিয়ে সাবেক যুবদল নেতার সুন্দরবন ভ্রমণ

জীব ও প্রাণ-বৈচিত্র্য রক্ষার অংশ হিসেবে সুন্দরবনকে বিশ্রাম দিতে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা চলছে। ১ জুন থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এই সময়ে বনজীবী থেকে শুরু করে পর্যটক, কেউই সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন না। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবন ঘুরেছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন। তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা যুবদল ও মৎস্যজীবী দলের অন্তত ৩০ নেতাকর্মী।

গত শুক্রবার তারা ভ্রমণে যান। সুন্দরবনের কলাগাছিয়া টহল ফাঁড়িতে অবস্থানকালে নিজেদের ছবি রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে প্রবেশ নিয়ে জানতে চাইলে যুবদলের সাবেক নেতা আমিনুর রহমান জানান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব সুন্দরবনে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এডিসি পদমর্যাদার একজনের মাধ্যমে বন বিভাগের কাছ থেকে ১০ জনের অনুমতি মেলে। ওই দলে তিনি যুক্ত হওয়ার পর স্থানীয় কিছু কর্মী-সমর্থক তাঁর সঙ্গে ট্রলারে উঠে পড়েন। এ সময় তাদের আর নামিয়ে দেওয়া যায়নি। 

উপসচিব বা তাঁর জন্য নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে যাওয়া উচিত ছিল কিনা– জানতে চাইলে আমিনুর বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা চলার তথ্য আমাদের জানানো হয়নি।’ কথা বলার জন্য ওই উপসচিবের নাম ও যোগাযোগ নম্বর চাইলে তিনি দেননি।

এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের জিয়াউর রহমান বলেন, এক উপসচিবের একান্ত সচিব (পিএস) পরিচয়ে ১০ জনের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণের অনুমতি চাওয়া হয়। অনেকটা ‘অনুরোধে ঢেঁকি গেলা’র মতো করে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একই সঙ্গে কয়েক রাজনৈতিক ব্যক্তির সুন্দরবনে যাওয়ার বিষয়টি তারা জানতে পারেন। ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের এমন আবদারে তারা অসহায় হয়ে পড়েন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বহর নিয়ে সাবেক যুবদল নেতার সুন্দরবন ভ্রমণ