পতনই যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের শেয়ারবাজারের। টানা দুই সপ্তাহ ধরে চলা লাগাতার দর পতনের পর চলতি সপ্তাহের শুরুতে বেশির ভাগ শেয়ারের দরবৃদ্ধিতে ভর করে গত রোববার ৪২ পয়েন্ট বাড়ে সূচক। তবে ওই বৃদ্ধি এক দিনও টিকল না। গতকাল সোমবার ফের পতনের ধারায় ফিরেছে এ বাজার। অধিকাংশ শেয়ারের দর পতন হয়েছে, ৪২ পয়েন্ট হারিয়ে সূচক নেমেছে ৪৯৫২ পয়েন্টে। 
এমন দর পতনের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বাজারের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন বিনিয়োগকারীরা। এর প্রকাশ গত দুই দিনে দেখা গেছে। আগের দুই সপ্তাহের ধারাবাহিক পতনে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসেও দর পতনে লেনদেন শুরু হয়। এতে প্রথম আড়াই ঘণ্টাতে সূচক ৫৭ পয়েন্ট হারিয়ে ৪৯১৪ পয়েন্টে নামে। তবে বিএসইসির চেয়ারম্যান পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন– এমন গুজবে হঠাৎ ঘুরে দাঁড়ায় বাজার। ওই পতনের ধারা থেকে ১০০ পয়েন্ট বেড়ে ৫০১১ পয়েন্ট পর্যন্ত ওঠে। তবে ‘চেয়ারম্যান পদত্যাগ করছেন না’– এমন খবরে ফের দর পতন হয়েছে। 

শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টদের অনেকে মনে করছেন, খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপরই বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। লাগাতার পতনের ধারা তারই ইঙ্গিত। ‘শেয়ারদর বা সূচকের উত্থান-পতন দেখা বিএসইসির কাজ নয়’– এমন মনোভাব পোষণ করে সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তারা বাজারের এ ধারাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শুধু চলতি এপ্রিলেই দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ২৬৬ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ১০ শতাংশ পতন হয়েছে। এ সময়ের ১৬ কর্মদিবসের মধ্যে ১৩ দিনই হয়েছে দর পতন। তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে ৩০৯টির বা ৮৫ শতাংশের পতন হয়েছে। তাতে সূচক হারিয়েছে ৩০৮ পয়েন্ট। বিপরীতে বাকি তিন দিনে শেয়ারদরের সামান্য বৃদ্ধিতে সূচক বেড়েছিল মাত্র ৪২ পয়েন্ট। গতকালও ডিএসইতে ৯৩ শেয়ার ও ফান্ডের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২৪৩টির দর পতন হয়েছে।
বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিদিনই লোকসান নিয়ে সব শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছাড়ছেন কিছু না কিছু বিনিয়োগকারী। যাদের লোকসান অনেক বেশি, তারা বাধ্য হয়ে পড়ে আছেন। নতুন করে কেউ বিনিয়োগে আগ্রহ পাচ্ছেন না। এ চিত্র এক বা দুই দিনের হলে সমস্যা ছিল না। যখন দিনের পর দিন, মাসের পর মাস একই ধারায় চলছে, তখনও বিএসইসি যদি মনে করে, এটা সমস্যা নয় বা এটা দেখা তাদের কাজ নয়, তাহলে এমন কমিশন না থাকাই ভালো।

টাকার অভাবে বিনিয়োগ হচ্ছে না, দর পতন হচ্ছে– এমন ধারণা ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক রিচার্ড ডি’ রোজারিও। জানতে চাইলে তিনি সমকালকে বলেন, শত সমস্যার মধ্যেও কিছু মানুষের কাছে বিনিয়োগযোগ্য টাকা থাকে। তারা বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ চান। এটা নিশ্চিত করার দায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্টক এক্সচেঞ্জসহ সব বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। বিনিয়োগে এই আস্থার পরিবেশ তৈরিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্টক এক্সচেঞ্জসহ সবাই ব্যর্থ। 
বিনিয়োগে আস্থার পরিবেশ না থাকার ধারণাকে সমর্থন করেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। তবে খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কিছু কর্মকাণ্ড শেয়ারবাজারে ‘আতঙ্ক’ তৈরি করায় দর পতন হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

এমন ধারণার ব্যাখ্যায় বিএসইসির সাবেক এ চেয়ারম্যান বলেন, ‘নানা কারণে এখন দেশে বিনিয়োগ কমেছে। এর মধ্যে ব্যাংক সুদহার ও সরকারি (ট্রেজারি) বন্ডের সুদহার বেশি। মূল্যস্ফীতিও আগের তুলনায় কমলেও এখনও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক। এ অবস্থায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ কম হওয়ারই কথা। তাই বলে লাগাতার পতনের কোনো কারণ আছে বলে মনে করি না।’ কমিশন (বিএসইসি) কিছু কর্মকাণ্ড বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আনাস্থা এবং আতঙ্ক তৈরি করেছে, যার কারণে দর পতন দীর্ঘায়িত হচ্ছে, এমনটা ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে বলে মন্তব্য তাঁর।
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, শেয়ারবাজারে সুশাসন না থাকলে মানুষ বিনিয়োগে আস্থা পায় না। সুশাসন ফেরানোর দায় যার, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিজেদের মধ্যেই গণ্ডগোল পাকিয়ে রেখেছে। কমিশনের সঙ্গে কর্মকর্তাদের আস্থার পরিবেশ নেই, নিজেদের মধ্যে দলাদলি হচ্ছে। এ খবর  গণমাধ্যমেও আসছে। এর থেকে বের হওয়ারও কোনো লক্ষণ বা উদ্যোগ দেখছি না। এমন পরিবেশে কোনো বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করবেন না, এটাই স্বাভাবিক।

সূচকের উত্থান বা পতন ঠেকানো নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ নয়– এমন ধারণার বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাবেক এ প্রধান বলেন, অবশ্যই সূচক কোথায় উঠল বা কোথায় গিয়ে পড়ল, তা দেখার দায় বিএসইসির নয়। তবে বিএসইসির সৃষ্ট আতঙ্কে বাজারে নেতিবাচক ধারা তৈরি হলে তা সামাল দেওয়া তাদের দায়িত্ব। তবে এ দায়িত্ব কাউকে শেয়ার বিক্রি বন্ধ করতে বা কাউকে কিনতে বাধ্য করা নয়, যেসব ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড চলছে, তা বন্ধ করে এবং বিনিয়োগকারীরা যেসব বিষয়ে অস্বস্তি বোধ করছেন, তা দূর করেই করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র শ য় রব জ র ব এসইস র র দর পতন কর মকর ত র পতন র পর ব শ করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

৭ কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সাতটি কোম্পানির পরিচালনার পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

কোম্পানিগুলো হলো- কনফিডেন্স সিমেন্ট পিএলসি, রংপুর ডেয়ারি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড, মনোস্পুল বাংলাদেশ পিএলসি, এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, বাংলাদেশ মাগুরা মাল্টিপ্লেক্স পিএলসি ও একমি পেস্টিসাইডস লিমিটেড।

২০২৫ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ।

রবিবার (২ নভেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই-সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত কোম্পানিগুলো পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সর্বশেষ বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর লভ্যাংশের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কনফিডেন্স সিমেন্ট: কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৩২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটির ওই বছরে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ১১.২৩ টাকা। আর গত ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৮৮.৬৮ টাকায়। কোম্পানিটির লভ্যাংশসহ অন্যান্য আলোচ্য বিষয়সমূহ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য আগামী ২৮ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এলক্ষ্যে শেয়ারহোল্ডার নির্ধারণে আগামী ২৫ নভেম্বর রেকর্ড ডেট নির্বাচন করা হয়েছে।

রংপুর ডেয়ারি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস: কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটির ওই বছরে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ০.৬১ টাকা। আর গত ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৬.৯২ টাকায়। কোম্পানিটির লভ্যাংশসহ অন্যান্য আলোচ্য বিষয়সমূহ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য আগামী ২২ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এলক্ষ্যে শেয়ারহোল্ডার নির্ধারণে আগামী ৭ ডিসেম্বর রেকর্ড ডেট নির্বাচন করা হয়েছে।

মনোস্পুল বাংলাদেশ: কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটির ওই বছরে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৩.৭৬ টাকা। আর গত ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৪৫.০৫ টাকায়। কোম্পানিটির লভ্যাংশসহ অন্যান্য আলোচ্য বিষয়সমূহ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য আগামী ২৯ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এলক্ষ্যে শেয়ারহোল্ডার নির্ধারণে আগামী ২৩ নভেম্বর রেকর্ড ডেট নির্বাচন করা হয়েছে।

এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস: কোম্পানিটির পরিচালন পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটির ওই বছরে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ২.২১ টাকা। আর গত ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৩.৪৭ টাকায়। কোম্পানিটির লভ্যাংশসহ অন্যান্য আলোচ্য বিষয়সমূহ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য আগামী ১৮ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এলক্ষ্যে শেয়ারহোল্ডার নির্ধারণে আগামী ২০ নভেম্বর রেকর্ড ডেট নির্বাচন করা হয়েছে।

এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ: কোম্পানিটির পরিচালন পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটির ওই বছরে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ২.০৯ টাকা। আর গত ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৫৪.০৮ টাকায়। কোম্পানিটির লভ্যাংশসহ অন্যান্য আলোচ্য বিষয়সমূহ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য আগামী ২৪ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এলক্ষ্যে শেয়ারহোল্ডার নির্ধারনে আগামী ২০ নভেম্বর রেকর্ড ডেট নির্বাচন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ মাগুরা মাল্টিপ্লেক্স: কোম্পানিটির পরিচালন পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটির ওই বছরে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৩.৬০ টাকা। আর গত ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৭৪.৭৯ টাকায়। কোম্পানিটির লভ্যাংশসহ অন্যান্য আলোচ্য বিষয়সমূহ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য আগামী ২৯ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এলক্ষ্যে শেয়ারহোল্ডার নির্ধারণে আগামী ২৩ নভেম্বর রেকর্ড ডেট নির্বাচন করা হয়েছে।

একমি পেস্টিসাইডস: কোম্পানিটির পরিচালন পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ০.০১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটির ওই বছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে (১.১৪) টাকা। আর গত ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৬.৪১ টাকায়। কোম্পানিটির লভ্যাংশসহ অন্যান্য আলোচ্য বিষয়সমূহ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য আগামী ২৯ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২০ নভেম্বর রেকর্ড ডেট নির্বাচন করা হয়েছে।

এই করপোরেট ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন কোম্পানিগুলোর শেয়ারের লেনদেনের কোনো মূল্য সীমা থাকবে না।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ