গাজীপুরের শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের সাইটালিয়া, তালতলী ও মুরগির বাজার এলাকায় বন বিভাগের বেদখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে যৌথ বাহিনী। আজ শনিবার সকাল আটটা থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে অভিযান শুরু হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে তেলিহাটি ও পেলাইদ মৌজায় চার একর বনভূমি উদ্ধারে অভিযান চালানো হচ্ছে। এসব বনভূমিতে অন্তত ৪৬টি পাকা, আধা পাকা ও সেমি পাকা স্থাপনা আছে। বড় এক্সকাভেটর মেশিনের মাধ্যমে উচ্ছেদ করা হচ্ছে স্থাপনাগুলো। অভিযান চালানোর সময় ওই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকেই সেখানে উপস্থিত হয়ে স্থাপনা উচ্ছেদ না করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছিলেন। ঘর ভেঙে ফেলা পরিবারের কয়েকজন নারীকে কাঁদতে দেখা গেছে।‌ তাঁদের কেউ কেউ জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

বন বিভাগের শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো.

মোখলেসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বনের জমি উদ্ধারের আগে সেখানকার বাসিন্দাদের স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য কয়েক দফা নোটিশ করা হয়েছে। লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। সর্বশেষ মাইকিং করা হয়। কিন্তু তাঁদের অনেকেই স্থাপনা সরিয়ে নেননি। অনেকেই আবার স্থাপনার আংশিক সরিয়ে নিয়েছেন। আইনগতভাবে বনের জমি উদ্ধারে অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, উদ্ধার হতে যাওয়া বনভূমির প্রচলিত মূল্য ২০ কোটি টাকার বেশি।

অভিযানে ভাঙা পড়েছে মোসা. কল্পনা আক্তার নামের এক নারীর বাড়ি। গুঁড়িয়ে দেওয়া বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া আসবাবের পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলছিলেন, ‘শইল্লের রক্ত পানি কইরা টাকা জমাইয়া এই বাড়িটা করছিলাম। বাড়িডা ভাইঙা দিছে। অহন ঝি-পুত লইয়া আমি কই যাইয়াম।’

একই এলাকার বাসিন্দা শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, তাঁর বাড়ি উচ্ছেদ করার ফলে পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। অপর বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, তাঁর তিনটি ঘর উচ্ছেদ করা হয়েছে। বহু বছর ধরে তাঁরা এই জমিতে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। উচ্ছেদের ফলে তাঁরা ভিটেবাড়িশূন্য হয়ে পড়েছেন।

অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ। দুপুর সাড়ে ১২টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযান চলছিল। ইউএনও সজীব আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বনের জমি উদ্ধারে অভিযান চালানো হচ্ছে। দিনভর অভিযান চলবে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি

ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।

শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।

ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।

ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।

কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলা

শিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’

শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি