রাজশাহীতে রাস্তায় নারীদের উদ্দেশে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় তিন তরুণকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে তাঁদের আটক করে রাজপাড়া থানা–পুলিশ ও নগর গোয়েন্দা শাখা পুলিশ (ডিবি) ।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আটক তরুণেরা হলেন নগরের রাজপাড়া থানাধীন লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া এলাকার মোখলেছুর রহমানের ছেলে জুবায়ের হোসেন ওরফে রাকিব (১৯), কাশিয়াডাঙ্গা থানার মহিষবাথান উত্তর পাড়ার মো.

রমজানের ছেলে মো. সবুজ (২০) ও কাশিয়াডাঙ্গা থানার সায়েরগাছা এলাকার আবদুর রাজ্জাকের ছেলে মো. রাজু (২১)।

বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওকে ঘিরে রাজশাহীসহ দেশজুড়ে শুরু হয় নিন্দার ঝড়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, রাজশাহী নগরের সিঅ্যান্ডবি মোড়ে কয়েকজন তরুণ রাস্তায় চলাচলকারী নারীদের উত্ত্যক্ত করছেন এবং সেই দৃশ্য তাঁদের পরিচিত একজন মুঠোফোনে ধারণ করেন। পরে তিনি ভিডিওটি তাঁর ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করলে মুহূর্তেই তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।

আরও পড়ুনফেসবুকে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির ভিডিও, রাজশাহীতে ৪ তরুণকে খুঁজছে পুলিশ১৬ ঘণ্টা আগে

পুলিশ জানিয়েছে, এরপর পুলিশের একাধিক দল জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে। রাজপাড়া থানার পুলিশ গতকাল বেলা সোয়া একটায় নগরের কাশিয়াডাঙ্গা মোড়ে অভিযান পরিচালনা করে আসামি জুবায়েরকে আটক করে। বেলা দুইটার দিকে সবুজকে কাশিয়াডাঙ্গা থানার ম্যাচ ফ্যাক্টরি এলাকা থেকে আটক করা হয়। এ ছাড়া সন্ধ্যার দিকে মহানগর গোয়েন্দা শাখা পুলিশ কাশিয়াডাঙ্গার সায়েরগাছা থেকে রাজুকে আটক করে।

এর আগে গত বুধবার বিকেল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ২২ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ধারণ করা হয় নগরের সিঅ্যান্ডবি মোড় থেকে পদ্মা নদীর ধারে যাওয়ার রাস্তায়। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, চার তরুণ কেউ চেয়ারে, কেউ রাস্তার পাশে ফুটপাতে বসার বেদিতে বসে আছেন। তাঁদের সামনে দিয়ে নারী শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন হেঁটে যাচ্ছেন। তাঁদের উদ্দেশে হাতের ইশারায় এক তরুণ অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করছেন। ওই তরুণসহ আরও তিন তরুণ মুখ দিয়ে নানা আওয়াজ করছেন। ওই ভিডিওর সঙ্গে একটি গানও জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ওই ভ ড ও নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।

হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।

আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’

গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’

আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ