‘বাংলাদেশ নতুন ধারা’ পার্টি নামে নতুন আরেকটি রাজনৈতিক দল শনিবার আত্মপ্রকাশ করেছে। রাজধানী সেগুনবাগিচার তোপখানা রোডে বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদের ভিআইপি কনফারেন্স রুমে সকালে এক অনুষ্ঠানে দলটির আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেওয়া হয়। এই দলের আহ্বায়ক মুহাম্মাদ আবদুল আহাদ নূর ও সদস্যসচিব মামুনুর রশীদ মামুন। 

অনুষ্ঠানের সভাপতি পার্টির পৃষ্ঠপোষক এ টি এম মমতাজুল করিম ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা হলেন, পৃষ্ঠপোষক এ টি এম মমতাজুল করিম, উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা এ কে সামসুল হক কাবা, মুফতি মহিউদ্দিন, মুফতি আবদুল হালিম, এনাম জয়নাল আবেদীন, এম হাবিব উল্লাহ, কি এম সাদ বিন রানী, ফারুক আলম, জি এম মোস্তফা মিলন, মনোয়ার হোসেন বাবুল, প্রফেসর খোদাদাদ খান, ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর, ফিরোজ আলম, মো.

হাসান আলী। আহ্বায়ক মুহাম্মাদ আবদুল আহাদ নূর, জ্যেষ্ঠ যুগ্ন  আহ্বায়ক মিজানুর রহমান স্বপন, যুগ্ম  আহ্বায়ক মো. হুমায়ূন কবির, ওসমান গনী খোকন, অ্যাডভোকেট রেজাউল হক রেজা, অ্যাডভোকেট গিয়াসউদ্দিন শাহিন, সদস্যসচিব মামুনুর রশীদ মামুন, যুগ্ম সদস্য সচিব ইশারুল হোসেন, যুগ্ম সদস্য সচিব মোল্লা মো. জমির উদ্দিন, সালেহ আহমেদ। কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি সদস্য মনির হোসেন মনির, মো. নিজামুদ্দিন ভূইয়া, শাহ মো. মোতাহার উদ্দিন তপন, কাজী সরোয়ার হোসেন, শাহাদাৎ হোসেন, মোশারফ হোসেন দুলাল, সারোয়ার হোসেন জাহান, সালাউদ্দিন আহমেদ, তানভীর আহমেদ, তাজরিয়ান আলম, মো. শফিকুল ইসলাম, শামীম মিয়া প্রমুখ।

ঘোষণাপত্রে মুহাম্মাদ আবদুল আহাদ নুর বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে আরও সুদৃঢ় করতে স্বতন্ত্র স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি, সম্মানের ভিত্তিতে পররাষ্ট্র ব্যবস্থাপনা, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা নীতি, সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করার বিষয়ে তাদের থাকবে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। 

 

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক দল দল গঠন আবদ ল সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

হনুমান কি পর্বত কাঁধে করে উড়ে এসেছিলেন?

হিন্দু ধর্মগ্রন্থ রামায়ণের এক বিশিষ্ট অধ্যায়ে উঠে আসে এক অলৌকিক ঘটনার কথা। রাম-রাবণের মহাযুদ্ধে শ্রীরামচন্দ্রের ভাই লক্ষ্মণ অচেতন হয়ে পড়লে, তাঁকে জীবিত রাখতে প্রয়োজন হয় একটি বিশেষ ভেষজ উদ্ভিদের—সঞ্জীবনী বুটি। আয়ুর্বেদাচার্য সুষেণের পরামর্শে হনুমান ছুটে যান হিমালয়ের পাদদেশে গন্ধমাদন পর্বতে।

রামায়ণে বর্ণিত আছে, নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে। বিশ্বাস করা হয় যে তিনি দীর্ঘ আকাশপথ পাড়ি দেন এই পাহাড় বহন করে। পথিমধ্যে তিনি কিছু স্থানে বিশ্রামও নেন; যেসব স্থান আজও ‘হনুমান টোক’, ‘হনুমান চট’, ‘হনুমান ধারা’ নামে পরিচিত।

নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে।

পৌরাণিক গ্রন্থগুলোয় সব ঘটনা রূপকভাবে লেখা আছে। এককথায় পুরাণের মধ্যে সবকিছু গোলমাল পাকিয়ে আছে। গোলটা ফেলে মালটা বের করতে পারলে পৃথিবীর অনেক কল্যাণ হয়। এই ঘটনার রূপকতা ব্যাখ্যা করতে একটা গল্পের উল্লেখ করছি।

আরও পড়ুনভারতের আদিতম মহাকাব্য রামায়ণ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বাড়িতে ২০০ মানুষকে নিমন্ত্রণ করে এক ব্যক্তি বাজারে গিয়ে অনেক বাজার করেছেন। ফেরার সময় তিনি নিজের সাইকেলের দুই হ্যান্ডলে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়েছেন, পেছনে দুটো ব্যাগ ঝোলানো, ক্যারিয়ারে একটা বস্তা বাঁধা। জায়গা না পেয়ে নিজের দুই কাঁধে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়ে বাজার থেকে বাড়ির উদ্দেশে যাওয়ার পথে রাস্তায় এক লোক তাঁকে দেখে বললেন ‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন।

তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন। হনুমানের ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটেছিল।

রামভক্ত হনুমান ছিলেন যোগী পুরুষ। তিনি যোগবলে অনেক অলৌকিক শক্তি অর্জন করেছিলেন। তিনি যোগবলে নিজের আকার এত ছোট করে ফেলতে পারতেন যে তাঁকে খালি চোখে দেখা কষ্টকর হয়ে যেত। আবার তিনি ইচ্ছা করলে যোগবলে নিজের আকার অনেক বড় করে ফেলতে পারতেন। আর তিনি ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী।

‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন। তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন।

তিনি আসলে ‘সঞ্জীবনী বুটি’ চিনতে না পেরে যোগবলে নিজের শরীরটা অনেক বড় করে সামনে যত ধরনের বৃক্ষ ও লতাপাতা পেয়েছিলেন, সেই সবকিছু সংগ্রহ করে বিশাল এক বোঝা বানিয়ে নিজের পিঠের ওপর তুলে যখন অতি দ্রুত এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে লাফ দিচ্ছিলেন, তখন সেই বিশালদেহী হনুমানকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন গোটা পাহাড়টাই পিঠে তুলে নিয়ে লাফাচ্ছেন।

আরও পড়ুনদুর্গাপূজার কাহিনি২০ অক্টোবর ২০২৩

হনুমানের এই অসাধারণ কীর্তিকে অনেকেই অলৌকিক বলেই ভাবেন। কিন্তু অলৌকিকতা ছাপিয়ে এটা তাঁর গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা এবং গুরুর আদেশের প্রতি দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। ভারতের হিমাচল, উত্তরাখন্ড, মধ্যপ্রদেশ এমনকি বাংলাদেশের মহেশখালীর আদিনাথ ধামসহ কিছু স্থানে এই ঘটনার স্মৃতি বহন করে, এমন লোককথা এখনো প্রচলিত।

একটি পাহাড় কাঁধে বহন করে উড়ে যাওয়া প্রকৃতির নিয়মের বাইরে। আর অবতার, মহাপুরুষ বা প্রেরিত পুরুষেরা কখনো প্রকৃতির নিয়মের বাইরে যান না। রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।

রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।

মনে করেন, একজন যোগী পুরুষ নদীর তীর থেকে যোগবলে অদৃশ্য হয়ে নদীর মধ্যে ভেসে উঠলেন। আমি দেখতে পাচ্ছি না, জানতে পারছি না যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই আমার কাছে অলৌকিক। আর ওই যোগী জানেন যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই তাঁর কাছে লৌকিক।

যুগের পর যুগ ধরে লাখ লাখ ভক্তের হৃদয়ে এই ঘটনা গুরুর প্রতি শিষ্যের ভালোবাসা এবং নিজেকে গুরুর প্রতি সম্যকভাবে ন্যস্ত করার এক আস্থা ও অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে রয়েছে। হনুমানের এই গাথা তাঁর ভক্তিমূলক চরিত্রকে যেমন সমৃদ্ধ করে, তেমনি মানবজাতির দুর্দম সাহস ও আত্মত্যাগের কথাও মনে করিয়ে দেয়।

তথ্যসূত্র: ১. বাল্মীকি রামায়ণ. ২. কৃত্তিবাসী রামায়ণ, ৩. শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কথিত ‘আলোচনা প্রসঙ্গে’ গ্রন্থ, ৪. মহেশখালীর আদিনাথ ধাম অঞ্চলের লোককথা।

পার্থ দেব বর্মন: গবেষক, সৎসঙ্গ রিসার্চ সেন্টার

আরও পড়ুনরামচন্দ্র, বিষ্ণুর অবতার কিন্তু মানবিক১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ