২০১৩ সাল, আমার মফস্বল সাংবাদিকতা জীবনের সূচনালগ্ন। লেখালেখির অভ্যাস আগে থেকেই ছিল কিন্তু সংবাদ সংগ্রহ, যাচাই, লেখা ও প্রকাশের প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হই রাইজিংবিডির মাধ্যমে। এটি শুধু আমার প্রথম কর্মস্থলই নয়, এটি ছিল আমার সাংবাদিকতার প্রথম পাঠশালা।

রাইজিংবিডির মফস্বল ডেস্কের সিনিয়রদের সহযোগিতা এবং নির্দেশনা আমাকে পেশাগতভাবে বেড়ে উঠতে দারুণভাবে সহায়তা করেছে। শাহ আব্দুল মতিন টিপু ভাই হয়ে উঠেছিলেন আমার প্রথম দীক্ষাগুরু। আর মাহাবুবুল আলম সোহাগ ও কামরুজ্জামান ভাই ছিলেন সাহস জোগানোর প্রেরণা। 

তৎকালীন উপদেষ্টা সম্পাদক উদয় হাকিমের নেতৃত্বে যে পেশাদার ও দূরদর্শী পরিবেশ পেয়েছি, তা আজও আমার পথচলায় আলোকবর্তিকা হয়ে আছে।

মফস্বল সাংবাদিকতা মানেই অসংখ্য চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক চাপ, সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, এমনকি ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ঝুঁকিও মোকাবিলা করতে হয়। তবু এই পেশার একটাই সৌন্দর্য- সত্য বলার সুযোগ। 

স্থানীয় মানুষের জীবন, সমস্যা, সাফল্য ও সংগ্রাম জাতীয় পাঠকের সামনে তুলে ধরার দায়িত্ব যেন এক নীরব যুদ্ধ, আর সেই যুদ্ধে আমার প্রথম হাতিয়ার ছিল রাইজিংবিডি।

এই প্ল্যাটফর্মে বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন করতে পেরেছি। যেগুলোর কিছু সমাজে আলোড়ন তুলেছে। বদল এনেছে বাস্তবতায়। এ থেকেই শিখেছি, সাংবাদিকতা কেবল তথ্য পরিবেশনের কাজ নয়, এটি সমাজ বদলেরও একটি শক্তিশালী মাধ্যম।

রাইজিংবিডির প্রকাশক, নির্বাহী সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক এবং মফস্বল সম্পাদক- প্রতিটি স্তরে এমন এক অসাধারণ টিম কাজ করে, যারা শুধু পেশাদারই নন বরং মমতাময় সহকর্মী। তাদের বন্ধু-সুলভ আচরণ, সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব এবং কাজের প্রতি আন্তরিকতা যেকোনো মফস্বল সাংবাদিককে উৎসাহিত করে তোলে। আমি ভাগ্যবান, এই টিমের সঙ্গে পথচলার সুযোগ পেয়েছি।

আজও আমি শিখছি, প্রতিদিন। রাইজিংবিডির সঙ্গে সেই প্রথম পদক্ষেপ আমাকে যে ভিত্তি দিয়েছে, তা আজও দৃঢ়ভাবে টিকে আছে আমার কাজের প্রতিটি স্তরে। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা চিরন্তন।

ঢাকা/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র প রথম আম র প ব দ কত

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ

বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।

এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্‌ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।

কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ