কমিউনিটি ক্লিনিকের বিষয়টি স্পর্শকাতর। এখানে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বৈততা লক্ষ করা গেছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোয় সেবার সমন্বয় করতে চায় সরকার।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে এসব কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায়) অধ্যাপক মো.
চিকিৎসক সপ্তাহ উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক চিকিৎসক সপ্তাহ উদ্যাপন পরিষদ, প্ল্যাটফর্ম অব মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল সোসাইটি, মেডিসিন ক্লাব, প্ল্যানেটরি হেলথ একাডেমিয়াসহ ১০টি সংগঠন। এবার চিকিৎসক সপ্তাহের প্রতিপাদ্য ‘বাংলাদেশ বিনির্মাণে দরকার চিকিৎসা খাতে সংস্কার’।
স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা আইন, নতুন জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি, জাতীয় ওষুধ নীতি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত সংস্কার বিষয়ে স্বাস্থ্য খাতবিষয়ক সংস্কার কমিশন ও সরকারের অবস্থান কী বা সরকার কী করতে যাচ্ছে, তা জানা-বোঝার জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
স্বাস্থ্য খাতের জনবল সমস্যা, শিক্ষা সমস্যা, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার সমস্যা—এসব বিষয়ে সরকার কী করছে বা ভবিষ্যতে কী করা সম্ভব, সমস্যাগুলো কোথায়, তার বিশদ বর্ণনা দেন সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা একটি দলীয় কাজ। এখানে চিকিৎসকেরা ম্যারাডোনার মতো। অর্থাৎ তাঁরাই নেতৃত্বদানকারী শক্তি। তবে সাধারণ মানুষের ধারণা, ওষুধ কোম্পানি বা রোগনির্ণয় কেন্দ্রের সঙ্গে চিকিৎসকদের অনৈতিক সম্পর্কের কারণে তাঁদের অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সায়েদুর রহমান। তাঁর বক্তব্যের আগে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, স্থানীয় সরকারবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে কমিউনিটি ক্লিনিক বিলুপ্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্বাস্থ্য খাতবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সভাপতি ও এক সদস্যের অবস্থান বা বক্তব্য কী?
এ প্রসঙ্গে সায়েদুর রহমান বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের বিষয়টি সংবেদনশীল। কমিউনিটি ক্লিনিক এলাকায় সেবার দ্বৈততা আছে। একটি পরিবারে স্বাস্থ্যের কর্মী একবার সেবা দিতে যাচ্ছেন। একই পরিবারে আবার পরিবার পরিকল্পনা মাঠকর্মী সেবা দিতে যাচ্ছেন। অন্যদিকে আছে সিএইচসিপি (কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার), তার কাজ মূলত ওষুধ বিতরণ করা। এই তিন পক্ষের সেবাদানের বিষয়টি সমন্বয় করার কথা ভাবছে সরকার, যেন একই কাজ দুজন না করেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও স্বাস্থ্য খাতবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, ‘ডাক্তারি অনন্য পেশা। ভালো মানুষ না হলে একজন ভালো ডাক্তার হওয়া যায় না।’
এ কে আজাদ খান ও স্বাস্থ্য খাতবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক কমিউনিটি ক্লিনিক সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. শাহিনুল আলম বলেন, চিকিৎসকদের দাবিগুলো গণ-আকাঙ্ক্ষায় পরিণত করা হলে সেগুলো পূরণ হওয়া সম্ভব।
শাহিনুল আলম আরও বলেন, দায়বদ্ধতা বাড়ানো ছাড়া সমাজের কাছে চিকিৎসকদের মুখ দেখানো কঠিন হবে। তাঁদের নৈতিক অবস্থান প্রশ্নের মুখে রয়েছে।
সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো অপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নাজমুল হোসেন। তিনি বলেন, ১০টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ১৯টি ছাত্রাবাস তৈরির কাজ হাতে নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া নতুন ৬টি সরকারি মেডিকেল কলেজের জন্য ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) তৈরির কাজ দুই দিনে শেষ করার বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে একাধিক আয়োজক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা চিকিৎসকদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরনে। কেউ বলেন, সাংবাদিকেরা অনেক সময় না জেনে, না বুঝে প্রতিবেদন করেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চিকিৎসক সপ্তাহ উদ্যাপন পরিষদের মুখপাত্র ও প্ল্যাটফর্ম অব মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল সোসাইটির কো-চেয়ার ফয়সাল বিন সালেহ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স য় দ র রহম ন চ ক ৎসকদ র অন ষ ঠ ন পর ব র সমস য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলিম নারী চিকিৎসকেরা হারিয়ে গেলেন কেন
কর্দোভার সংকীর্ণ গলিতে এক নারী দ্রুত পা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর হাতে একটি কাঠের বাক্স, ভেতরে হাতে তৈরি মলম ও ঔষধি গাছ। তিনি আল-জাহরাভির কন্যা, একজন ধাত্রী, যিনি প্রসূতি মায়েদের সেবা করছেন। তাঁর কাজ শুধু শারীরিক নিরাময় নয়, বরং একটি সম্প্রদায়ের আস্থা ও আশার প্রতীক।
মধ্যযুগের মুসলিম বিশ্বে মুসলিম নারী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এমন অগণিত গল্প রচনা করেছেন, যা চিকিৎসাবিজ্ঞান ও সমাজের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেছে। তৃতীয় ও শেষ পর্বে আমরা তাঁদের প্রভাব, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে তুলনা এবং তাদের ঐতিহাসিক স্বীকৃতির চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করব।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে নারীদের ছাপমুসলিম নারী চিকিৎসকদের কাজ মুসলিম বিশ্বের চিকিৎসাব্যবস্থাকে একটা কাঠামো দিয়েছে। রুফায়দা আল-আসলামিয়া (রা.)-এর মোবাইল হাসপাতালের ধারণা আধুনিক ফিল্ড হাসপাতালের পূর্বসূরি। তাঁর তাঁবু যা মদিনার মসজিদে নববিতে স্থাপিত হয়েছিল, স্বাস্থ্যসেবার মডেল হিসেবে কাজ করেছে।
২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারিতে মসজিদগুলো চিকিৎসা ও টিকাকরণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা রুফায়দার মসজিদভিত্তিক তাঁবুর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।এই মডেল পরবর্তী সময়ে আব্বাসীয় যুগের বিমারিস্তানে (হাসপাতাল) প্রতিফলিত হয়, যেখানে শিহাবুদ্দিন আল-সায়িগের (মৃ. ১৬২৭ খ্রি.) কন্যার মতো নারীরা নেতৃত্ব দিয়েছেন। (আল-সাঈদ, আত-তিব ওয়া রায়িদাতুহু আল-মুসলিমাত, পৃ. ১৮৯, আম্মান: দারুল ফিকর, ১৯৮৫)
নারীদের ওষুধ তৈরি ও শল্যচিকিৎসার কাজ চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আল-জাহরাভির (৯৩৬-১০১৩ খ্রি.) গ্রন্থ আত-তাসরিফ নারী চিকিৎসকদের জন্য শিক্ষার ভিত্তি ছিল, বিশেষ করে প্রসূতি ও গাইনোকোলজিতে। এই গ্রন্থ ইউরোপে অনূদিত হয়ে রেনেসাঁসের চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রভাব ফেলেছে। ১৯০৮ সালে গ্রন্থটির আধুনিক সংস্করণ প্রকাশ পেয়েছে কায়রো ‘দারুল কুতুব’ থেকে।
আন্দালুসে উম্ম হাসান বিনত কাজি তানজালি (১৪ শতক) চিকিৎসাশিক্ষার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম তৈরি করেন, যা শিক্ষার ক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। (আবু বকর ও আল-সাদি, আন-নিসা ওয়া মিহনাত আল-তিব, পৃ. ২১২, কায়রো: দারুল কুতুব, ১৯৯৯)
এই কাজগুলো আধুনিক পাবলিক হেলথ সিস্টেমের পূর্বসূরি হিসেবে বিবেচিত হয়।
আরও পড়ুনযে নারী সাহাবির বিয়ের পরামর্শদাতা ছিলেন রাসুল (সা.)২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩নারীদের ওষুধ তৈরি ও শল্যচিকিৎসার কাজ চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে