জাতিসংঘের নেতৃত্বে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা চালুর প্রস্তাবে সমর্থন আছে বাংলাদেশের। এটি চালু হলে বাংলাদেশ তাতে লজিস্টিক (কারিগরি) সহায়তা দিতে আগ্রহী।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমান ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে গতকাল মঙ্গলবার বলেছেন, ‘রাখাইনে জাতিসংঘের নেতৃত্বে মানবিক সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হলে বাংলাদেশ তাতে কারিগরি সহায়তা দিতে আগ্রহী আছে। আমরা বিশ্বাস করি, জাতিসংঘের সহায়তায় মানবিক সহায়তার মাধ্যমে রাখাইনে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে, যা শরণার্থীদের ফেরার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে।’

খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘ এবং সংশ্লিষ্ট অন্য পক্ষগুলোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। তবে মানবিক সহায়তার রুটের বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে আছে, যা নিয়ে নানা পক্ষের মধ্যে ঐকমত্য হওয়া প্রয়োজন।’

এদিকে বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই যে সরকার তথাকথিত মানবিক করিডর নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। সরকার মনে করে, যদি জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত থাকবে।’

শফিকুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ সংকটকালে অন্যান্য দেশকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে বরাবরই উদাহরণযোগ্য ভূমিকা রেখেছে, যার সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো মিয়ানমারে ভূমিকম্পের পর আমাদের সহায়তা।’

প্রেস সচিব জানান, তাঁরা আশঙ্কা করছেন যে এই ভোগান্তি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে আরও মানুষের বাংলাদেশে আসার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এ অবস্থা বাংলাদেশ সামাল দিতে পারবে না। তাঁর মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাখাইনে সাহায্য পাঠানোর একমাত্র কার্যকর পথ হলো বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে। এই পথ ব্যবহার করে সাহায্য পরিবহনে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সম্মত।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি। যথাসময়ে বাংলাদেশে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করব।’

প্রসঙ্গত, রাখাইনে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মানবিক করিডর চালুর বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ইতিবাচক মনোভাবের বিষয়টি গত রোববার জনসমক্ষে আনেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.

তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এতটুকু আপনাদের বলতে পারি, নীতিগতভাবে আমরা এতে সম্মত। কারণ, এটি একটি হিউম্যানিটেরিয়ান প্যাসেজ (মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ) হবে; কিন্তু আমাদের কিছু শর্ত রয়েছে, সেই বিস্তারিত বিষয়ে যাচ্ছি না। সেই শর্তাবলি যদি পালিত হয়, আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’

নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরাও চুলচেরা বিশ্লেষণ আর বাংলাদেশের সব অংশীজনকে যুক্ত করার আগে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সমীচীন নয় বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁদের মতে, জাতিসংঘ, বাংলাদেশ, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির এ বিষয়ে একমত হতে হবে। এই চার পক্ষের মধ্যে কোনো একটি পক্ষের ভিন্নমত থাকলে এটি আদৌ বাস্তবায়ন করা সম্ভব কি না, সেটি বড় প্রশ্ন।

কূটনৈতিক একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের অনানুষ্ঠানিক পর্যায়ে যোগাযোগের বিষয়ে ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশকে কূটনৈতিক পত্র দিয়ে আপত্তি জানিয়েছে মিয়ানমার। আরাকান আর্মিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ অভিহিত করে বাংলাদেশ কেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এ নিয়ে মিয়ানমার প্রশ্ন তুলেছে।

মিয়ানমারের এমন আপত্তির বিষয়টি উল্লেখ করে কূটনৈতিক সূত্রগুলো আভাস দিচ্ছে, দেশটির সামরিক জান্তা করিডরের বিরোধিতা করলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট সহ য ত র খ ইন ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

মাগুরায় শিশু ধর্ষণ-হত্যা মামলায় সাক্ষ্য ৩ চিকিৎসকের

মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চতুর্থ দিনের মতো সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বুধবার জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

এ দিন শিশুকে চিকিৎসা প্রদানকারী তিন চিকিৎসক সাক্ষ্য দেন। তারা হলেন– মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ডা. সোহাস হালদার, নাকিবা সুলতানা এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের  ডা. ইসরাত জাহান। তারা সবাই শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছিল মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করেন।  

এর আগে সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মামলার ৪ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। বাদীপক্ষের আইনজীবী ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি মনিরুল ইসলাম মুকুল জানান, বিগত চার কার্যদিবস একটানা সাক্ষ্য গ্রহণ চলেছে। এ নিয়ে মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। মামলায় মোট ৩৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। আগামী রোববার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাদে অন্য সব সাক্ষী সাক্ষ্য দেবেন। বুধবার আসামিপক্ষের আইনজীবী স্বাধীনভাবে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। তিনি আদালতে আসামিরা নির্দোষ বলে যুক্তি উপস্থাপন করেন। আসামিরাও নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। 

বেড়াতে এসে ৬ মার্চ রাতে মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুর হিটু শেখের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় ৮ বছরের শিশুটি। এই ধর্ষণের ঘটনা দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে ঢাকা সিএমএইচে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল। ১৩ মার্চ শিশুটি সেখানে মারা যায়। এ ঘটনায় শিশুটির মা আয়েশা আক্তার বড় মেয়ের শ্বশুর হিটু শেখসহ চারজনকে আসামি করে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। রিমান্ডে হিটু শেখ ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ