শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে দাওধারা কাটাবাড়ী পাহাড়ি এলাকায় বল্লমের আঘাতে অসুস্থ পড়া এক বন্য হাতিকে চিকিৎসা দিয়েছে বন বিভাগ। এতে দ্রুত হাতিটি সুস্থ হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুরে হাতিটিকে চিকিৎসা দেয়ার সময় ভিডিও করে স্থানীয় কিছু শিক্ষার্থী। এতে প্রাণি প্রেমীদের প্রশংসায় ভাসছে বন বিভাগ।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, উপজেলার গারো পাহাড়ি এলাকায় শতাধিক বন্য হাতি কয়েকটি উপদলে বিভক্ত হয়ে ঘোরাঘুরি করছিল। এসব বন্য হাতি খাদ্যের সন্ধানে কখনো ধানখেতে, কখনো বা লোকালয়ে হানা দেয়। ফসল ও বসতবাড়ি রক্ষা করতে গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আবার কেউ কেউ ধানখেতে জেনারেটর বা বৈদ্যুতিক তার দিয়ে ফাঁদ পেতে ক্ষুধার্ত হাতিগুলোকে থামাতে চেষ্টা করে। এ সময় বাইরে থেকে লোকজন বন্য হাতি দেখতে আসে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে হাতি তাড়াতে যোগ দেন তারা এবং কখনো কখনো পাথর ছুড়ে মারে। কিংবা দেশীয় কোনো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে।

আরো পড়ুন:

সুন্দরবনে আগুনের তীব্রতা কমলেও নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জ

সুন্দরবনের নতুন এলাকায় ধোঁয়ার কুণ্ডলী

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার দাওধারা কাটাবাড়ী পাহাড়ে নির্মাণাধীন নতুন পর্যটন এলাকার পাশে এমনই এক আঘাতপ্রাপ্ত বন্য হাতিকে দেখতে পান স্থানীয়রা। এ বিষয়ে তারা বন বিভাগের লোকজনকে খবর দেয়। পরে বন বিভাগের কর্মকর্তারা ও মেডিকেল টিমের সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত ১০–১২ বছরের ওই মাদি বন্য হাতিকে চিকিৎসা দেয়। প্রায় ৩–৪ মাস আগে বল্লমজাতীয় দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ওই হাতিকে আঘাত করা হয়েছিল। ৩–৪ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের ওই আঘাতের গভীরতা প্রায় ৬ ইঞ্চির মতো। 

এ সময় নালিতাবাড়ী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন সাকিব হোসেন সাগর, গাজীপুর সাফারি পার্কের ল্যাব টেকনিশিয়ান আতিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, সহকারী টেকনিশিয়ান মোস্তফা কামাল, বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো.

শাহিন কবির, বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুমন সরকার, ওয়াইল্ড লাইফ রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল আমীন, মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী, সমশ্চুড়া বনবিট কর্মকর্তা কাউছার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মেডিকেল টিমের প্রধান গাজীপুর সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আঘাতের কারণে হাতিটি অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তার দেহের মেজর কিছু টিস্যু ড্যামেজ হয়ে গিয়েছে। আঘাতপ্রাপ্ত স্থান ড্রেসিং করে তার দেহে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তাকে বনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি আশা করেন, দ্রুতই হাতিটি সুস্থ হয়ে উঠবে। 

ঢাকা/তারিকুল/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বনভ ম কর মকর ত বন য হ ত বন ব ভ গ

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’

পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে। 

যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে। 

রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”

তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।

শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’

ঢাকা/শহিদুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
  • সুন্দরবনের বড় গেছো প্যাঁচা
  • সুন্দরবনের নদীতে মাছের আশায় বড়শি ফেলেন অনেকে