বাজারে এখন কাঁচা আম পাওয়া যাচ্ছে। কাঁচা আম মাখা খেতে যেমন ভালো লাগে, তেমনি এর তৈরি আচারও বেশ মজার । চাইলে কাঁচা আম দিয়ে বিভিন্ন তরকারির পদও রান্না করতে পারেন। রেসিপি দিয়েছেন আলিফ’স ডেলিকেট ডিসেজের শেফ আলিফ রিফাত
মসুরির ডালে আম-পাটশাক
উপকরণ: মসুরির ডাল ১-২ কাপ, পাটশাক ১ কাপ, আম ১টি লম্বা করে কাটা, হলুদ ১-৪ চা চামচ, কামরাঙা মরিচ ১টি, পেঁয়াজ কুচি ১ টেবিল চামচ, রসুন কুচি ১ চা চামচ, তেল ১ টেবিল চামচ।
প্রস্তুত প্রণালি: ডাল ধুয়ে হলুদ-লবণ দিয়ে সেদ্ধ করতে হবে। ডাল ভালো করে গলে গেলে এতে লম্বা করে কাটা আম ও পাটশাক দিতে হবে। আম ও শাক সেদ্ধ হয়ে গেলে তেল গরম করে পেঁয়াজ-রসুনের বাগাড় দিতে হবে। এবার বোম্বাই মরিচ কেটে ১টি বলক উঠলে নামিয়ে ফেলতে হবে। তীব্র গরমে কাঁচা আম, পাটশাক দিয়ে রান্না করা এ ডাল-ভাতের সঙ্গে খেতে অনেক মজা।
শজিনা ডাঁটায় কাঁচা আম
উপকরণ: শজিনা ডাঁটা ৪-৫টি, মাঝারি সাইজের আলু ২টি, কাঁচা আম লম্বা করে কাটা ১টি, পেঁয়াজ কুচি ২টি, সরিষা বাটা ১ টেবিল চামচ, পোস্ত বাটা ১ টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ বাটা ৩-৪টি, কালিজিরা ১-৩ চা চামচ, জিরা ১-৩ চা চামচ, শুকনা মরিচ ২-৩টি, হলুদ-মরিচ গুঁড়া সামান্য, সরিষার তেল ২-৩ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, ধনিয়া পাতা কুচি সামান্য, চিনি সামান্য।
প্রস্তুত প্রণালি: শজিনা ডাঁটা লম্বা লম্বা করে কেটে নিতে হবে। এবার কড়াইয়ে তেল দিয়ে আলু ও শজিনা ডাঁটা ভেজে নিতে হবে। ওই তেলে জিরা, কালিজিরা ও মরিচের ফোড়ন দিতে হবে। এবার সরিষা, পোস্ত বাটা, হলুদ-মরিচ গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। মসলার কাঁচা গন্ধ দূর হলে ভেজে রাখা আলু, শজিনা ডাঁটা ও আম দিয়ে কষাতে হবে। এবার দেড় কাপ গরম পানি দিয়ে সব সবজি সেদ্ধ করতে হবে। পানি শুকিয়ে ঝোল মাখামাখা হলে চিনি-ধনিয়া পাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে। ইচ্ছে হলে সামান্য ঘি ওপরে ছড়িয়ে পরিবেশন করা যায়।
কাঁচা আম দিয়ে রুই মাছের ঝোল
উপকরণ: রুই মাছ ৪ পিস, কাঁচা আম ঝুরি করে কাটা ২-৩ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ মিহি কুচি ১-৩ কাপ, সরিষা বাটা ২ টেবিল চামচ, কালিজিরা ১-২ চা চামচ, কাঁচামরিচ বাটা ৩-৪ টি, হলুদ গুঁড়া ১-২ চা চামচ, শুকনো মরিচ বাটা ১ চা চামচ, সরিষার তেল ২-৩ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, চিনি ১-৫ চা চামচ।
প্রস্তুত প্রণালি: মাছ ভালোমতো ধুয়ে সামান্য লবণ-হলুদ মাখিয়ে রাখতে হবে। এবার কড়াইয়ে তেল দিয়ে সরিষার তেল গরম করতে হবে। তেল গরম হলে কালিজিরার ফোঁড়ন দিতে হবে। এবার পেঁয়াজ কুচি বাদামি করে ভাজতে হবে। একে একে সরিষা বাটা, কাঁচামরিচ বাটা, হলুদ-মরিচ গুঁড়া, স্বাদমতো লবণ দিয়ে ভালোমতো কষাতে হবে। মসলার কাঁচা গন্ধ দূর হলে কেটে রাখা আম দিয়ে আবারও কষাতে হবে। এবার লবণ-হলুদ দিয়ে মাখিয়ে রাখা মাছ দিয়ে খুব সাবধানে কষাতে হবে। ১ কাপ গরম পানি ও চিনি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে ফেলতে হবে। গরম গরম ভাত দিয়ে খেতে সুস্বাদু এ আম দিয়ে রুই মাছের ঝোল।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়
‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘লিচুর বাগানে’ প্রকাশের পর রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। কফি শফ থেকে বাস, মেট্রোরেল আশপাশে কান পাতলে গানটা শোনা যাচ্ছে। কেউ না কেউ শুনছেন। সামাজিক মাধ্যমের স্টোরি ও রিলসেও গানটি ভেসে বেড়াচ্ছে। চরকি ও এসভিএফের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত গানটির আজ পর্যন্ত (১২ এপ্রিল ২০২৫) ভিউ হয়েছে যথাক্রমে ১২ মিলিয়ন ও ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন।
উচ্ছ্বসিত অনেক দর্শক গানটি নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। তাহসিন নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘গানটির প্রতিটি সুর, দৃশ্য ও পরিবেশনায় বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অপূর্ব রূপ ফুটে উঠেছে। যাত্রাপালার ফিল্মের আবহে তৈরি এই গানটি যেন গ্রামীণ বাংলার প্রাণস্পন্দন তুলে ধরেছে। লোকেশন থেকে শুরু করে কস্টিউম, প্রতিটি ডিটেইলে আছে নিখুঁত যত্ন।’
গানটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে খুনসুটিও চলছে। বন্ধুকে মেনশন দিয়ে কেউ যেমন প্রশ্ন করছেন, ‘কী রে, বেড়া ডিঙাতে পারলি?’ আবার কেউ জিজ্ঞেস করছেন বল তো, ‘“লিচুর বাগানে” কেন “পিরিতের বেড়া” দিতে হয়?’
প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক। শুরুতেই ‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, ‘কে এই ছত্তার পাগলা’ শীর্ষক প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। গবেষক সরোজ মোস্তফার মতে ‘কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুরও বাগানে’ পঙ্ক্তির রচয়িতা ও সুরকার ছত্তার পাগলা। তবে সংগীতগবেষক গৌতম কে শুভর মত ভিন্ন। তাঁর মতে, ‘এটি মূলত প্রচলিত ঘেটু গান। “কে দিল পিরিতির বেড়া লিচুর বাগানে?” অংশটি মূল গানের অংশ। ছত্তার পাগলা নিজের মতো করে এর সঙ্গে কথা সংযোজন করেছেন। নেত্রকোনায় ছত্তার পাগলার লেখা রূপটিই বিখ্যাত হয়েছে।’ ২০১৪ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন ছত্তার পাগলা। জীবদ্দশায় রচনা ও সুরারোপ করেছেন কয়েক শ গান। মৃত্যুর বছর তিনেক আগে তাঁর কাছ থেকে গানটি শুনে হাতে লিখে রেখেছিলেন আল মামুন চৌধুরী।
আল মামুন চৌধুরীর লেখা অনুযায়ী গানটির কথা:
কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে
লিচুরও বাগানে গো সই…লিচুরও বাগানে …(ঐ)
পাখি খাইছ না লিচু, বন্দে খাইবো
বন্দে লিচু খাইয়া, খুশি হইবো
আমার কাছে আইসা কইবো
কত শান্তি দিবো আমার মনেপ্রাণে (ঐ)
ছোট ছোট লিচুগুলি, বন্দে তুলে আম্বো তুলি
বন্দে দেয় গো আমার মুখে,
আমি দিতে চাই বন্ধুর মুখের পানে…(ঐ)
মিষ্টি লিচু খাইয়া বন্দে, বাঁশি বাজায় মন আনন্দে
আমার মনে লাগে সন্দে বন্ধু সম্ভব জাদু জানে (ঐ)
বাঁশি হাতে পলায় মালা, তারে চায় ছত্তার পাগলা,
করব লইয়া উলামেলা, (২) প্রাণবন্ধুর সনে…(ঐ)
সরল অর্থে ‘বেড়া’ হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা তথা বাধা তৈরির উপকরণ। আর ‘পিরিতের বেড়া’ মানে ভালোবাসায় বাধা। কিন্তু ভালোবাসার এই বাধা তথা প্রতিবন্ধকতা ‘লিচুর বাগানে’ কেন? কবিতা তথা গানে অর্থের তারতম্য অর্থের অনুগত না হয়ে বোধ কিংবা ভাবনার পরবশে প্রস্ফুটিত হয়। ব্যক্তিবিশেষে তা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ লাভ করে, ভিন্ন ভিন্ন মূল্য পায়।
আরও পড়ুন‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, কে এই ছত্তার পাগলা ০৬ জুন ২০২৫‘কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে’ একটি ‘ঘাটু গান’ বা ‘ঘেটু গান’। এই গান প্রসঙ্গে জানা যায়, এই গানের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নৃত্য। অল্প বয়সী একটি ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে তার নৃত্যের মধ্য দিয়ে ঘেটু গান পরিবেশিত হতো। সঙ্গে থাকত ঢোল, হারমোনিয়াম, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। কয়েকটি ‘ঘেটু গানে’র দৃষ্টান্ত দেখা যাক।
(১)
‘তুই আমারে চিনলে নারে
আমি তো রসের কমলা।
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি
মধ্যে নলের বেড়া।’
(২)
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু
পান খাইলায়না
এক বালিশে দুইটি মাথা
সুন্দর কইরা কওরে কথা।
গানগুলো থেকে উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না যে ‘ঘেটু গানে’ যেমন ভাষার সারল্য আছে, তেমনিভাবে রূপকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যাপিত জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা নানা উপকরণ। আর এ ক্ষেত্রে গান রচনার সময় রচয়িতা তাঁর আশপাশ থেকেই গান নির্মাণের উপকরণগুলো যে নিয়ে থাকবেন, সেই ধারণাও পাওয়া যায়। ‘লিচুর বাগানে’ গানের ক্ষেত্রেও বোধ করি এটা ঘটেছে। তাই এই গানে যেমন ‘লিচু বাগানে’র কথা আছে, একইভাবে আছে ‘পাখি’, ‘বাঁশি’ ও ‘লিচু’র কথাও। পাখিকে লিচু না খাওয়ার অনুরোধ করলেও পাখি যেন খেতে না পারে সে কারণেই যে বেড়া দেওয়া হয়েছে; সেই ব্যথাও গানটিতে ফুটে উঠেছে। সব মিলিয়ে ‘লিচুর বাগান’ শেষ পর্যন্ত ‘লিচুর বাগানে’ সীমাবদ্ধ থাকেনি। হয়ে উঠেছে ভালোবাসার প্রতীক।
কথায় আছে, ভালোবাসা জয় করে নিতে হয়। জিতে নেওয়ার মধ্যেই আছে অপার আনন্দ। ভালোবাসায় প্রতিবন্ধকতা থাকাটা মোটেও দোষের নয়। বরং বাধা না থাকাটাই যেন আশ্চর্যের। একইভাবে ভালোবাসা জিতে নেওয়ার পরও পেয়ে গেছি বলে হাল ছেড়ে দিলে চলে না। ‘লিচুর বাগান’কে এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করলে, ‘লিচুর বাগানে’ ‘পিরিতের বেড়া’ তথা ভালোবাসার বেষ্টনী দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কেননা ‘ভালোবাসা’কে ভালোবাসা দিয়েই আগলে রাখতে হয়। প্রবল যত্নে আঁকড়ে রাখতে হয়। যেন কোনো কৌতূহলেই তা দুলে না ওঠে, হারিয়ে না যায়।
আরও পড়ুনসাবিলা তো ‘লিচুর বাগানে’ দিয়ে কী যে আগুন লাগিয়ে দিল...০৫ জুন ২০২৫