বাবার মৃত্যুর শোক বুকে চেপে রেখেই এসএসসি পরীক্ষায় বসতে হলো খাইরুল বেপারী নামের এক শিক্ষার্থীকে। বুধবার সকালে বাবা আমজেদ বেপারীর (৬৩) মরদেহ বাড়িতে রেখেই সে পরীক্ষাকেন্দ্রে যায়।

খাইরুল বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার পুটিয়াখালী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। তার বাবার নাম আমজেদ বেপারী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে খাইরুল সবচেয়ে ছোট। তাদের বাড়ি বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভাগলের পাড় গ্রামে।

এলাকাবাসী জানায়, বুধবার সকালে বাবার মরদেহ বাড়িতে রেখেই খাইরুল তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে যায় বিবিচিনি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে। সে ৬ নম্বর কক্ষে পরীক্ষা দেয়। আসর নামাজের পর তার বাবার দাফন করা হবে।

পুটিয়াখালী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.

বজলুর রহমান বলেন, ‘মৃত্যুর খবর শুনে আমি খাইরুলের বাড়িতে যাই। তাকে মানসিকভাবে সান্ত্বনা দেই। পরে সে সাহস নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়।’

খাইরুলের পরিবার সূত্রে জানা যায়, আমজেদ বেপারী বুধবার  রাত ৩টার দিকে হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যান তিনি। আমজেদ বেপারী পেশায় দিনমজুর ছিলেন। তার উপার্জিত অর্থ দিয়েই সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চলতো। আমজাদের মৃত্যুতে তার পরিবার অসহায়ত্বের মধ্যে পড়ে গেল।

বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বশির গাজী বলেন, ‘খাইরুল বাবার মৃত্যুর খবর আমরা পেয়েছি। সে যেন সব পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে এবং ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারে, সে জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোঁজ-খবর রাখা হবে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বরগ ন এসএসস আমজ দ ব প র পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

ফুডপ্যান্ডার ডেলিভারি বয় থেকে সফল ফ্রিল্যান্সার আবু সালেহ, মাসে আয় কত জানেন

পরিবারের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। অভাবের সংসারে নিজেকে একরকমের বোঝাই মনে করতেন। কিছু একটা করা দরকার। পরিস্থিতি যেন আবু সালেহ আহমেদকে দিন দিন আরও বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অনেক স্বপ্ন দেখেছেন, সেই স্বপ্নে নিজেকে অটুট রেখেছেন। আর পাড়ি দিতে হয়েছে অনেকটা পথ। ধৈর্য নিয়ে নিজের স্বপ্নের দিকে তাকিয়ে আজ সালেহ নিজেকে বলতেই পারেন একজন সফল ফ্রিল‍্যান্সার। কেননা এখন তিনি মাসে আয় করেন তিন লাখ টাকা।

আবু সালেহ আহমেদ। ডাকনাম আফনান। বাবা মো. কুতুব উদ্দিন শেখ মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। এখন অবসর নিয়েছেন। মা সাজেদা খাতুন গৃহিণী। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার তারাপুর গ্রামের আবু সালেহ আহমেদ এখন অবশ্য এলাকায় থাকেন না। থাকেন ঢাকার কাঁঠালবাগানে। এখান থেকেই আফনান গড়ে মাসিক তিন লাখ টাকা আয় করেন। ছোট্ট একটা অফিসও নিয়েছেন, যেখানে চারজন ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থান করেছেন।

২০১৬ সালে সেনগ্রাম ফাজিল মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাসের পর ২০২০ সালে লক্ষ্মীপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন আবু সালেহ আহমেদ। এখন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে স্থাপত্য বিভাগে চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। ছাত্রাবস্থাতেও তাঁর মাসিক আয় কোনো কোনো মাসে পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে যায়। ২৭ বছর বয়সী আবু সালেহ আহমেদ বিয়ে করেছেন গত বছর। স্ত্রীর নাম ফাতেমা জোহরা।

পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াই ছিল কঠিন

আফনান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আসলে মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাস করে বের হয়েছি। তখন ইচ্ছা থাকলেও আমাদের সামর্থ্য ছিল না ভালো জায়গায় পড়ার। আমার চার বছর যে সম‍য়টা কেটেছে, আসলে খুব কষ্টে কেটেছে। কলেজে আমি এক্সট্রা কারিকুলামে ভালো ছিলাম, ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি ছিলাম, বেশ কিছু জায়গায় বিতর্ক করে চাম্পিয়নও হয়েছি। স‍্যারদের চোখে পড়েছি। একসময় আর পেরে উঠছিলাম না, তাই দুই বছর পড়তে পড়তেই টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) নিতে গিয়েছিলাম। লক্ষ্মীপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষকেরা আমার কথা শুনে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। যার ফলে আমি পড়াশোনাটা শেষ করেছি।’

আবু সালেহ আহমেদ প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘দিনগুলো কঠিন ছিল। টিউশনি করাতাম। ১ হাজার ৫০০ টাকা পেতাম। ১ হাজার টাকা মেসভাড়া ও ৫০০ টাকায় খাওয়া। সকালে ও রাতে খেতাম। মাসে তা–ও খাওয়ার বিল আসত ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। মেসের বাকিরা সেটা দিয়ে দিত। তারপর একদিন ২ হাজার ৫০০ টাকার একটা টিউশনি পেয়ে একটু যেন শক্তি পেলাম। এভাবেই আমার ডিপ্লোমার চার বছর কেটেছে।’

একবুক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায়

২০২০ সালে ডিপ্লোমা পড়া শেষ করেই একবুক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন আবু সালেহ আহমেদ। এসেই শুরু করেন আবার জীবনসংগ্রাম। কোথাও কাজ পাচ্ছিলেন না। শেষমেশ ফুডপ্যান্ডায় রাইডার (ডেলিভারি বয়) হিসেবে কাজ নেন তিনি। কিন্তু শুধু ফুডপ্যান্ডায় কাজের আয় দিয়ে তাঁর চলছিল না। তখন থেকেই কাজের পাশাপাশি কিছু একটা করার চেষ্টা করছিলেন। কিছু জায়গায় খোঁজ নিয়ে ভর্তি হয়ে যান তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ আইটিতে। খাবার ডেলিভারির পাশাপাশি কাজও শিখতেন।

আবু সালেহ আহমেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফুডপ্যান্ডার ডেলিভারি বয় থেকে সফল ফ্রিল্যান্সার আবু সালেহ, মাসে আয় কত জানেন