আর্জেন্টিনা ও চিলিতে ৭ দশমিক ৪ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতের পর এবার চিলিতে ধেয়ে আসছে সুনামি। দেশটির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। খবর রয়টার্সের।

ভূমিকম্পের পর পর চিলির বিপর্যয় প্রতিরোধ সংস্থা দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের মেগালেনেস অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার সব মানুষকে সরে যেতে নির্দেশনা দিয়েছে। সংস্থাটি সতর্কতা দিয়ে বলেছে, সেখানে সুনামির ঢেউ আঘাত হানতে পারে।

সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, মেগানেলেসে সুনামির সতর্কতামূলক সাইরেন বাজছে। সরে যাচ্ছেন বাসিন্দারা।

চিলির হাইড্রোগ্রাফিক অ্যান্ড ওশেনগ্রাফিক সার্ভিস (এসএইচওএ) বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টার দিকে জানিয়েছে, আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চিলির সর্বদক্ষিণের বিভিন্ন শহর এবং অ্যান্টার্টিকার বেসে সুনামির ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে।

দেশটির অ্যান্টার্টিক ইনস্টিটিউট বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, সুনামি সতর্কতার কারণে তাদের বেসগুলো খালি করে সবাইকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

সুনামির সতর্কতা সংশ্লিষ্ট সংস্থা এনওএএ জানিয়েছে, অ্যান্টার্টিকায় শূন্য দশমিক ৩ মিটার উচ্চতার, আর চিলির মূল ভূখণ্ডে এক থেকে তিন মিটার উচ্চতার ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে।

চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিক উপকূল থেকে সাধারণ মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, মেগালেনেস অঞ্চলের পুরো উপকূল থেকে আমরা সবাইকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এ মুহূর্তে আমাদের কাজ হলো প্রস্তুতি নেওয়া এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা শোনা। সম্ভাব্য সুনামির জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি আছে আমাদের।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ভ ম কম প

এছাড়াও পড়ুন:

প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণা

দেশের নারী ফুটবল দলের একের পর এক সাফল্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের স্বপ্ন জুগিয়ে যাচ্ছে। যেমনটি দেখা যাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলায়। সেখানকার ছোট্ট গ্রাম রাঙাটুঙ্গীর মেয়েদের অনুপ্রেরণার নাম এখন ফুটবল। গ্রামটিকে পরিচিত করে তুলছে একদল অদম্য নারী ফুটবলার। আর তাদের এগিয়ে নিতে আছেন কোচ তাজুল ইসলাম। রোদ, বৃষ্টি, সামাজিক কটূক্তি—সবকিছু উপেক্ষা করে গ্রামের মাঠে প্রতিদিন বিকেলের নিয়মিত অনুশীলনে যে চিত্র ফুটে ওঠে, তা খুবই আশাব্যঞ্জক। 

২০১৪ সালে স্থানীয় টুর্নামেন্টে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর কিছু মেয়ের ফুটবলপ্রেম দেখে তাজুল ইসলাম গড়ে তোলেন ‘রাঙাটুঙ্গী ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমি’। সে সময় তাঁর এই উদ্যোগের জন্য তিরস্কার ও সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন তিনি; কিন্তু তাজুল ইসলাম, কোচ সুগা মুর্মু ও সাবেক স্থানীয় ফুটবলার জয়নুলের অবিরাম প্রচেষ্টায় সেই তিরস্কার ও সমালোচনা আজ গর্বে পরিণত হয়েছে।

মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে এই একাডেমি থেকে উঠে আসেন মুন্নি আক্তার, সোহাগী, স্বপ্না রানী, সাগরিকা, কোহাতির মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড়। বর্তমানে এই একাডেমি থেকে ২৩ জনের বেশি তরুণী জাতীয় দলসহ বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দল ও লিগে খেলছেন। তাঁদের এই সাফল্য দেখে এখন গ্রামের মানুষ, এমনকি একসময়কার সমালোচকেরাও তাঁদের নিয়ে গর্ব করেন। রাঙাটুঙ্গীর মানুষের কাছে ফুটবল এখন শুধু একটি খেলা নয়, এটি একটি আন্দোলন, যা গ্রামের মেয়েদের জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে।

জাতীয় দলের খেলোয়াড় কোহাতি কিসকু জানান, এ অবস্থানে আসা সহজ ছিল না। মাঠে আসার পথে তাঁদের অনেক কটূক্তি শুনতে হয়েছে; কিন্তু কোচ ও প্রশিক্ষকদের উৎসাহ এবং নিজেদের দৃঢ় মনোবল তাঁদের এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাঁদের এই সাফল্য প্রমাণ করে, মেধা ও ইচ্ছাশক্তি সব ধরনের সামাজিক বাধা ভেঙে দিতে পারে।

তবে এই সাফল্যের পেছনেও রয়েছে কিছু সীমাবদ্ধতা। তাঁদের অনুশীলনের মাঠটি এবড়োখেবড়ো, অনুশীলনের জন্য আধুনিক সরঞ্জাম বা পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। অনেক খেলোয়াড়ের পরিবারের তিন বেলা খাবার জোগাড় করাই কঠিন। তাজুল ইসলাম নিজের অর্থায়নে একাডেমি চালালেও একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ছাড়া এ আন্দোলনকে টিকিয়ে রাখা কঠিন।

রাঙাটুঙ্গীর ফুটবল আন্দোলন প্রমাণ করে, একটি স্বপ্ন আর কিছু মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা কত বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অপরিহার্য। মাঠের সংস্কার, খেলার সরঞ্জাম এবং খেলোয়াড়দের জন্য পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা জরুরি। আমাদের সবার প্রত্যাশা, রাঙাটুঙ্গীর মেয়েরা একদিন বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেশের সম্মান বাড়াবে। ক্লাবটির পৃষ্ঠপোষকতায় স্থানীয় প্রশাসন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসবে, সেটিই কাম্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ