এপ্রিলে ডেঙ্গু রোগী মার্চের দ্বিগুণ
Published: 1st, May 2025 GMT
চলতি বছরের মার্চ মাসের চেয়ে সদ্য শেষ হওয়া এপ্রিলে দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি ছিল। গত চার মাসে দেশে যে পরিমাণ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, গত বছরের প্রথম চার মাসে তা হয়নি। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের বছর ২০২৩ সালের প্রথম চার মাসেও ডেঙ্গুতে এত আক্রান্ত রোগী ছিলেন না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ মার্চ মাসে করা জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার বাইরে বাড়লেও ডেঙ্গুর শূককীট বা লার্ভার পরিমাণ বেশ কমেছে আগের জরিপের সময়ের চেয়ে। তবে এপ্রিল মাসে দেশজুড়ে থেমে থেমে হওয়া বৃষ্টি লার্ভার পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে পারে। চলতি মে মাসেও এমন ধারার বৃষ্টির প্রবণতা আছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস। এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গুর বিস্তার আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও কীটতত্ত্ববিদেরা। তাঁদের কথা, যদি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এখনই যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এবার ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৫৭২। গত বছরের প্রথম ৪ মাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৭৫।দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংক্রমণের বছর ২০২৩ সালে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। এডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ৭০৫ জন মানুষের মৃত্যু হয়। পরের বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে রোগীর সংখ্যা আগের বছরের এক-তৃতীয়াংশের বেশি কমে যায়। মৃত্যুর সংখ্যাও তেমন হারেই কমে।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৫৭২। গত বছরের প্রথম ৪ মাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৭৫।
সদ্য শেষ হওয়া এপ্রিল মাসে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৭০১। মার্চ মাসে এ সংখ্যা ছিল ৩৩৬।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের সঙ্গে এ বছরের তুলনা করলে দেখা যায়, এবার প্রতি মাসে আগের বছরের চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গত বছরের এপ্রিল মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫০৪ জন। গত বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন যথাক্রমে ১ হাজার ৫৫, ৩৩৯ ও ৩১১ জন। এবার এই ৩ মাসে রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ১ হাজার ১৬১, ৩৭৪ ও ৩৩৬।
এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে যে প্রতি মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এটা ভালো ইঙ্গিত বহন করছে না। ডেঙ্গু আমাদের কাছে অপরিচিত রোগ নয়। কিন্তু এর ব্যবস্থাপনা এখন পর্যন্ত ভালো হয়নি। এবারের ঊর্ধ্বগতি ডেঙ্গুর প্রকৃত মৌসুম অর্থাৎ বর্ষাকালে সংক্রমণের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলার আশঙ্কা রেখে যাচ্ছে।জনস্বাস্থ্যবিদ ডা.মুশতাক হোসেন
নিছক সংখ্যা দিয়ে রোগের সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাব নির্ণয় করা যায় না, এমন কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সংখ্যা নিঃসন্দেহে কিছু ইঙ্গিত বহন করে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে যে প্রতি মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এটা ভালো ইঙ্গিত বহন করছে না। ডেঙ্গু আমাদের কাছে অপরিচিত রোগ নয়। কিন্তু এর ব্যবস্থাপনা এখন পর্যন্ত ভালো হয়নি। এবারের ঊর্ধ্বগতি ডেঙ্গুর প্রকৃত মৌসুম অর্থাৎ বর্ষাকালে সংক্রমণের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলার আশঙ্কা রেখে যাচ্ছে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পর ম ণ ব স ক রমণ র গত বছর র র প রথম র বছর
এছাড়াও পড়ুন:
বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে
আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।
এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।
ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন
সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’
এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টদেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।
ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।
আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’
আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে