সোমবার বেলা ১১টা। কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে বিজয়পুর রেলগেট এলাকায় যেতেই চোখে পড়ল কয়েক শ মানুষের জটলা। সেখানে কেউ ক্রেতা, কেউ বিক্রেতা। একটু কাছে যেতেই চোখে পড়ল ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দর-কষাকষি চলছে। তবে সেখানে কোনো পণ্য নেই, এরপরও বেচাকেনা যেন জমজমাটভাবেই চলছে। কথা বলতে গিয়ে জানা গেল, এখানে বিক্রি হয় মানুষের শ্রম।

সেখানে থাকা ব্যক্তিদের কারও হাতে কাঁধের ভার, আবার কারও হাতে কাস্তে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ‘শ্রম বিক্রি’ করতে এসেছেন তাঁরা। বর্তমানে বোরো ধান কাটার মৌসুম চলছে। এই সময়ে ‘শ্রম বিক্রির হাট’ জমজমাট হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর বাজার লাগোয়া রেলগেট এলাকার এই শ্রম বিক্রির হাট অর্ধশত বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। বোরো ধান রোপণ ও কাটার সময় শ্রমিকদের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ফলে বোরো মৌসুমসহ বছরের বিভিন্ন সময়ে এখানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষিশ্রমিকেরা আসেন। হাটে কুমিল্লা ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে গৃহস্থরা আসেন কৃষিশ্রমিক নেওয়ার জন্য।

হাটে আসা বিজয়পুর এলাকার গৃহস্থ আবদুল খালেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাড়ি পাশের এলাকায়। ছোটবেলা থেকেই এখানে মানুষের হাট দেখে আসছি। এই হাটে সারা বছরই লোক বিক্রি হয়। তবে বর্তমানে ধান কাটার সময়ে লোকের দাম বেশি। যেমন আজকে লোক নিলাম ৯০০ টাকা দিয়ে। তাঁর থাকার ব্যবস্থার পাশাপাশি তিন বেলা খাবার দিতে হবে। সেই হিসাবে একজন শ্রমিকের পেছনে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা খরচ পড়বে, যা অনেক বেশি।’

বোরো ধান কাটার সময়ে চাহিদা বেশি থাকায় মজুরি বেশি হয়। এতে খুশি শ্রমিকেরা। অন্যদিকে গৃহস্থরা বলছেন, কৃষিশ্রমিকদের এক দিনের খরচ প্রায় দেড় মণ ধানের দামের সমান।

বোরো মৌসুমসহ বছরের বিভিন্ন সময় কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর বাজার লাগোয়া রেলগেট এলাকার এই শ্রম বিক্রির হাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষিশ্রমিকেরা আসেন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব জয়প র

এছাড়াও পড়ুন:

সিজারের সময় নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সিজারিয়ান অপারেশনের সময় এক নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে ক্লিনিকের চেয়ারম্যান ও আবাসিক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে বিষয়টি নিয়ে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে নবজাতকসহ তাদেরকে ক্লিনিক থেকে বের করে দেওয়া হয়। ওই রাতেই শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম হাসপাতালে) নেওয়া হয়। 

অভিযুক্ত চিকিৎসক পার্থ সমদ্দার কলাপাড়া পৌর শহরের জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আবাসিক চিকিৎসক এবং চেয়ারম্যান।শিশুটির

স্বজনদের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) প্রসব বেদনা নিয়ে জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন লালুয়ার ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার মেয়ে ও রফিকুলের স্ত্রী মিম বেগম। ওই রাতেই মিমের সিজারিয়ান অপারেশন করেন ডা. পার্থ সমদ্দার। সিজারের কিছুক্ষণ পরই টিকার কথা বলে নবজাতকের পায়ে একটি ইনজেকশন পুশ করা হয়। পরের দিন থেকেই নবজাতকের বাম পা ফুলতে শুরু করে এবং কান্না বাড়তে থাকে। বিষয়টি চিকিৎসক ও নার্সদেরকে অবহিত করলে তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। উল্টো ওই ক্লিনিকের কর্মী ও নার্সরা নবজাতকের স্বজনদের সঙ্গে অসদাচরণের পাশাপাশি তাদের ক্লিনিক থেকে বের করে দেন। পরে অন্যত্র এক্সরে করে জানা যায়, সিজারের সময় নবাজতকের পা ভেঙে ফেলেছেন চিকিৎসক। 

নবজাতকের মা মিম আক্তার বলেছেন, বাচ্চা অনবরত কান্না করলে প্রথমে নার্স ও পরে চিকিৎককে অবহিত করা হয়। বাচ্চার বাম ফুলে গেলে তা জানানো হয়। কিন্তু, তারা এর কোনো প্রতিকার না করে আমাদের ধমকাতে থাকেন। ক্লিনিক ছেড়ে চলে যেতে চাপ প্রয়োগ করেন। 

নবজাতকের নানা সিদ্দিক বলেন, টিকার কথা বলে আমার নাতিকে শরীর অবশ করার ইনজেকশন দিয়েছিল নার্সরা। ইনজেকশনের কার্যকারিতা শেষ হওয়ার পরপরই আমার নাতি অনেক কান্না করে। আমার স্ত্রী নার্সদের বললে তারা তাকে মারধরের চেষ্টা করে। আমাদের সঙ্গে ক্লিনিকের সবাই অনেক খারাপ আচরণ করেছে। এভাবে রোগীদের সঙ্গে প্রাইভেট ক্লিনিকের কর্মকর্তারাও যদি অসদাচরণ করে, তাহলে আমরা কোথায় যাব?

সিজারের সময় নবজাকের পা ভাঙেনি, দাবি করে জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান ডা. পার্থ সমদ্দার বলেছেন, আমি শিশু বিশেষজ্ঞ নই। নবজাতককে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেছেন, যদি সিজারিয়ান অপারেশনের প্রশিক্ষণ থাকে, তাহলে এনেস্থেসিস্টও সিজার করতে পারেন। তবে, এনেস্থেসিস্ট একাই সিজারিয়ান অপারেশন করতে পারেন না।

ঢাকা/ইমরান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিজারের সময় নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ