তালেবান সরকার কেন ভারতের দিকে ঝুঁকছে
Published: 29th, April 2025 GMT
২০২১ সালে ভারত যখন আফগানিস্তান থেকে তাদের কূটনীতিকদের সরিয়ে নিল, তখন খুব কম বিশেষজ্ঞই ভেবেছিলেন যে তালেবান কাবুলের ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দুই দেশের সম্পর্ক কখনো আবার চালু হবে।
নব্বই দশক থেকেই আফগান তালেবানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বৈরী ছিল। এর মূল কারণ ছিল তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের প্রথম তালেবান শাসনামলে ভারত আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহ ও আহমদ শাহ মাসুদের নেতৃত্বাধীন ‘নর্দান অ্যালায়েন্সকে’ সমর্থন দিয়েছিল তালেবান উৎখাতে।
পরে ২০০১–২১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনীর উপস্থিতি ছিল। সেই সময় ভারত তাদের তালেবানবিরোধী নীতিকে আরও শক্ত করে তোলে। ফলে কাবুল ও নয়াদিল্লির দূরত্ব আরও বাড়ে। এই সময়জুড়ে ভারত তালেবানকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে চিহ্নিত করত। তাদের কোনো রাজনৈতিক স্বীকৃতি দিত না। এমনকি যখন আমেরিকা দোহায় তালেবানের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল, তখনও ভারত যে কোনো ধরনের শান্তি আলোচনার ধারণারই বিরোধিতা করেছিল।
আরও পড়ুন তালেবানদের নিয়ে এখন কী করবে পাকিস্তান ২০ জানুয়ারি ২০২৫২০২০ সালের দোহা চুক্তির পর বিশ্লেষকেরা মনে করেছিলেন যে আফগানিস্তান প্রসঙ্গে ভারত প্রভাব হারিয়েছে। তালেবান কাবুল দখলের আগে ভারত তার দূতাবাস ফেলে পালিয়ে আসে। যদিও ২০২২ সালে কিছু প্রাথমিক পর্যায়ের কূটনৈতিক কার্যক্রম আবার শুরু হয়। যেমন মানবিক সহায়তা পাঠানো। তবুও ভারতের সঙ্গে দ্বিতীয় মেয়াদের তালেবান নেতৃত্বাধীন ‘ইসলামিক আমিরাত’-এর সম্পর্ক উন্নতির সম্ভাবনা তখনও দুরাশাই মনে হচ্ছিল। আদর্শগত ব্যবধান ও অতীতের তিক্ততা ছাড়াও পাকিস্তানের ভৌগোলিক উপস্থিতি ছিল এই দুই পক্ষের মধ্যে এক অদৃশ্য প্রাচীর।
কিন্তু কয়েক বছরের ব্যবধানে দৃশ্যপট পাল্টেছে। এখন পাকিস্তান এক সংকটময় অবস্থায় আছে। তার দুই পাশের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বৈরিতা বাড়ছে।
মিশ্রি-মুততাকি বৈঠক: এক নতুন মোড়গত জানুয়ারিতে দুবাইয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি ও আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুততাকির মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। বোঝা যাচ্ছে যে ভারত এখন পাকিস্তানের আফগান নীতির দুর্বলতার সুযোগ নিতে প্রস্তুত। এর আগে ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাকিস্তান-আফগানিস্তান-ইরান বিভাগের যুগ্ম সচিব জে পি সিং প্রথমবারের মতো কাবুলে আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ইয়াকুব হচ্ছেন তালেবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের পুত্র।
পাকিস্তানের সাবেক আফগান রাষ্ট্রদূত মনসুর আহমদ খান ডন পত্রিকাকে বলেন, ‘আফগানিস্তান-ভারত সংযোগ নিয়ে পাকিস্তানের বিচলিত হওয়া উচিত নয়। .
কিন্তু বাস্তবে এটি সহজ কাজ নয়। আফগানিস্তানের বর্তমান শাসকদের সঙ্গে পাকিস্তানের আগের সখ্য কমে এসেছে। খাইবার পাখতুনখাওয়ার মাদ্রাসার সঙ্গে তালেবান নেতাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। কিন্তু তবু ২০২১ সালের ১৫ আগস্টের পর পাকিস্তান কাবুলের নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখার চেষ্টা করেছে।
আরও পড়ুনভারত কি পাকিস্তান–তালেবান দ্বন্দ্বের সুযোগ নিচ্ছে১৫ জানুয়ারি ২০২৫সব মিলিয়ে বলা যায়, আফগানিস্তানে ভারতের নতুন তৎপরতা শুধু পাকিস্তানের জন্য নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার জন্যও এক নতুন পরীক্ষা। পাকিস্তানের কূটনৈতিক ভুলগুলোর সুযোগ নিয়ে ভারত যদি তালেবান শাসিত আফগানিস্তানে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে পারে, তাহলে আঞ্চলিক রাজনীতিতে বড় ধরনের পালাবদল ঘটতে পারে।পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকা অবস্থায় বিলাওয়াল ভুট্টো আফগান তালেবানকে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে করার বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরেও পাকিস্তানের জাতিসংঘ দূত মুনির আকরাম জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বলেছিলেন যে আফগানিস্তানের সমস্যার সমাধান সংলাপ ও যৌথ ব্যবস্থার মাধ্যমেই সম্ভব।
কিন্তু এখানেও বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। ডুরান্ড রেখা বরাবর সীমান্ত সংঘর্ষ, অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা, টোরখাম ও চামান সীমান্তে দিনের পর দিন অচলাবস্থা—এসব ঘটনা পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের সম্পর্কে গভীর অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে। আফগানিস্তানের অধিকাংশ স্থল বাণিজ্য ও সমুদ্রবন্দর নির্ভর করে পাকিস্তানের ওপর। তাই সীমান্ত বন্ধ হলে কাবুলের অর্থনীতি বড় ধাক্কা খায়।
তার ওপর যুক্ত হয়েছে আশ্রয়প্রার্থী সমস্যা। ২০২৩ সালের নভেম্বরে প্রায় পাঁচ লাখ ‘অবৈধ’ আফগান শরণার্থীকে দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় আরও প্রায় ১০ লাখ মানুষকে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ সংকটে জর্জরিত আফগান প্রশাসন এই চাপ নিতে মোটেও প্রস্তুত নয়।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাকিস্তানের আকাশপথ থেকে আফগানিস্তানের ওপর বিমান হামলা। গত তিন বছরে পাকিস্তান দুবার তালেবানপন্থী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-র ঘাঁটিতে হামলা চালায়। আফগানিস্তানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্কের চেষ্টা চলাকালেই এমন হামলা হয়েছে, ফলে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলাফল নেতিবাচক হয়েছে।
কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনাকর সময়ে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুততাকি ও ভারতের কূটনীতিক আনন্দ প্রকাশের মধ্যে বৈঠক। কাবুল, ২৭ এপ্রিল।উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত আফগ ন স ত ন আফগ ন স ত ন র র ক টন ত ক পরর ষ ট র মন ত র অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (পাস) প্রোগ্রামে ভর্তি কার্যক্রম আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টা থেকে শুরু হচ্ছে। আবেদন করা যাবে আগামী ১৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত। এ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে ১৩ নভেম্বর থেকে। গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন যেসব শিক্ষার্থী
২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি বা সমমান এবং ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন ভর্তির জন্য। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি (ভোকেশনাল), এইচএসসি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি) ও ডিপ্লোমা-ইন-কমার্স উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন। এ-লেভেল, ও-লেভেল ও বিদেশি সনদধারীদের ক্ষেত্রে নির্ধারিত নিয়মে সরাসরি ডিন অফিসে বা ই–মেইলে আবেদন করতে হবে শিক্ষার্থীদের।
যেসব শিক্ষার্থী গত দুই শিক্ষাবর্ষে (২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪) স্নাতক (সম্মান), স্নাতক (সম্মান) প্রফেশনাল বা স্নাতক (পাস) প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে রেজিস্ট্রেশন কার্ড পেয়েছেন, তাঁরা এই শিক্ষাবর্ষে নতুন করে ভর্তি হতে পারবেন না। তবে পূর্ববর্তী ভর্তি বাতিল করে নতুন শিক্ষাবর্ষে আবেদন করতে পারবেন। একই সঙ্গে কোনো শিক্ষার্থী দ্বৈত ভর্তি হলে তাঁর উভয় ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশন বাতিল হবে।
আবেদন ফি ৪০০ টাকা
ভর্তি ফি হিসেবে প্রাথমিক আবেদন ফি ৪০০ টাকা, যার মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ ২৫০ টাকা এবং কলেজের অংশ ১৫০ টাকা। ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পর রেজিস্ট্রেশন ফি ৭২০ টাকা জমা দিতে হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করে অনলাইনে নিশ্চয়ন করবে। তবে নিশ্চয়ন ছাড়া কোনো আবেদনকারীকে মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। আবেদন ফি ১৯ অক্টোবরের মধ্য জমা দিতে হবে।
আরও পড়ুনবাংলাদেশ বিমানে ইন্টার্নশিপ, দৈনিক হাজিরায় সম্মানী ৬০০ টাকা৪ ঘণ্টা আগেআবেদনকারীদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রতিটি কলেজের জন্য আলাদাভাবে কোর্সভিত্তিক মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হবে। একই মেধা নম্বরপ্রাপ্ত হলে এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ (৪০: ৬০ অনুপাতে) এবং প্রয়োজনে মোট নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে। এরপরও সমতা থাকলে বয়স কম শিক্ষার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ভর্তি কার্যক্রম ধাপে ধাপে প্রথম মেধাতালিকা, দ্বিতীয় মেধাতালিকা, কোটার মেধাতালিকা এবং প্রথম ও দ্বিতীয় রিলিজ স্লিপের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। তবে এবারও তৃতীয় রিলিজ স্লিপে আবেদন করার সুযোগ থাকবে না।
বিস্তারিত দেখুন এখানে
আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ, সুযোগ পাবেন ৪৮ জেলার যুবরা১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আরও পড়ুন১২ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫