পরিবেশদূষণের ভয়াবহতা উঠে এল শিল্পকর্মে
Published: 26th, April 2025 GMT
শিল্পী আবু সেলিম দেশের পরিবেশ বিপর্যয়ের ভয়াবহ দৃশ্য তুলে ধরেছেন তাঁর শিল্পকর্মে। অবাধে চলছে বৃক্ষনিধন। নদী ভরে গেছে পলিথিন আর হরেক রকম দূষণে। দূষিত হচ্ছে বায়ু। শহরে যানবাহনের উচ্চ শব্দের হর্নে কানে তালা লেগে যায়। পরিবেশদূষণের এমন ভয়াবহ বিষয়গুলো নিয়ে শুরু হয়েছে তাঁর ‘পরিবেশ বাঁচাও’ নামের একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘গ্যালারি জুম’–এ তাঁর এই প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন পরিবেশ রক্ষার ওপর বিশেষ জোর দিয়ে কাজ করছে।
বিশেষ অতিথি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, পরিবেশদূষণ যে মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা আবু সেলিম শিল্পকর্মের ভেতরে তুলে ধরেছেন। এতে জনসচেতনতা সৃষ্টি হবে। পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাপার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর ও আলিয়ঁস ফ্রসেঁজের পরিচালক ফ্রাঁসোয়া গ্রুস।
প্রদর্শনীতে জলরঙে আঁকা ১৮টি শিল্পকর্ম রয়েছে। শিল্পী আবু সেলিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের স্নাতক। পরিবেশ নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। জলরঙের কাজে তাঁর রয়েছে বিশেষ পারদর্শিতা। এটি ১৬তম একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। রোববার ছাড়া প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আগামী ৬ মে পর্যন্ত চলবে।
ক্যালিগ্রাফির ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনীপয়লা বৈশাখ থেকে নববর্ষ উপলক্ষে বাংলা ক্যালিগ্রাফির এক ব্যতিক্রমী প্রদর্শনী চলছে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘লা গ্যালারি’তে। শিল্পী আরহাম উল হক চৌধুরীর ‘দলিলে দৃশ্যপট’ নামের এই প্রদর্শনী আজ শনিবার শেষ হবে। খোলা থাকবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
আরহাম-উল-হকের এটি ২০তম একক ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী। এতে ৩১টি ক্যালিগ্রাফি রয়েছে। ব্যতিক্রম হলো, সেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমল থেকে ব্রিটিশ ভারতের সময়ের পুরোনো বিভিন্ন দলিলের ওপর তিনি বাংলার প্রবাদগুলো লিখেছেন শৈল্পিক আঙ্গিকে। প্রবাদগুলো যেসব বিষয়ে, সেই বিষয়কে নকশা করে অক্ষরগুলো লিখেছেন তিনি। ফলে এক ভিন্নমাত্রা সৃষ্টি হয়েছে তাঁর কাজে। সঙ্গে প্রাচীন দলিলগুলো স্মৃতিময় ব্যঞ্জনা যোগ করেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ল পকর ম প রদর শ পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
ইউনূস-তারেক সফল বৈঠকে স্বপ্নভঙ্গ হলো যাদের
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের বৈঠক দেশের রাজনীতির মোড় অনেকটাই ঘুরিয়ে দিয়েছে। নানা অনিশ্চয়তা, শঙ্কা, গুজব রাজনীতিকে ঘিরে ধরেছিল। একধরনের অনাস্থার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এ বৈঠক অনিশ্চয়তা, শঙ্কার কালো মেঘ সরিয়ে দিয়ে রাজনীতিতে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করবে বলে আশা করা যায়।
পারস্পরিক যে কাদা ছোড়াছুড়ি, দুর্নাম করার রাজনীতি, সেখান থেকে বেরিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ তৈরিতে সহায়তা করবে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক। নির্বাচন নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির কিছুদিন ধরে টানাপোড়েন চললেও বৈঠকটি অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে হয়েছে। এটা আমাদের রাজনীতিতে উদাহরণ হয়ে থাকবে।
বৈঠকটি সারা দেশের মানুষের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। এখন মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। মানুষের ধারণাকে বাস্তবে রূপদান করার দায়িত্ব সরকারের।
বিএনপি এর আগে ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইলেও কিছুটা সরে এসে ফেব্রুয়ারির সময়সীমাকে মেনে নিয়েছে। সরকারও এপ্রিল থেকে সরে এসে নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেছে। উভয় পক্ষেরই কিছুটা সরে আসা, কিছুটা ছাড় দেওয়া—এটাই আমাদের রাজনীতি থেকে একদম হারিয়ে গিয়েছিল।
রাজনীতি মানেই প্রতিপক্ষের সঙ্গে শত্রুতা করতে হবে, এমন পরিস্থিতিতে আমাদের রাজনীতি পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু শুধু কথায় কথায় উদার হলে হবে না। কাজে-কর্মেও উদারতা দেখাতে হবে। লন্ডনের বৈঠকে সেই উদারতার কিছু নমুনা আমরা দেখতে পেলাম।
আরও পড়ুনলন্ডনে ইউনূস-তারেকের আলোচনায় বিএনপিরই কি জিত১৩ জুন ২০২৫বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে আলোচনার ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে। তা নিয়ে আপাতত আলোচনার কিছু নেই। আমরা বরং রাজনীতিতে এ বৈঠকের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করি। প্রথমত, এ বৈঠক সারা দেশের মানুষকে আশান্বিত করলেও রাজনীতির কোনো কোনো পক্ষ বা ব্যক্তি হতাশ হয়েছেন।
এসব গোষ্ঠীর মূল কাজ যেন বিএনপিকে যে কোনোভাবে ঠেকানো। ব্যক্তি পর্যায়ে যারা হতাশ হয়েছেন তাদের মধ্যে রাজনীতিবিদ ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা আছেন। তাঁদের মূল লক্ষ্যই ছিল, যেকোনো প্রকারে বিএনপির রাজনীতিকে প্রতিহত করা। এ অংশ চাইছে না বিএনপির রাজনীতি সামনের দিকে এগিয়ে যাক। বিএনপির নেতৃত্বে নতুন করে বাংলাদেশের বিনির্মাণ হোক।
কেউ যদি সহজ রাজনীতির পথ পরিহার করে অহেতুক কুটিল ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে, তবে তারা নিজেরাই রাজনীতি থেকে হারিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ ও জাসদ আমাদের সামনে রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।বিএনপি যে শত ভাগ শুদ্ধ ও সঠিক রাজনীতি করছে, এটা বলা যাবে না। ভুল-ত্রুটি বিএনপিরও আছে। স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখল, হত্যাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। বিএনপি নিজ দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এই পর্যন্ত চার হাজারের মতো নেতা-কর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে এসব কর্মকাণ্ডের জন্য। দেশের ইতিহাসে কোনো দল নিজেদের এতসংখ্যক নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করেনি। এ ধরনের অপরাধ শুধু বিএনপির নেতা-কর্মীরাই করছেন না। বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরাও এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এটা আমাদের রাজনৈতিক অপসংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।
এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা লাগবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে। এটা সময়সাপেক্ষ বিষয়। বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের রাজনীতি এই অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তাই রাজনৈতিক সরকার লাগবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে। কারণ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
এ ধরনের পরিস্থিতি শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এর সঙ্গে রাজনৈতিক শক্তিরও প্রয়োজন হয়। বিকল্প অর্থনৈতিক কর্মসূচিও লাগে। এ জন্যই বিএনপি বারবার নির্বাচনের কথা বলে আসছে। আমরা মনে করি, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক অবস্থান উন্নতি ঘটবে। বিএনপির বিকল্প অর্থনৈতিক পরিকল্পনা আছে।
বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণা