পেঁয়াজ সংরক্ষণের মডেল ঘর নির্মাণ ও বন্টনে অনিয়ম, বিপাকে কৃষক
Published: 28th, April 2025 GMT
দেশজুড়ে পেঁয়াজ উৎপাদনের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে ফরিদপুর জেলা। আর এই জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়ে থাকে সালথা উপজেলায়। কিন্তু পেঁয়াজ সংরক্ষণে মডেল ঘরের কাজ শেষ না হওয়ায় বিপাকে পড়েছে সালথার কৃষকরা। বরাদ্দকৃত ঘর বন্টনেও হয়েছে অনিয়ম।
কৃষকরা জানায়, এ বছর কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন এবং বিপণন কার্যক্রম উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে সালথায় ৪৫টি ঘরের বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সালথা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের নাম পাঠালেও কোনো কৃষক বিনামূল্যে ঘর পাননি।
তাদের অভিযোগ, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা শাহজাহান আলী ও আধুনিক পদ্ধতিতে পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণাগার নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হেলাল উদ্দিনের যোগসাজশে ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার বিনিময়ে এসব ঘর দেওয়া হয়েছে। এমনকি ঘরের ডিজাইনও বিকৃত করে নির্মাণ করা হয়েছে।
জানা যায়, পাঁচ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা এসব ঘর। মাত্র এক শতাংশ জমিতে টিন-বাঁশ, লোহা ও কংক্রিটের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়। এতে প্রতিটি ঘরে বাতাস চলাচলের জন্য ৬টি বায়ু নিষ্কাশন পাখা সংযুক্ত করা হয়েছে। মূলত ভ্যান্টিলেশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকার কারণেই সংরক্ষিত পেঁয়াজ নষ্ট হবে না। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা পরিমাপের জন্য প্রতিটি ঘরে হাইগ্রোমিটার রয়েছে। এসব ঘরে সংরক্ষণ করা যাবে সাড়ে ৩শ থেকে ৪শ মণ পেঁয়াজ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বর মাসে ফরিদপুরের মেসার্স জাকির এন্ড ব্রাদার্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৭% লেস দিয়ে এসব ঘরের কাজ শুরু করেন। চলতি বছরের ৩০ মার্চ ঘরের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদার ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় এখনও কাজ শেষ হয়নি। অধিকাংশ ঘরের কাজ শুরু করলেও একটি ঘরের কাজও সম্পূর্ন করতে পারেনি। এদিকে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য এসব মডেল ঘর পেতে সালথা উপজেলা কৃষি অফিসে আবেদন করেছেন ৭০ জন কৃষক। কৃষি অফিস যাচাই-বাছাই করে ৩০ জন কৃষকের নাম প্রকল্প পরিচালকের নিকট পাঠায়। কিন্তু এই তালিকা থেকে কাউকেই ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
সালথা উপজেলার যদুনন্দি ইউনিয়নের কাজীপাড়ার মো.
স্থানীয় গট্টি ইউনিয়নের কানইড় গ্রামের এক কৃষক বলেন, আমি ১০ হাজার টাকা খুশি হয়ে শাহজাহান স্যারকে দিয়েছি। অন্যরা ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়ে ঘর পেয়েছে।
রামকান্তুপুর ইউনিয়নের নারানদিয়া গ্রামের শাহিদ মিয়া বলেন, টাকা ছাড়া কি ঘর পাওয়া যায়? ঘর পেতে ৫০ হাজার টাকা লাগে।
বল্লভদী ইউনিয়নের পশ্চিম পিশনাইল গ্রামের নান্নু মোল্যা বলেন, ঘরের সকল খরচ সরকার বহন করার কথা থাকলেও মিস্ত্রি খাবারের খরচ আমাদের বহন করতে হয়েছে। এছাড়া আমরা ঘরের ফ্লোরে বালু না দেওয়া পর্যন্ত ঠিকাদারের লোক কাজে আসবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাকির এন্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মো. জাকির হোসেন বলেন, আমরা কোন অতিরিক্ত টাকা পয়সা নিচ্ছি না। কৃষকরা মিস্ত্রিদের স্বেচ্ছায় খাওয়াচ্ছে। আর যেসব ঘরে বেশি বালু লাগছে সেগুলোতে কৃষকরা বালু ফেলে দিচ্ছে।
টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা শাহজাহান আলী বলেন, সালথায় সরকারি ঘর বরাদ্দের চেয়ে চাহিদা বেশি থাকায় আমরা সবাইকে ঘর দিতে দিতে পারি নাই। তাই আমার নামে উল্টাপাল্টা কথা বলছে।
সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন কর্মকার বলেন, মডেল ঘর পাওয়ার জন্য সালথা উপজেলা কৃষি অফিসে ৭০ জন কৃষক আবেদন করেন। কৃষি অফিস যাচাই-বাছাই করে ৩০ জন কৃষকের নাম প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠানো হয় কিন্তু এই তালিকা থেকে কাউকেই ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এছাড়া কারা এসকল ঘর পেয়েছে সে বিষয়েও আমাদেরকে অবগত করা হয়নি।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, ঘর বিতরণ, নির্মাণ ও টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
ফরিদপুর জেলার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. শাহদাত হোসেন এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালকের সাথে কথা বলার জন্য অনুরাধ করেন।
আধুনিক পদ্ধতিতে পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণাগার নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হেলাল উদ্দিন বলেন, এই মডেল ঘরগুলো পাওয়ার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। গণবিজ্ঞপ্তির প্রকাশ হওয়ার পরে কৃষকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যাচাই-বাছাই করে ঘরগুলো কৃষকদের সুবিধার্থে বিনামূল্যে দিয়েছে। টাকা-পয়সা নিয়ে ঘর দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। টাকা পয়সা নিয়ে ঘর দেওয়ার ব্যাপারে আমরা অবগত নই। আর আমাদের ডিজাইনের বাহিরে ঘর করা বা বাড়তি টাকা নিয়ে ঠিকাদার ঘর করে দিবে এই ধরনের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। টাকা পয়সা লেনদেনের বিষয়ে যদি কোনো কৃষক আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে আমরা তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী এই ঘরের কাজ ৩০ মার্চ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে ঠিকাদার ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নিয়েছেন। ৩০ এপ্রিলের ভেতরে এই ঘরের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। আমাদের জানামতে ৭০ শতাংশ ঘরের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঘর র ক জ শ কর মকর ত র বর দ দ ব যবস থ আম দ র র জন য উপজ ল ব পণন ক ষকর
এছাড়াও পড়ুন:
কেটি পেরি ও জাস্টিন ট্রুডোর ডিনার, গুঞ্জন
মাসখানেক আগে অভিনেতা অরল্যান্ডো ব্লুমের সঙ্গে পপ তারকা কেটি পেরির বাগদান ভেঙেছে। এবার তাঁর সঙ্গে কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নাম জড়িয়েছে। গত সোমবার কানাডার মন্ট্রিয়লের একটি রেস্তোরাঁয় একসঙ্গে খাবার খেতে দেখা গেছে তাঁদের। বিষয়টি নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়েছে।
রেস্তোরাঁয় দুজনের ছবি প্রকাশ করেছে টিএমজেড। টিএমজেডের বরাতে মার্কিন সাময়িকী পিপল জানিয়েছে, কেটি পেরি ও জাস্টিন ট্রুডো একসঙ্গে দারুণ সময় কাটাচ্ছেন। ৪০ বছর বয়সী পেরি ও ৫৩ বছর বয়সী ট্রুডোকে মন্ট্রিয়লের লে ভিওলন রেস্তোরাঁয় দেখা গেছে। রাতের খাবার খাওয়ার সময় তাঁরা রেস্টুরেন্টের শেফ ড্যানি স্মাইলসের সঙ্গে দেখা করেন এবং খাওয়া শেষে রান্নাঘরে গিয়ে কর্মীদের ধন্যবাদ জানান।
আরও পড়ুনপাঁচটি অ্যালবামের স্বত্ব বেচলেন কেটি পেরি২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩পেরি ও ট্রুডো লবস্টারসহ নানা পদ দিয়ে রাতের খাবার সেরেছেন। বিষয়টি নিয়ে পেরির কোনো মুখপাত্র এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি। ট্রুডোর প্রতিক্রিয়াও পাওয়া যায়নি।
গত জুনে কেটি পেরি ও ৪৮ বছর বয়সী অরল্যান্ডো ব্লুমের বাগদান ভাঙার খবর প্রকাশ্যে এসেছে। কয়েক সপ্তাহ পর তাঁদের প্রতিনিধি জানান, এই বিচ্ছেদ হুট করে নয়, কয়েক পর ধরেই তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁদের প্রতিনিধি আরও জানান, সাবেক এই দম্পতি চার বছর ছয় মাস বয়সী মেয়ে ডেইজি ডাভের কল্যাণে সব সময় একসঙ্গে থেকেছেন এবং তার চাহিদাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন।
জাস্টিন ট্রুডো ও তাঁর স্ত্রী সোফি গ্রেগোয়ার ২০২৩ সালের আগস্টে, ১৮ বছরের দাম্পত্যজীবনের অবসান ঘটানোর ঘোষণা দেন। তাঁরা জানান, এটি ছিল পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে নেওয়া শান্তিপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এই দম্পতির তিন সন্তান রয়েছে—১৭ বছর বয়সী জেভিয়ার, ১৬ বছর বয়সী এলা গ্রেস এবং ১১ বছর বয়সী হাদ্রিয়েন।
জাস্টিন ট্রুডো ও সোফি গ্রেগোয়ারের বিচ্ছেদের সময় ইনস্টাগ্রামে ইংরেজি ও ফরাসি দুই ভাষায় একটি পোস্টে ট্রুডো লেখেন, ‘সোফি ও আমি আপনাদের জানাতে চাই যে বহু গভীর ও কঠিন আলাপের পর আমরা আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
ট্রুডো আরও লেখেন, ‘আমরা সব সময় একটি ঘনিষ্ঠ পরিবার হিসেবে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা বজায় রেখেছি এবং আমরা যা কিছু গড়েছি ও গড়ে তুলব—তার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। আমাদের সন্তানদের মঙ্গলের জন্য, আমরা অনুরোধ করছি যেন আপনারা আমাদের এবং আমাদের সন্তানদের গোপনীয়তা রক্ষা করেন। ধন্যবাদ।’