এপ্রিলজুড়ে দর পতন, আস্থা ফেরানোর উদ্যোগ নেই
Published: 28th, April 2025 GMT
পতনই যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের শেয়ারবাজারের। টানা দুই সপ্তাহ ধরে চলা লাগাতার দর পতনের পর চলতি সপ্তাহের শুরুতে বেশির ভাগ শেয়ারের দরবৃদ্ধিতে ভর করে গত রোববার ৪২ পয়েন্ট বাড়ে সূচক। তবে ওই বৃদ্ধি এক দিনও টিকল না। গতকাল সোমবার ফের পতনের ধারায় ফিরেছে এ বাজার। অধিকাংশ শেয়ারের দর পতন হয়েছে, ৪২ পয়েন্ট হারিয়ে সূচক নেমেছে ৪৯৫২ পয়েন্টে।
এমন দর পতনের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বাজারের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন বিনিয়োগকারীরা। এর প্রকাশ গত দুই দিনে দেখা গেছে। আগের দুই সপ্তাহের ধারাবাহিক পতনে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসেও দর পতনে লেনদেন শুরু হয়। এতে প্রথম আড়াই ঘণ্টাতে সূচক ৫৭ পয়েন্ট হারিয়ে ৪৯১৪ পয়েন্টে নামে। তবে বিএসইসির চেয়ারম্যান পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন– এমন গুজবে হঠাৎ ঘুরে দাঁড়ায় বাজার। ওই পতনের ধারা থেকে ১০০ পয়েন্ট বেড়ে ৫০১১ পয়েন্ট পর্যন্ত ওঠে। তবে ‘চেয়ারম্যান পদত্যাগ করছেন না’– এমন খবরে ফের দর পতন হয়েছে।
শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টদের অনেকে মনে করছেন, খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপরই বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। লাগাতার পতনের ধারা তারই ইঙ্গিত। ‘শেয়ারদর বা সূচকের উত্থান-পতন দেখা বিএসইসির কাজ নয়’– এমন মনোভাব পোষণ করে সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তারা বাজারের এ ধারাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শুধু চলতি এপ্রিলেই দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ২৬৬ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ১০ শতাংশ পতন হয়েছে। এ সময়ের ১৬ কর্মদিবসের মধ্যে ১৩ দিনই হয়েছে দর পতন। তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে ৩০৯টির বা ৮৫ শতাংশের পতন হয়েছে। তাতে সূচক হারিয়েছে ৩০৮ পয়েন্ট। বিপরীতে বাকি তিন দিনে শেয়ারদরের সামান্য বৃদ্ধিতে সূচক বেড়েছিল মাত্র ৪২ পয়েন্ট। গতকালও ডিএসইতে ৯৩ শেয়ার ও ফান্ডের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২৪৩টির দর পতন হয়েছে।
বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিদিনই লোকসান নিয়ে সব শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছাড়ছেন কিছু না কিছু বিনিয়োগকারী। যাদের লোকসান অনেক বেশি, তারা বাধ্য হয়ে পড়ে আছেন। নতুন করে কেউ বিনিয়োগে আগ্রহ পাচ্ছেন না। এ চিত্র এক বা দুই দিনের হলে সমস্যা ছিল না। যখন দিনের পর দিন, মাসের পর মাস একই ধারায় চলছে, তখনও বিএসইসি যদি মনে করে, এটা সমস্যা নয় বা এটা দেখা তাদের কাজ নয়, তাহলে এমন কমিশন না থাকাই ভালো।
টাকার অভাবে বিনিয়োগ হচ্ছে না, দর পতন হচ্ছে– এমন ধারণা ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক রিচার্ড ডি’ রোজারিও। জানতে চাইলে তিনি সমকালকে বলেন, শত সমস্যার মধ্যেও কিছু মানুষের কাছে বিনিয়োগযোগ্য টাকা থাকে। তারা বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ চান। এটা নিশ্চিত করার দায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্টক এক্সচেঞ্জসহ সব বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। বিনিয়োগে এই আস্থার পরিবেশ তৈরিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্টক এক্সচেঞ্জসহ সবাই ব্যর্থ।
বিনিয়োগে আস্থার পরিবেশ না থাকার ধারণাকে সমর্থন করেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। তবে খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কিছু কর্মকাণ্ড শেয়ারবাজারে ‘আতঙ্ক’ তৈরি করায় দর পতন হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
এমন ধারণার ব্যাখ্যায় বিএসইসির সাবেক এ চেয়ারম্যান বলেন, ‘নানা কারণে এখন দেশে বিনিয়োগ কমেছে। এর মধ্যে ব্যাংক সুদহার ও সরকারি (ট্রেজারি) বন্ডের সুদহার বেশি। মূল্যস্ফীতিও আগের তুলনায় কমলেও এখনও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক। এ অবস্থায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ কম হওয়ারই কথা। তাই বলে লাগাতার পতনের কোনো কারণ আছে বলে মনে করি না।’ কমিশন (বিএসইসি) কিছু কর্মকাণ্ড বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আনাস্থা এবং আতঙ্ক তৈরি করেছে, যার কারণে দর পতন দীর্ঘায়িত হচ্ছে, এমনটা ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে বলে মন্তব্য তাঁর।
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, শেয়ারবাজারে সুশাসন না থাকলে মানুষ বিনিয়োগে আস্থা পায় না। সুশাসন ফেরানোর দায় যার, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিজেদের মধ্যেই গণ্ডগোল পাকিয়ে রেখেছে। কমিশনের সঙ্গে কর্মকর্তাদের আস্থার পরিবেশ নেই, নিজেদের মধ্যে দলাদলি হচ্ছে। এ খবর গণমাধ্যমেও আসছে। এর থেকে বের হওয়ারও কোনো লক্ষণ বা উদ্যোগ দেখছি না। এমন পরিবেশে কোনো বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করবেন না, এটাই স্বাভাবিক।
সূচকের উত্থান বা পতন ঠেকানো নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ নয়– এমন ধারণার বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাবেক এ প্রধান বলেন, অবশ্যই সূচক কোথায় উঠল বা কোথায় গিয়ে পড়ল, তা দেখার দায় বিএসইসির নয়। তবে বিএসইসির সৃষ্ট আতঙ্কে বাজারে নেতিবাচক ধারা তৈরি হলে তা সামাল দেওয়া তাদের দায়িত্ব। তবে এ দায়িত্ব কাউকে শেয়ার বিক্রি বন্ধ করতে বা কাউকে কিনতে বাধ্য করা নয়, যেসব ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড চলছে, তা বন্ধ করে এবং বিনিয়োগকারীরা যেসব বিষয়ে অস্বস্তি বোধ করছেন, তা দূর করেই করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র শ য় রব জ র ব এসইস র র দর পতন কর মকর ত র পতন র পর ব শ করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
পুঁজিবাজারে বড়-মাঝারি বিনিয়োগকারী বেড়েছে : বিএসইসি
পুঁজিবাজার থেকে সাম্প্রতিক সময়ে বিনিয়োগকারী বেরিয়ে যাওয়ার কথা বলা হলেও পরিসংখ্যানে এর বিপরীত চিত্রই উঠে এসেছে। ২০২৪ সালের ৩০ জুনের তুলনায় ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে অতি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কিছুটা কমলেও বড় ও মাঝারি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেড়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা নয় বরং তাদের বিনিয়োগক্ষমতার ধরণ ও মান বদলেছে। তাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কিংবা বিনিয়োগ কমছে এমন তথ্য সম্পূর্ণ সত্য নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিএসইসি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়েছে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা অথবা বিও হিসাবের সংখ্যা কিংবা বিনিয়োগ কমছে এমন বক্তব্য সাম্প্রতিক সময়ে পরিলক্ষিত হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি মূলত সম্পূর্ণ সত্য নয়। মূলত বিগত বছরের তুলনায় পুঁজিবাজারে বৃহৎ বিনিয়োগকারীর (৫০ কোটি হতে ৫০০ কোটি টাকা এবং তদুর্ধ্ব পোর্টফোলিও ভ্যালুসম্পন্ন) সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরো পড়ুন:
পুঁজিবাজারে টানা ৩ কার্যদিবস সূচকের পতন
বিএসইসি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করছে: ডিবিএ সভাপতি
পাশাপাশি বিগত বছরের তুলনায় মাঝারি বিনিয়োগকারীর (৫০ লাখের ঊর্ধ্বে ও ৫০ কোটি টাকার নিম্নের পোর্টফোলিও ভ্যালুসম্পন্ন) সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসঙ্গে বিগত বছরের তুলনায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর (১ লাখের ঊর্ধ্বে ও ৫০ লাখের টাকার নিম্নের পোর্টফোলিও ভ্যালুসম্পন্ন) সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে বিগত বছরের তুলনায় অতি ক্ষুদ্রবিনিয়োগকারীর (১ লাখ টাকার নিম্নের পোর্টফোলিও ভ্যালুসম্পন্ন) সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। অর্থ্যাৎ অতি ক্ষুদ্রবিনিয়োগকারীর (১ লাখ টাকার নিম্নের পোর্টফোলিও ভ্যালুসম্পন্ন) সংখ্যা ব্যতীত অন্য সকল ক্ষেত্রেই উন্নতি হয়েছে।
পোর্টফোলিও ভ্যালু ৫০ কোটি টাকার বেশি এমন বৃহৎ বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ২০২৫ সালের জুনে দাঁড়িয়েছে ৭৩৩ জন, যা আগের বছর ছিল ৬৯৬। আর ৫০০ কোটির ঊর্ধ্বে পোর্টফোলিওধারীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭০, যা আগের বছর ছিল ৬৮।
মাঝারি বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ৫০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে এমন মাঝারি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ২২৫ জন, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১ হাজার ৩১৮ জন বেশি।
তবে বিপরীত চিত্র রয়েছে ১ লাখ টাকার নিচে বিনিয়োগ রয়েছে এমন অতি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। তাদের সংখ্যা ২০২৪ সালের ৯ লাখ ১৬ হাজার ১৫৭ থেকে কমে ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৩১ হাজার ৭৪৮ জন। অর্থাৎ প্রায় ৮৫ হাজার বিনিয়োগকারী ১ লাখ টাকার নিচের পোর্টফোলিও থেকে সরে এসেছেন বা বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছেন।
ঢাকা/এনটি/বকুল