‘এবং বই’ বুক রিভিউ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত
Published: 28th, April 2025 GMT
বইবিষয়ক পত্রিকা ‘এবং বই’-এর আয়োজনে বুক রিভিউ প্রতিযোগিতা ২০২৫ এর পুরস্কার বিতরণ ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ও রাষ্ট্রচিন্তক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।
বিশেষ অতিথি ছিলেন লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ, কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নায়লা ইয়াসমিন ও সাংবাদিক, গবেষক ড.
এই প্রতিযোগিতায় নির্ধারিত ছিল কথাসাহিত্যিক ও গবেষক আবদুর রউফ চৌধুরীর ‘রবীন্দ্রনাথ: চির-নূতনেরে দিল ডাক’, ও ‘নজরুল : সৃজনের অন্দরমহল’ নামের দুটো বই।
রিভিউয়ে অংশ নেওয়া সেরা দশজন বিজয়ীর হাতে প্রায় ৬০ হাজার টাকার পুরস্কার তুলে দেন অথিতিরা। এর মধ্যে ছিল প্রথম পুরস্কার দুটি ১০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার দুটি ৫ হাজার টাকা ও তৃতীয় পুরস্কার দুটি ৩ হাজার টাকা করে। এছাড়া নির্বাচিত সেরা ৪ জনকে ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। নগদ অর্থমূল্যের সঙ্গে প্রথ্যেককে এক হাজার টাকা করে সমমূল্যের বই ও উত্তরীয় দেওয়া হয়।
অয়োজনের বিজয়ীরা হলেন-‘রবীন্দ্রনাথ: চির-নূতনেরে দিল ডাক’ গ্রন্থে সুমন মজুমদার (প্রথম), পলাশ মজুমদার (দ্বিতীয়), কবীর আলমগীর (তৃতীয়), ইলিয়াস বাবর (বিশেষ) ও সিদ্দিকী হারুন (বিশেষ)। ‘নজরুল : সৃজনের অন্দরমহল’ গ্রন্থে নার্গিস সুলতানা (প্রথম), জাকিয়া সুলতানা (দ্বিতীয়), শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী (তৃতীয়), রাকিবুল রকি (বিশেষ) ও জোবায়ের মিলন (বিশেষ)।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, এবং বই বইয়ের সমালোচনা প্রকাশ করছে এটা ভালো উদ্যোগ। যারা সমালোচনা লিখেন তাদের মনে রাখতে হবে এই ভাষায় বিদ্যাসাগর লিখেছেন, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র লিখেছেন, বেগম রোকেয়া, এস ওয়াজেদ আলী লিখেছেন। তাদেরই উত্তরাধীকারী আমরা। এই অবস্থা থেকে আমরা নিচে নেমে গেছি। আমাদেরকে ওপড়ে ওঠতে হবে। যারা সমালোচনা লিখবেন তারা তাদের নিজের মত অনুযায়ীই লিখবেন, কিন্তু অন্যদের মত বিবেচনায় রাখবেন।
লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, এখন যদি একটি সার্ভে হয় যে রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের বই পড়েছি কিনা? প্রতি একশো জনে একজন পাওয়া যাবে। যদি বলি টলস্টয় পড়েছি কিনা? হয়তো এক হাজার জনে একজন পাওয়া যাবে। তরুণদের কথা বাদই দিলাম, আমি বয়স্কদের সঙ্গে আলাপ করে দেখেছি এই সময়ে প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, ইট-বালু-সিমেন্ট-কাঠ। এখানে বই, সিনেমা, গান, ছবির প্রদর্শনী কী হচ্ছে এসব নিয়ে কনসার্ন নেই।
কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নায়লা ইয়াসমিন বলেন, যখন আমরা ক্রমশ বই থেকে দূরে সড়ে যাচ্ছি, ছোট্ট ছোট্ট লেখা পড়ছি, রিলস্ দেখে সময় কাটাচ্ছি। যেখানে চিন্তার জগৎটাই ছোট হয়ে আসছে। এমন একটা সময়ে এই আয়োজন করে এবং বই অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এবং বইকে ধন্যবাদ জানাই।
সাংবাদিক, গবেষক ড. কাজল রশীদ শাহীন বলেন, প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত দুটো বই-ই গবেষণামূলক। যার একটি কাজী নজরুল ও অপরটি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে। আমরা সাধারণত দেখি একজন লেখক যে কোনো একটি বিষয়কে নিয়েই গবেষণা করেন, কিন্তু এখানে ব্যতিক্রম লেখক আবদুর রউফ চৌধুরী। যিনি নজরুল এবং রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে দুটো বড়ো ধরণের গবেষণা গ্রন্থ রচনা করেছেন। প্রচলিত ধারার প্রতিষ্ঠানিক গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসে লেখক একটি নিজস্ব ও সতন্ত্র ধারায় বই দুটি লিখেছেন। এবং বই বুক রিভিউর জন্য এই বই দুটিকে নির্বাচন করে একটি মাইলফলক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
এবং বই সম্পাদক ও প্রকাশক ফয়সাল আহমেদ বলেন, প্রথমবারের মতো এবং বই এই আয়োজন করেছে, ভুল- ত্রুটি থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটি একটি কঠিন কাজ ছিল। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ও উপস্থিত সুধীজন সকলকে ধন্যবাদ জানান তিনি। বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান লেখক আবদুর রউফ চৌধুরীর পুত্র ড. মুকিদ চৌধুরীকে এই আয়োজনে এবং বই এর পাশে থাকার জন্য।
পুরস্কার জয়ী নার্গিস সুলতানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, আমি এবং আমার মেয়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি। মেয়ের উৎসাহেই মুলত আমার বুক রিভিউ লেখা। সুন্দর আয়োজনের জন্য এবং বইকে ধন্যবাদ জানাই।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে কথাশিল্পী মনি হায়দার, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক সত্যজিৎ রায় মজুমদার, প্রকাশক হাসান তারেক, ঔপন্যাসিক মাসউদ আহমাদ, শামস সাইদ, ভ্রমণ লেখক গাজী মনসুর আজিজ ও কবি মাজহার সরকার, এবং বুক রিভিউ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া পুরস্কারপ্রাপ্তরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ষ ঠ ন প রস ক র র জন য নজর ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ইরানের
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলার জবাব শেষ হয়নি বরং ইসরায়েলের বিরুদ্ধেও ইরানের হামলা ‘চলবে’।
নাম প্রকাশ করেননি এমন একজন কর্মকর্তার বরাতে ফার্স এ তথ্য দিয়েছে। ইরানের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের বরাতে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে ইরান ওই অঞ্চলে থাকা মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করতে পারে।
তেহরানে শুক্রবার পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলার জবাবে রাতে ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইরান। ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ ৩’ নামের এ অভিযানে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা করা হয়। এতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি।
অন্যদিকে ইসরায়েলের ইংরেজি পত্রিকা দ্য জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের হামলায় ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৩ জন আহত হয়েছেন। তেল আবিব ও জেরুসালেমে সতর্কতামূলক সাইরেনের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
এছাড়া ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) জানিয়েছে, ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে অন্তত দুইজন নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের সমুদ্র উপকূলবর্তী সমতল এলাকায় অন্তত ২১ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মাঝে একজন ছিলেন ৬০ বছর বয়সী একজন নারী, যাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তবে, তখন তার শরীরে কোনও প্রাণচিহ্ন পাওয়া যায়নি। এছাড়া ৪৫ বছর বয়সী এক পুরুষকেও উদ্ধার করা হয়, পরে যাকে মৃত ঘোষণা করা হয়, জানিয়েছে এমডিএ।
ইরান ইসরায়েলে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এ কথা জানিয়েছে।
এক্সে দেওয়া পোস্টে তারা লিখেছে, ‘ইরানের ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার বিষয়টি শনাক্ত হওয়ার পর-ই বিভিন্ন অঞ্চলের ওয়ার্নিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে।’ সেখানে আরও বলা হয়, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী হামলার উৎস শনাক্ত করছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী উৎসকে লক্ষ্য করে প্রতিরোধমূলক অভিযানে নামছে। তবে, ইসরায়েলের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম তথা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘শতভাগ দুর্ভেদ্য না’ উল্লেখ করে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, তারা যেন সমস্ত নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলে।
এর আগে ইরানে পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় নজিরবিহীন বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শুক্রবার ভোরে বিভিন্ন অঞ্চলে একাধারে চালানো হামলায় দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর অন্তত পাঁচ শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি ও রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি।
জবাবে অন্তত ১০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে পাল্টা হামলা চালায় ইরান। শুক্রবার রাতে চালানো ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ-৩’ নামের ওই অভিযানে ইসরায়েলের তেল আবিবে বিস্ফোরণের শব্দ ও ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। পরপর দুই দফায় ইসরায়েলে এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। এ সময় সাইরেন বেজে ওঠে এবং বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার নির্দেশ দেয় প্রশাসন।
এর আগে ইসরায়েলে দফায় দফায় হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত রাজনীতিক আলি শামখানি। অন্তত ২০০ যুদ্ধবিমান দিয়ে চালানো ইরানের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ হামলায় প্রাণ গেছে ছয় পরমাণু বিজ্ঞানীরও। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনা। ভোর থেকে দিনভর দফায় দফায় এ হামলা হয়।
বেসরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, হামলায় নারী-শিশুসহ অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হন ৩২০ জন। এটাকে ‘ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে বর্ণনা করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। জাতিসংঘকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেন, নিরাপত্তা কাউন্সিলের উচিত বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসা।
ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষাপটে গতকাল শুক্রবার রাতেও ইরানে হামলা অব্যাহত রাখে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনা ও ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণের স্থানকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়।