বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের একটি দল রিকশার একটি নকশা তৈরি করেছে। তারা বলছে, এই নকশার রিকশা হবে সাধারণ রিকশার চেয়ে অনেক নিরাপদ। অবশ্য এটি তৈরিতে বর্তমান ব্যাটারিচালিত রিকশার সমান খরচ পড়বে।

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) জানিয়েছে, তারা নতুন নকশা বা মডেলের রিকশা ঢাকার রাস্তায় চলাচলের অনুমতি দেবে। পুরোনো রিকশা পর্যায়ক্রমে সড়ক থেকে তুলে নেওয়া হবে।

নতুন রিকশার নকশা করেছে বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো.

এহসানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের গবেষক দল। অধ্যাপক এহসান প্রথম আলোকে বলেন, ২০২২ সাল থেকে তিনি বাড়তি নিরাপত্তাযুক্ত রিকশার নকশা করা নিয়ে কাজ করছেন। অতীতে তিনি সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করেছেন। তবে কাজ হয়নি।

ঢাকায় এখন দুই ধরনের রিকশা চলে—পায়ে চালিত বা প্যাডেল ও ব্যাটারিচালিত। সাম্প্রতিককালে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এসব রিকশা নিবন্ধনহীন। চালকের প্রশিক্ষণ নেই। তবে গতি সাধারণ রিকশার চেয়ে বেশি। নিরাপত্তা দুর্বল। ঝুঁকিপূর্ণ এই বাহন ঠেকাতে বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি; বরং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ব্যাটারিচালিত রিকশা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মিরপুর ১০ নম্বরে প্রধান সড়কে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশাছবি: আহমেদ উল্যা ইউসুফ এই ক্যাপশনের ছবি এখানে দেবেন।

বুয়েটের নকশা করা রিকশায় যা থাকবে

বুয়েটের দলটির নকশা করা রিকশা মূলত রাস্তায় চলাচলকারী ইজিবাইকের মতো। দলের সদস্যরা জানিয়েছেন, রিকশায় ১৬টি বৈশিষ্ট্য যোগ করেছেন। এ ক্ষেত্রে তারা দেশে প্রচলিত ১২ ধরনের ব্যাটারিচালিত রিকশার নিরাপত্তা ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করেছেন।

বুয়েটের দলে আরও ছিলেন বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এ সালাম আকন্দ ও মো. আমান উদ্দীন, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক মো. জিয়াউর রহমান খান এবং গবেষণা প্রকৌশলী হিসেবে ছিলেন মো. আসাদুজ্জামান ও আবদুল আজিজ ভুঁইয়া।

বুয়েটের দলটির সঙ্গে কথা বলে নতুন নকশার রিকশার বৈশিষ্ট্যগুলো জানা যায়। তাঁরা জানান, রিকশার দৈর্ঘ্য হবে ৩ দশমিক ২ মিটার, প্রস্থ দেড় মিটার এবং উচ্চতা ২ দশমিক ১ মিটার। সব মিলিয়ে আকার হবে এখনকার রিকশার মতোই। রিকশাটি ৩২৫ থেকে ৪২৫ কেজি পর্যন্ত ওজন সহজেই বহন করতে পারবে। ফলে দুজন যাত্রী নিয়ে চালক সহজেই রিকশাটি চালাতে পারবেন।

নতুন রিকশায় ব্রেকিং ব্যবস্থা এখনকার চেয়ে অনেক ভালো হবে বলে জানান বুয়েটের দলটির সদস্যরা। তাঁরা বলছেন, এর তিনটি চাকায় ‘হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক’ ও বিকল্প ‘পার্কিং ব্রেক’ সংযোজন করা হয়েছে। ফলে রিকশা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।

সাধারণ রিকশায় ‘লুকিং গ্লাস’ থাকে না। ফলে রিকশাচালককে পেছনে তাকিয়ে দেখতে হয় কোনো যান আসছে কি না। আবার সাধারণ রিকশায় ‘ইন্ডিকেটর’ নেই। ফলে রিকশা ডানে অথবা বাঁয়ে মোড় নিলে পেছনের যানবাহনের চালকেরা তা বুঝতে পারেন না, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করে। নতুন রিকশায় ‘লুকিং গ্লাস’ ও ‘ইন্ডিকেটর’ থাকবে।

নতুন রিকশায় ছাউনি ও কাচের ‘উইন্ডশিল্ড’ থাকবে। ফলে বৃষ্টিতে চালক ও যাত্রীদের ভিজতে হবে না। নতুন রিকশায় কাঠামোর সঙ্গে স্থায়ীভাবে যুক্ত করা হয়েছে হেডলাইট (মূল বাতি), যাতে রাস্তার দৃষ্টিসীমা ঠিক থাকে। নতুন হেডলাইটে ‘হাই বিম’, ‘লো বিম’ ও ‘ডিআরএল’ (ডে টাইম রানিং ল্যাম্প) যুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ এই বাতি চালককে সড়কে চলাচলের সময় দেখতে এবং রিকশাটিকে অন্য যানবাহনের চালকের দৃষ্টিগোচর করতে সহায়তা করবে।

রিকশায় ১৬টি বৈশিষ্ট্য যোগ করেছে বুয়েট

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব য় ট র দল র নকশ

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।

ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে। 

আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন। 

ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন। 

অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।

ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”

প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।

মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”

তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”

মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।

গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ