হজ পারমিট (হজের অনুম‌তি) ছাড়া হজ পালন না করতে বাংলাদেশিদের প্রতি অনুরোধ জা‌নি‌য়ে‌ছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এ নির্দেশনা অমান‌্যকারী ও তা‌কে সহায়তাকারী‌কে ক‌ঠোর শা‌স্তির মু‌খোমু‌খি হ‌তে হ‌বে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।

জিলকদ মাসের ১ তারিখ (২৯ এপ্রিল) থেকে জিলহজ মাসের ১৪ তারিখ (১০ জুন) পর্যন্ত এ বিধান কার্যকর থাকবে। এ সময়ের মধ্যে হজের অনুমতি ছাড়া পবিত্র মক্কা নগরী বা আশপাশের পবিত্র স্থানগুলোতে কেউ প্রবেশ কিংবা অবস্থান করতে পারবেন না।

সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনা, হজযাত্রীদের কল্যাণ এবং বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখ‌তে শুক্রবার (২ মে) ধর্ম মন্ত্রণাল‌য়ের জরু‌রি বিজ্ঞ‌প্তি‌তে এ অনু‌রোধ জানা‌নো হয়েছে।

আসন্ন হজ মৌসুমে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়ে সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বি‌ধিমালা জা‌রি ক‌রে‌ছে। এতে বলা হ‌য়ে‌ছে, সৌ‌দি সরকা‌রের হজ পারমিট থাকলেই কেবল মক্কায় প্রবেশ করা যাবে। হজ পারমিট ছাড়া কেউ হজ পালনের চেষ্টা করলেই তাকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার সৌদি রিয়াল জরিমানা গুনতে হবে। এ কাজে সহায়তা করলে ১ লাখ রিয়াল পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। ১০ বছ‌রের জন‌্য ব‌হিষ্কারও কর‌তে পা‌রে সৌ‌দি সরকার।

সৌ‌দি স‌রকারের নতুন এই বিধিমালার কার‌ণে বাংলাদে‌শের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থে‌কে চলতি হজ মৌসুমে ভিজিট ভিসায় মক্কা কিংবা সে দেশের পবিত্র স্থানগুলোতে অবস্থান না করতে বাংলা‌দে‌শিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

হজ বিধিমালা অমান্যকারী ভিজিট ভিসাধারীকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া, পরিবহন করা, সংরক্ষিত হজ এলাকায় প্রবেশে সহায়তা করা ও তাদেরকে হোটেল কিংবা বাড়িতে আবাসনের ব্যবস্থা করা থেকে বিরত থাকতেও বাংলাদেশিদেরকে অনুরোধ করা হয়েছে।

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় আইন-কানুনের কঠোর প্রয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরে ধর্ম উপদেষ্টা ড.

আ ফ ম খালিদ হোসেন বলে‌ছেন, হজের সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার স্বার্থে সৌদি সরকার ঘোষিত আইন-কানুন ও বিধিনিষেধ অনুসরণ করা আবশ্যক। সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় জড়িত আছে। প্রায় ৩৫ লাখ বাংলাদেশি সৌদি আরবে কর্মরত। সে দেশ থেকেই আসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। দুই দেশের সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, এরকম কাজ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থে সুষ্ঠু ও  সাবলীল হজ ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা রাখতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামানিক বলেছেন, হজ দ্বিরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা এবং টিম ওয়ার্ক। সৌদি আরব এবং মুসলিম দেশগুলোর তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনায় হজ পরিচালিত হয়। তবে, হজ-সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণী বিষয়ে সৌদি আরব মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। সুপরিকল্পিত কর্মসূচি, আইন-কানুনের যথাযথ প্রয়োগ ও অংশীজনের সহযোগিতা ছাড়া সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়। 

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে হজযাত্রীদের সচেতনতা বৃদ্ধিসহ সৌদি সরকারের প্রচলিত আইন কানুন ও বিধি বিধান অনুসরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে ধর্ম সচিব বলেছেন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে সৌদি সরকারের সকল পদক্ষেপকে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় স্বাগত জানায়। হজের পবিত্রতা রক্ষা এবং সকল হজযাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টিম স্পিরিট নিয়ে কাজ করতে হবে। 

এক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাগরিকরা অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেছেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বছর হজযাত্রীদের মক্কায় প্রবেশ সুগম করা, অতিরিক্ত ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে নতুন বিধিমালা জারি করেছে সৌদি সরকার।

এ বিধিমালা অনুসারে সে দেশের পবিত্র স্থানগুলোতে কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বৈধ অনুমতিপত্র, মক্কায় নিবন্ধিত বসবাসের প্রমাণপত্র (ইকামা) ও সরকারিভাবে ইস্যু করা হজ পারমিট থাকলেই কেবল মক্কায় প্রবেশ করা যাবে।

সৌদি সরকার জানিয়েছে, যদি কোনো বিদেশি নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত সময় অবস্থান করে কিংবা বৈধ অনুমতি ছাড়াই হজ পালনের চেষ্টা করে, তাহলে তাকে সৌদি আরব থেকে বহিষ্কার করা হবে। যারা ভিজিট ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে প্রবেশ করেছেন, তাদের ওপর নজরদারি থাকবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক য় প রব শ আইন ক ন ন প রব শ ক হজয ত র অবস থ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মাদ্রাসা ছাত্র হত্যার ঘটনায় দুই থানায় পৃথক মামলা, বাদী চিনেনা আসামিদের

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জে মাদরাসা ছাত্র মো. ইব্রাহিম (১৩) হত্যার ঘটনায় দুই থানায় পৃথক পৃথক মামলা হয়েছে। নিহতের বাবা-মাকে মৃত দেখিয়ে কথিত মামা বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এর কিছুদিন পর একই ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী মো. হানিফ বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় মামলা দায়ের করেন। এ নিয়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। 

মামলা সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে নিহত ইব্রাহিমের বাবা হানিফ মিয়া ও মা সখিনা বিবি কে মৃত দেখিয়ে তার মামা পরিচয়ে মো. সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি গত ২২ আগস্ট ফতুল্লা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, মানবজমিন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ও  বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির জেলা প্রতিনিধি বিল্লাল হোসেন রবিন, আইনজীবী কামাল হোসেন সহ ৬১ জন নামীয় আসামি করা হয়। এছাড়া আরও অজ্ঞাত ১৫০-১৬০ জনকে আসামি করা হয়। 

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকাল আনুমানিক ৩ টার দিকে কোটা বিরোধী দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোডের পাসপোর্ট অফিসের বিপরীত পাশে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে সমবেত হলে আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র সহ বিভিন্ন দেশিয় অস্ত্র নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাথারি গুলি করে ও ককটেল বিস্ফোরণ করে।

এ সময় আমি ও আমার ভাগিনা মোহাম্মদ ইব্রাহিম (১৩) ভয়ে একটি দোকানের আড়ালে আশ্রয় নেই। হঠাৎ আমার ভাগিনা ইব্রাহিমের মাতায় ও বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরের দিন ২০ জুলাই মাগরিবের নামাজের পূর্বে মাতুআইল কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী ও নিহত ইব্রাহিমের কথিত মামা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নিহত ইব্রাহিম আমার বাড়ির পাশে কাজ করতো ও মাদ্রসায় পড়াশোনা করতো। তার বাবা-মায়ের সাথে তার সম্পর্ক নেই। আমি একটি সাইডের কন্ট্রাকটারি করি।

সম্প্রতি সে আমার সাথেও ওস্তাকারের সহকারী হিসেবে কাজ করেছে। সেই কাজের সুবাদে সে আমাকে মামা বলে ডাকতো। সে আমার আপন ভাগিনা না। তার হত্যার ঘটনার পর রাজনীতিক মামলা হয়েছে। যারা আন্দোলন করেছে তারা মামলার সবকিছু করেছে, আমি শুধু স্বাক্ষর দিয়েছি। আসামিদের কাউকে আমি চিনি না। 

মামলার এজাহারে ইব্রাহিমের বাবা-মাকে মৃত উল্লেখ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইব্রাহিমের বাবা-মায়ের সংসার অনেক আগে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কিন্তু মামলায় কেন মৃত লেখেছে তা জানা নেই। তাছাড়া এই মামলায় স্বাক্ষর করা ছাড়া আমি আর কিছু জানিনা। মামলার কাগজে কি লিখছে তা আমি জানিনা। 

এই ঘটনার নিহত ইব্রাহিমের বাবা সোনারগাঁ থানায় আরেকটি মামলা করেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা কী আমারটা আগে হয়েছে নাকি পরে হয়েছে। আপনে ফোন রাখেন ভাই। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় সোনারগাঁ থানায়ও মামলা হয়েছে। এক ঘটনায় দুই থানায় মামলা হতে পারেনা। এ কারণে উর্ধ্বতনদের নির্দেশে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।

এদিকে একই ঘটনায় নিহত মো. ইব্রাহিম (১৩) এর বাবা মো. হানিফ (৬৫) বাদী হয়ে গত ২৪ আগস্ট সোনারগাঁ থানায় আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ইব্রাহিমের নিহত হওয়ার স্থান ভিন্ন দেখানো হয়েছে।

এই মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে পন্ড করার জন্য সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ব্রীজের পূর্ব ঢাল হতে ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে অস্ত্র নিয়ে হামলা করে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী হামলা চালিয়ে এলোপাথারি গুলি ছুড়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।

বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৩ টার দিকে ইব্রাহিমের বাম চোখের ভেতরে দিয়ে মাথায় পেছনের অংশ দিয়ে গুলি বের হয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে নেওয়া হলে তার মৃত্যু হয়। 

মামলার আসামি করা হয়েছে- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ সহ ২৩৫ জন নামীয় আসামি এবং অজ্ঞাত আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়। 

এ বিষয়ে জানতে সোনারগাঁ থানার মামলার বাদী ও নিহত ইব্রাহিমের বাবা মো. হানিফ কে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। 

সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মফিজুর রহমান বলেন, এই মামলা আমাদের এখানে ফাইনাল হবে। এই ঘটনার প্রকৃত ঘটনাস্থল যেখানে সেই থানায় মামলা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ