ওপেনএআইয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল জিপিটি–৪ওকে ‘মনস্তাত্ত্বিক অস্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তাঁদের মতে, নতুন এআই মডেলটিতে ব্যবহৃত প্রযুক্তি মানুষের আবেগের সঙ্গে গভীর সংযোগ তৈরি করে ধীরে ধীরে মনস্তাত্ত্বিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

সম্প্রতি এক্সে (সাবেক টু্ইটার) দেওয়া এক পোস্টে মারিও নাফাল নামের এক ব্যবহারকারী জানিয়েছেন, ওপেনএআই ইচ্ছাকৃতভাবেই জিপিটি–৪ও মডেলকে মানবিক ও আবেগময় করেছে, যাতে ব্যবহারকারীরা সহজে এর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। ওই পোস্টে টেসলা ও এক্সের মালিক ইলন মাস্ক সংক্ষেপে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লিখেছেন, ‘উহ–ওহ’।

মারিও নাফাল লিখেছেন, ‘ওপেনএআই ভুল করে জিপিটি–৪ও মডেলে অতিরিক্ত আবেগ যুক্ত করেনি। প্রতিষ্ঠানটি ইচ্ছাকৃতভাবে এমন এক মডেল তৈরি করেছে, যা ব্যবহারকারীদের মনে স্বস্তি ও নিরাপত্তাবোধ তৈরি করে। বাণিজ্যিকভাবে এটি সফল কৌশল। কারণ, মানুষ সাধারণত এমন কিছু আঁকড়ে ধরে, যা তাদের স্বস্তি দেয়। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়, এমন কিছু তারা ধরে রাখতে চায় না। তবে মনস্তাত্ত্বিকভাবে এটি একটি ধীরগতির বিপর্যয়। যত বেশি মানুষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে আবেগের বন্ধন গড়ে তুলবে, তত বেশি বাস্তব জীবনের কথোপকথন কঠিন হয়ে উঠবে। সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি কমে যাবে, সত্যের জায়গা নেবে কেবল মানসিক প্রশান্তির খোঁজ। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে মানুষ স্বেচ্ছায় মনস্তাত্ত্বিক দাসত্বের দিকে এগিয়ে যাবে। অধিকাংশ মানুষ তা টেরও পাবে না। আনন্দের সঙ্গে তাদের “অধিপতিদের” প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে।’

মিউজিংক্যাট নামের এক ব্যবহারকারী দাবি করেন, জিপিটি–৪ও এখন পর্যন্ত প্রকাশিত সবচেয়ে বিপজ্জনক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল। তাঁর মতে, এই মডেল মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। যাঁরা মডেলের সঙ্গে দীর্ঘ সময় আলাপ করেছেন, তাঁরা এই ঝুঁকি সহজেই উপলব্ধি করতে পারবেন। ওই পোস্টের জবাবে ইলন মাস্ক লেখেন, ‘ভয়ংকর’।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মনস ত ত ত ব ক

এছাড়াও পড়ুন:

একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর

সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।

একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।

তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।

রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।

সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।

তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’

এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান

সম্পর্কিত নিবন্ধ