অপহরণকারীদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা সুস্থভাবে ফেরি এলেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে সমকালকে এ কথা জানান দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান।

তিনি বলেন, আমার সন্তানকে ফেরত পেয়েছি, এটাই আমার কাছে বেশি। আজ দিব্যির ফোন থেকে হঠাৎ কল আসে। সে বলে আমি রাঙামাটি আছি। আমরা দ্রুত গিয়ে তাকে নিয়ে আসি।

ভারতী দেওয়ান আরও বলেন, দিব্যিকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি। সে আপাতত মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। কিছু জিজ্ঞেস করাও উচিত হবে না। আমি নিজেও অসুস্থ। আমার মেয়ের বন্ধুরাও মুক্তি পেয়েছে শুনেছি।  তারা সুস্থ হলে বিস্তারিত জানা যাবে।

খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে মুক্তি দিয়েছে অপহরণকারীরা। তবে কোথায়, কীভাবে, কাদের জিম্মায় ছিলেন এ বিষয়ে এখনও বিস্তারিত জানা যায়নি।

আজ বিকেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) পাঁচ শিক্ষার্থীর মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বিবৃতি দিয়েছে। খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চবি শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, তারা মুক্তি পেয়েছেন তবে কোথায় কীভাবে ছিলেন জানতে পারিনি। বর্তমানে তারা নিজেদের গ্রামের বাড়ি ও আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করছেন।

এর আগে পিসিপি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক রিবেক চাকমার দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পিসিপি চবির শাখা সদস্য রিশন চাকমা ও তার চার বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো এবং চারুকলা বিভাগের অলড্রিন ত্রিপুরাকে ধাপে ধাপে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে পিসিপি। 

পাহাড়ের বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চবি ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে জেলা সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে ১৬ এপ্রিল সকালে পাঁচ শিক্ষার্থীকে দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে। তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অপহরণ

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।

আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫

একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’

আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫

গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ