কাশ্মীর হামলার পেছনে কারা এই ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’
Published: 24th, April 2025 GMT
এক দশকের মধ্যে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলার খবর যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও টেলিভিশনের পর্দায় ছড়িয়ে পড়ছিল, তখন টেলিগ্রাম চ্যাটে একটি বার্তা ভেসে ওঠে।
২০১৯ সালে কাশ্মীর অঞ্চলে স্বল্প-পরিচিতি সশস্ত্র গোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। এই গোষ্ঠী পেহেলগামে হামলার দায় স্বীকার করেছে। মঙ্গলবারের ওই হামলায় অন্তত ২৬ পর্যটক নিহত ও আরও ডজনখানেক আহত হন।
ভারত থেকে কাশ্মীরকে আলাদা করতে লড়াই করা সশস্ত্র বিদ্রোহীরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটকদের ওপর তেমন কোনো হামলা চালাননি। তবে মঙ্গলবারের হত্যাকাণ্ড সে পরিস্থিতিকে বদলে দিয়েছে।
কিন্তু এই টিআরএফ কারা? কাশ্মীরে তাদের প্রভাব কতটা? ভারতের জন্য তারা এখন কি ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে?
মঙ্গলবার কী ঘটেছিল
কাশ্মীরের পেহেলগাম শহরের বৈসরণের তৃণভূমিতে মনোরম এক রৌদ্রোজ্জ্বল বিকেলে পর্যটকদের ওপর হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। তারা কাছাকাছি একটি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসেছিল।
স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে হামলাকারীরা অন্তত ২৬ পর্যটককে গুলি করে হত্যা করেছে। তাদের গুলিতে আরও বেশ কয়েকজনকে আহত হন। যাঁদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তাঁদের সবাই পুরুষ।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যখন কাশ্মীরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরে পৌঁছান, তখন বিশ্বের নানা দেশের নেতাদের শোকবার্তা আসছিল। তাঁদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, এই জঘন্য হামলার পেছনে যাঁরা আছে, তাঁদের বিচারের আওতায় আনা হবে, তাঁদের কাউকেই ছেড়ে দেওয়া হবে না।
ততক্ষণে টিআরএফ এ হামলার দায় স্বীকার করে নেয়। যদিও এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলাকারীরা পলাতক।
কাশ্মীরে হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন। বুধবার, ভারতের অমৃতসর.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
হামলার পর আশা ও আতঙ্কের মধ্যে পেহেলগামে ধীরে ধীরে ফিরছেন পর্যটকেরা
ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহাড়ি পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামের কাছে এক প্রাণঘাতী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার এক সপ্তাহ পর শহরটিতে এখনো থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। অবশ্য সেখানে অল্প অল্প করে পর্যটক ফিরতে শুরু করেছেন।
গত সপ্তাহে শহরের প্রধান মহাসড়ক একেবারে ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। দোকানপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, খালি হয়ে গিয়েছিল হোটেলগুলো। এখন সেখানে আবার অল্প অল্প করে প্রাণ ফিরছে।
গত মঙ্গলবার পেহেলগাম থেকে তিন মাইল (৫ কিলোমিটার) দূরে পাহাড়চূড়ার উপত্যকা বৈসারানে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের ওপর গুলি চালায় একদল বন্দুকধারী। এই বৈসারানকে অনেক সময় ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ বলা হয়।
বৈসারানের হামলাকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যা অনেক পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে এবং ভারতজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কাশ্মীরের দুই অংশ দুই দেশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তরে পুরো অঞ্চলকে দুই দেশই নিজেদের বলে দাবি করে থাকে।
দিল্লি এ হামলার কোনো সামরিক জবাব দেবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে।
১৯৮৯ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে কাশ্মীরে প্রায়ই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এসব ঘটনায় কখনো নিরাপত্তা বাহিনী আবার কখনো বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের এভাবে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা বিরল এবং তা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের হতবাক ও আতঙ্কিত করেছে।১৯৮৯ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে কাশ্মীরে প্রায়ই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এসব ঘটনায় কখনো নিরাপত্তা বাহিনী আবার কখনো বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের এভাবে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা বিরল এবং তা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের হতবাক ও আতঙ্কিত করেছে।
পেহেলগামের মতো এলাকার অর্থনীতি পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। হামলার জেরে সেখানে বহু মানুষের জীবিকা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনকাশ্মীরে ব্যাপক ধরপাকড়, ভাঙা হচ্ছে বাড়ি: ‘আমার ভাই জড়িত থাকলেও পরিবারের অপরাধ কী’১৮ ঘণ্টা আগেহামলার পরদিন (২৩ এপ্রিল) ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা পেহেলগামের বৈসারান এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালান