ভারত যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে তার কঠোর জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলা ঘিরে দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনায় শুক্রবার এমন হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এটি ছিল ২০০০ সালের পর থেকে সবচেয়ে বেশি প্রাণঘাতী হামলা। এ হামলার পেছনে পাকিস্তানের যোগসাজশ আছে বলে দাবি করেছে নয়াদিল্লি। তবে ওই দাবি নাকচ করেছে ইসলামাবাদ। একই সঙ্গে তারা নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

তখন থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। পাকিস্তান তাদের সেনা তৎপরতা বাড়িয়েছে। আর নিজেদের সশস্ত্র বাহিনীকে ‘অভিযান চালানোর পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরই মধ্যে গত বুধবার পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ভারত হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করছে তারা।

শুক্রবার পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এদিন রাওয়ালপিন্ডি শহরে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন কোরের কমান্ডারদের সম্মেলনে (কর্পস কমান্ডারস কনফারেন্স–সিসিসি) বিশেষ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সেনাপ্রধান জেনারেল অসিম মুনির। এ সময় সামরিক বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বিদ্যমান ভূ–কৌশলগত পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তৃত পর্যালোচনা করেন। সেখানে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে চলমান অচলাবস্থা এবং বৃহৎ আঞ্চলিক নিরাপত্তার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্মেলনে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির প্রতি পাকিস্তানের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন সামরিক বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে তাঁরা স্পষ্ট করে বলেন যে যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার যেকোনো চেষ্টার জবাব দেওয়া হবে এবং এই জবাব হবে কঠোর। পাশাপাশি পাকিস্তানের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি যেকোনো মূল্যে সম্মান জানানো হবে।

পাকিস্তানের আইএসপিআর জানায়, সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন, শান্তি ও উন্নয়নের পথে পাকিস্তানের যাত্রাকে কোনো সন্ত্রাসবাদ, জোরজবদস্তি বা আগ্রাসনের মাধ্যমে থামানো যাবে না। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে ভারত সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তা দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে মোকাবিলা করা হবে এবং পরাজিত করা হবে।

এদিকে চলমান সংকটের মধ্যে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, সেনাপ্রধান অসিম মুনিরের নেতৃত্বে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী এবং জনগণের মধ্যে উচ্চ মনোবল রয়েছে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের ‘নয়া পাকিস্তান’ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। শুক্রবারের সিসিসিতে সেনাপ্রধানের ‘দৃঢ় সংকল্পের’ জন্য তাঁর প্রশংসা করেন প্রতিরক্ষমন্ত্রী।

আরও পড়ুনপাকিস্তানিদের জন্য ওয়াঘা সীমান্ত খোলা: ইসলামাবাদ৫ ঘণ্টা আগে

খাজা আসিফ বলেন, বিগত পাঁচ দিনে যেভাবে তিনি (সেনাপ্রধান) বিভিন্ন সেনানিবাসে ও নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনাসদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, তা সশস্ত্র বাহিনী এবং জনগণের মনোবল বৃদ্ধি করতে সহায়তা করেছে। তিনি বলেন, কাশ্মীর হামলার জন্য পাকিস্তানকে জড়িয়ে ভারত যে অভিযোগ এনেছে, তার কোনো ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ নেই। ভারতীয়রাও নরেন্দ্র মোদির বয়ানের বিরুদ্ধে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন‘যে সরকারের ভরসায় ঘুরতে গিয়েছিলাম, তারা আমাদের অনাথের মতো ফেলে গেছে’৬ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনপাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বাসিন্দাদের খাদ্য মজুতের নির্দেশ১০ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত র

এছাড়াও পড়ুন:

জামায়া‌তের তিন‌ দি‌নের কর্মসূচি ঘোষণা

পিআর পদ্ধ‌তি‌তে জাতীয় নির্বাচন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন, জাপা ও চৌদ্দ দ‌লের রাজনী‌তি নি‌ষিদ্ধ করাসহ ৫ দফা দা‌বি‌তে তিন‌ দি‌নের কর্মসূ‌চি ঘোষণা ক‌রে‌ছে বাংলা‌দেশ জামায়া‌তে ইসলামী।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মগবাজার আল-ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ স‌ম্মেল‌নে এই কর্মসূচি ঘোষণা ক‌রেন দল‌টির নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।

আরো পড়ুন:

মুক্তিযুদ্ধ না মানলে বাংলাদেশকে অস্বীকার করা হবে: জামায়াত নেতা আযাদ

জনগণ রায় দিলে দেশকে ৫ বছরেই দারিদ্র্যমুক্ত করা সম্ভব: শফিকুর রহমান

তি‌নি ৫ দফা দা‌বি তু‌লে ধ‌রে ব‌লেন, “জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করতে হ‌বে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করতে হ‌বে, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হ‌বে, ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করতে হ‌বে এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হ‌বে।”

এসব দা‌বি বাস্তবায়নে তিন‌ দি‌নে কর্মসূ‌চি ঘোষণা ক‌রেন দল‌টির না‌য়ে‌বে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

কর্মসূ‌চি হ‌লো:
১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল, ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল এবং ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের সব জেলা উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল অনু‌ষ্ঠিত হ‌বে।

এ সময় উপ‌স্থিত ছি‌লেন দ‌লের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, অ্যাডভোকেট মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুর রব ও মোবারক হোমাইন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আবদুর রহমান মুসা, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ইয়াসিন আরাফাত এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি আতাউর রহমান সরকার প্রমুখ।

লি‌খিত বক্ত‌ব্যে বলা হয়,  সরকার জুলাই জাতীয় ঘোষণা ও জুলাই জাতীয় সনদ প্রস্তুত করেছেন। একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জুলাই জাতীয় ঘোষণা ও জুলাই জাতীয় সনদের প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ তাদের পরামর্শ সরকারের নিকট উপস্থাপন করে। জামায়াতে ইসলামী বরাবরই জুলাই জাতীয় সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ হিসেবে অতীতের বিভিন্ন নজির ও উদাহরণ তুলে ধরে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তির বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান বারবার ব্যক্ত করে আসছে। আমরা মনে করি, জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদান ব্যতীত ছাত্রজনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অভ্যুত্থান ও তার অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।

সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ক‌রে‌ছে জা‌নি‌য়ে সংবাদ স‌ম্মেল‌নে বলা হয়,  সরকা‌রের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে আসছে। অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ, ভোটকেন্দ্র দখল, পেশিশক্তি প্রদর্শন ও ভোটের বিভিন্ন অনিয়ম ও অপতৎপরতা বন্ধ, কোয়ালিটি-সম্পন্ন পার্লামেন্ট এবং দক্ষ আইনপ্রণেতা তৈরিসহ প্রতিটি ভোট মূল্যায়নের লক্ষ্যে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য জোর দা‌বি জানা‌নো হ‌য়ে‌ছে। এমন‌কি দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবির সাথে একমত পোষণ করেছেন। কিন্তু তারপরও জনগণের দাবিসমূহ কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এমতাবস্থায় জনগণের দাবি আদায়ের জন্য গণআন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। তাই জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে  ৫-দফা গণদাবি মে‌নে নি‌তে সরকা‌রের প্রতি আহ্বান জানা‌নো হয়ে‌ছে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল
  • বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্য না হলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই: এবি পার্টি
  • রোহিঙ্গা সমস্যায় রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে
  • মাঠের জবাব মাঠে দেওয়া হবে: সালাহউদ্দিন 
  • নুরুল হকের ওপর হামলার ঘটনায় জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
  • জামায়াত কীভাবে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ
  • পাকিস্তানে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে ৫ সেনা নিহত
  • জুলাই সনদ নিয়ে যেসব বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে
  • ফরিদপুরে সীমানা নিয়ে ডিসির চিঠি, এলাকাবাসীর ৫ দাবি
  • জামায়া‌তের তিন‌ দি‌নের কর্মসূচি ঘোষণা